বিচারক যখন আইন ভঙ্গ করেন
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ৭-এর বিচারক মোসাম্মৎ কামরুন্নাহারের ফৌজদারি মামলার বিচার ক্ষমতা স্থগিত করার তাৎক্ষণিক উদ্যোগ নেওয়ার জন্য আমরা প্রধান বিচারপতিকে অভিনন্দন জানাই। আইনমন্ত্রীকেও আমাদের অভিনন্দন। তিনি বিষয়টি দ্রুত উত্থাপন এবং বিচারক কামরুন্নাহারের পর্যবেক্ষণের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে এবং সোচ্চারভাবে প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য প্রশংসার দাবিদার। প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আইনমন্ত্রীর এ ধরনের উদ্যোগ দেশের উচ্চ বিচার বিভাগের প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা অনেকাংশে বাড়িয়ে তুলেছে এবং শক্ত করেছে।
বিচারক কামরুন্নাহারের পর্যবেক্ষণ ও নারীদের বিষয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের মনে বেশ কিছু উদ্বেগজনক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। তিনি যেভাবে নিজের মনের কথা প্রকাশ করেছেন, তা নাও করতে পারতেন। হয়তো মামলা দুর্বল হওয়ার কারণে অভিযুক্তকে 'দোষী নয়' বলে ঘোষণা করতেন। কিন্তু মনে মনে হয়তো ঠিকই ভাবতেন ওই নারীরা 'আগ্রহী' ছিল।
তাই আমাদের বিচার ব্যবস্থার জন্য যে বিষয়টি চ্যালেঞ্জ তা হলো, একজন বিচারককে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে নিয়োগ দেওয়ার আগে তার মানসিকতা কীভাবে জানা যাবে? যদি তিনি বিশ্বাস করেন, একজন নারী বন্ধুর আমন্ত্রণে সন্ধ্যায় হোটেলে গিয়ে সাঁতার কাটলে এবং পুরুষসহ অন্যান্য অতিথিদের সঙ্গে মেলামেশা করলে তাকে ধর্ষণ করা যেতে পারে, কারণ তাকে `আগ্রহী' মনে হচ্ছিল—তাহলে এটি এমন মানসিকতা নয়, যে মানসিকতা নিয়ে একজন নারীর প্রতি ন্যায়বিচার করা যেতে পারে। যে নারীরা ব্যবসার কাজে ভ্রমণ, হোটেলে থাকা, ব্যবসায়িক অংশীদারদের সঙ্গে দেখা করা, একসঙ্গে কারখানা ভ্রমণ ইত্যাদি করেন, তাদের সম্পর্কে তিনি এবং তার মতো অন্য বিচারকরা কী ভাবেন তা অনুমান করার সাহস পাচ্ছি না আমরা।
আমরা এখানে যে বিষয়টি তুলে ধরছি তা হলো, কেউ শুধুমাত্র বিচারক হওয়ার জন্য সম্পূর্ণ যোগ্য হওয়ার অর্থ এই নয় যে, তাকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে স্থান দেওয়া উচিত। কারণ নারীর বিরুদ্ধে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা, বিশেষ করে ধর্ষণের বিষয়ে রায় দেওয়ার জন্য সংবেদনশীলতা ও ভুক্তভোগীদের যন্ত্রণার বিষয়টি বোঝা প্রয়োজন, যা নিছক আইনের বইয়ের জ্ঞানে স্বয়ংক্রিয়ভাবে হয় না।
ওই বিশেষ আদালতে কাউকে বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার আগে, বিশেষ করে যৌন অপরাধ ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা সংক্রান্ত বিচার করার আগে, লিঙ্গ সমতা, লিঙ্গ সহিংসতা এবং লিঙ্গবিষয়ক সব সমসাময়িক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইন ইত্যাদি বিষয়ে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য আমরা বিনীতভাবে পরামর্শ দিচ্ছি।
সম্প্রতি আরেকটি উদ্যোগ নেওয়ার জন্য আমরা আইনমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাই। তিনি ঘোষণা করেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কোনো মামলায় আগাম তদন্ত না করে ভবিষ্যতে কাউকে গ্রেপ্তার করা হবে না। এ বিষয়ে তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানা গেছে। আমরা আশা করি, তিনি ইতোমধ্যেই তা করেছেন। একটি আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি সরকারি ও সর্বজনীন করার জন্য তাকে অনুরোধ করছি।
অনুবাদ করেছেন জারীন তাসনিম।
Comments