বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া নিয়ে টালবাহানা কেন

সংশ্লিষ্ট শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের কর্মকর্তাদের মধ্যে  ১৪ সেপ্টেম্বর এক বৈঠকের পর সশরীরে উপস্থিত হয়ে ক্লাস শুরুর জন্য সব সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের করোনাভাইরাসের টিকা নেওয়ার জন্য নিবন্ধন করতে দুই সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছিল । সে সময় আমরা যথেষ্ট পরিমাণ সময় না দেওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলাম। কারণ ততদিনে দেশের মাত্র ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী ভ্যাকসিনের জন্য নিবন্ধন করেছেন। ঠিক দুই সপ্তাহ পর, আমাদের উদ্বেগের বিষয়টি বাস্তবতায় রূপান্তরিত হয়েছে। দ্য ডেইলি স্টারের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, অর্ধেকেরও বেশি শিক্ষার্থী নির্ধারিত সময় সীমার মধ্যে নিবন্ধন করতে ব্যর্থ হয়েছে। যার অর্থ হচ্ছে এই দুই সপ্তাহে ১০ শতাংশেরও কম শিক্ষার্থী টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, সাম্প্রতিককালে করোনাভাইরাস সংক্রমণের নিম্ন হারের প্রেক্ষাপটে সশরীরে উপস্থিত হয়ে ক্লাস শুরু করা নিয়ে তেমন কোনো জটিলতা নেই। এ পর্যন্ত আমাদের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, নিরবচ্ছিন্নভাবে এবং ব্যাখাতীতভাবে কর্তৃপক্ষ বড় বড় উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনার ঘোষণা দেয় এবং সেগুলোকে সঠিকভাবে বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়ে বাতিল করে দেয়। একই ধারায়, আগস্টের শুরুর দিকে কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দিয়েছিলেন সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ সব শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়া হবে। তারা এ সিদ্ধান্ত থেকেও সরে আসে।

এখনো ২৪ লাখ ৩০ হাজার শিক্ষার্থী টিকার জন্য নিবন্ধন করেননি। তাদের বেশিরভাগই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থী। তাদের ভাগ্যে কী আছে? কর্তৃপক্ষ কি সকল শিক্ষার্থীদের টিকা নিবন্ধন সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত সশরীরে উপস্থিত হয়ে ক্লাস শুরু না করার আগের নীতিতে অটল থাকবে? সেক্ষেত্রে আমরা কি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে টিকা বৈষম্যের শিকার হতে দেব, যেখানে শুধুমাত্র টিকা নিয়েছে এ রকম শিক্ষার্থীদের হলে থাকতে ও ক্লাস করতে দেওয়া হবে? অথবা, যদি ক্লাস শুরু হয়েই যায়, তাহলে কি ভ্যাকসিন না নেওয়া শিক্ষার্থীসহ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যথেষ্ট পরিমাণ সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে এবং সকল ধরনের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নীতিমালা বজায় রেখে ক্লাস পরিচালনা করতে পারবে? তখন নিবন্ধনের নতুন সময় সীমা কবে হবে? সেই সময়সীমার ভাগ্যেও কি একই পরিণতি লেখা আছে?

করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার কমতে থাকলেও আমরা একটি বিষয়কে এড়িয়ে যেতে পারি না, যেটি হচ্ছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার মাত্র ১০ শতাংশ দুই ডোজ টিকা পেয়েছেন। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় অনেক বেশি সংক্রামক এবং এটি টিকা নেওয়া মানুষের মাধ্যমেও ছড়াতে পারে। এ কারণে আমাদের অসতর্ক হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সরকারের এটি নিশ্চিত করতে হবে, টিকাদানের ক্ষেত্রে যাদেরকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে, তারা যাতে দ্রুত ও সুষ্ঠুভাবে টিকা নিতে পারেন। এছাড়াও আগস্ট এবং মাসের শুরুর দিকে অনুষ্ঠিত বিশেষ টিকাদান কর্মসূচির মত যেনো গোলযোগপূর্ণ পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি না হয়, সেদিকেও নজর রাখতে হবে।

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English

Enquiry panel to find reasons for stock market downtrend

The four-member committee will submit a report in 10 workdays

26m ago