বুড়িগঙ্গা বাঁচাতে কর্তৃপক্ষ কী করছে?

হাইকোর্ট যে কোনো মূল্যে নদী বাঁচানোর আদেশ দিয়েছেন এবং নদীকে 'জীবন্ত' সত্তা হিসেবে অভিহিত করেছেন। তা সত্ত্বেও, দেশে বিরামহীনভাবে নদী দখল চলছে। বুড়িগঙ্গা নদীর তীর দখলের একটি ঘটনাও আমরা জানতে পেরেছি।

গতকাল শনিবার এই সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর এলাকায় স্থানীয় সিন্ডিকেট আবারও ট্রাক স্ট্যান্ড, নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবসা, মোটর ওয়ার্কশপ ইত্যাদি স্থাপনের মাধ্যমে বুড়িগঙ্গার তীর দখল করেছে।

সম্প্রতি স্থানটি পরিদর্শনের সময় আমাদের প্রতিবেদক কয়েক ডজন ট্রাক, পিকআপ ও ছোট যানবাহন নদীর তীরে পার্ক করা অবস্থায় দেখেছেন। সেখানে কাঠ, বালু, ইট ও পাথরের ব্যবসাও চলছে। এমনকি গৃহস্থালি বর্জ্যও ফেলা হচ্ছে।

নদীর তীর প্রতিনিয়ত ভরাট এবং অবৈধ কাজে ব্যবহার করা হলেও, নদী দেখাশোনা করার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ কী করছে- আমরা তা বুঝতে পারছি না।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সম্প্রতি কিছু অভিযান পরিচালনা করেছে। কিন্তু সব দখলদারকে উচ্ছেদ করতে পারেনি। এ ছাড়া, বুড়িগঙ্গার তীরে হাঁটার পথ তৈরি ও গাছ লাগানোর যে পরিকল্পনা বিআইডব্লিউটিএ করেছে, তা আপতদৃষ্টিতে ক্ষতিকর কিছু মনে না হলেও এটি আসলে হাইকোর্টের আদেশের লঙ্ঘন। কারণ আদালত এই ধরনের উদ্যোগকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।

তা ছাড়া, বাংলাদেশ পরিবেশন আন্দোলনের (বাপা) মতে, বুড়িগঙ্গার তীরে যেভাবে সীমানা পিলার স্থাপন করা হয়েছে, তা ত্রুটিপূর্ণ।

ঢাকার প্রাণ বুড়িগঙ্গাকে বাঁচাতে কর্তৃপক্ষকে এখন নদী তীরের সীমানা পুনর্নির্ধারণ এবং জরুরি ভিত্তিতে তীরের ভরাট অংশ খনন করতে হবে। যথাযথ সীমানা নির্ধারণের পর বিআইডব্লিউটিএ হাঁটার রাস্তা তৈরি করতে পারে। নদীর প্রাকৃতিক প্রবাহ নিশ্চিত করার জন্য কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। এ ছাড়া, সেখানে স্থাপিত সব অবৈধ ব্যবসা দেরি না করে উচ্ছেদ করতে হবে। আমাদের আইন অনুযায়ী নদী দখলকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

বলা বাহুল্য, দেশের নদীগুলোর অভিভাবক ন্যাশনাল রিভার কনজারভেশন কমিশনের (এনআরসিসি) এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার আছে। সরকারকে অবশ্যই কমিশনকে শক্তিশালী করতে হবে এবং তাদের পর্যাপ্ত ক্ষমতা দিতে হবে, যেন এটি সত্যিকার অর্থে নদী সুরক্ষায় কাজ করতে পারে।

অনুবাদ করেছেন জারীন তাসনিম

Comments