বাজারে সবজির দাম চড়া, ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত কৃষক
দ্য ডেইলি স্টারের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত বছরের তুলনায় ১০ দশমিক সাত শতাংশ বেশি ফলন পেয়েও এ বছর কীভাবে সবজি চাষিরা তাদের উৎপাদিত ফসল অবিশ্বাস্য কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। অথচ, আশ্চর্যজনকভাবে শহরের কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ীরা সেই সবজি বিক্রি করে প্রচুর পরিমাণে মুনাফা করছেন।
১০ হাজার থেকে শুরু করে লাখ টাকা পর্যন্ত লোকসানের শিকার হওয়ার আশঙ্কায় আছেন উত্তরাঞ্চলের কয়েক লাখ কৃষক। সবজি চাষিদের এই বিপুল পরিমাণ ক্ষয়-ক্ষতির পেছনে যে কারণটি রয়েছে তা এতদিনে আমাদের সবার কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে। সেটি হচ্ছে লকডাউনের ফলে সরবরাহ ব্যবস্থায় পড়া প্রভাব।
করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে লকডাউনের আগে ২৫ টাকা কেজি দরে শশা বিক্রি করছিলেন বগুড়ার হাশেম আলী। এখন তাকে প্রতি কেজি শশা বিক্রি করতে হচ্ছে সর্বোচ্চ সাত টাকা করে। একইভাবে, যশোরের জসিম উদ্দিন প্রতি কেজি পটল বিক্রি করছেন সর্বোচ্চ পাঁচ টাকায় এবং প্রতিটি লাউ বিক্রি করছেন ১০ থেকে ১২ টাকায়। লকডাউনের আগে তিনি পটল ২৫ টাকা ও লাউ ৩০ থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। এরপর লকডাউন শুরু হলে দাম আরও কমে যায়।
উত্তরাঞ্চলের সবজি চাষিদেরও একই অবস্থা। আগে যে দামে বিক্রি করতেন, এখন তার তুলনায় অন্তত ৫০ শতাংশ কমে দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। অনেক কৃষক আশঙ্কা করছেন, অতিরিক্ত লোকসানের ফলে চাষাবাদের ব্যয় মিটিয়ে শীতের মৌসুমে সবজি চাষ করতেই পারবেন না।
দেশব্যাপী চলাফেরার ওপর বিধিনিষেধ আরোপের কারণে সবজির দাম বেড়ে গেছে শহরের কাঁচাবাজারগুলোতে। যা ইতোমধ্যে কষ্টে থাকা মধ্য ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির ওপর বাড়তি বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও পাইকারি ব্যবসায়ীরা কৃষকের কাছ থেকে খুবই কম দামে সবজি কেনেন। তবে, সেগুলোকে পরিবহন করে রাজধানীতে আনার খরচ পড়ছে আগের তুলনায় তিন গুণ বেশি। এ কারণে সবজির দাম আকাশচুম্বী পর্যায়ে চলে গেছে।
দক্ষিণবঙ্গ সবজি চাষি সমবায় সমিতির সভাপতির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ঢাকায় আগে দৈনিক ৫০টি সবজি পরিবহনকারী ট্রাক আসতো, যা এখন কমে দাঁড়িয়েছে ১০টিতে।
সাম্প্রতিক কিছু সিদ্ধান্ত (যেমন, রপ্তানি-নির্ভর কারখানা খুলে দেওয়া), দুর্ভাগ্যজনকভাবে, সরকারের প্রাধান্য তালিকায় দরিদ্র শ্রেণির কর্মীদের অবস্থান কোথায় তা যথেষ্ট পরিষ্কার করেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে আনুমানিক ৮০ লাখ সবজি চাষি রয়েছেন। যারা একাধিক মৌসুমে চাষাবাদ করে দেশের প্রতিটি পরিবারের খাবার টেবিলে খাদ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করছেন। তারপরেও, এসব চাষিদের থেকে শুরু করে প্রবাসী কর্মী পর্যন্ত সবার ক্ষেত্রে আমরা যে প্রবণতা দেখতে পাচ্ছি তা হচ্ছে— যারা আমাদের অর্থনীতিতে এবং ভালো থাকার বিষয়গুলোতে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ অবদান রাখছেন, তাদেরকেই আমরা অবহেলা করছি।
সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটায় সবজি চাষিদের দুঃখ-দুর্দশার শিকার হওয়া উচিৎ নয়। আমরা বিশ্বাস করি, তাদের দৈনিক লোকসানের জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিৎ। এ ছাড়া ভবিষ্যতে লকডাউন দেওয়ার সময় তারা যাতে আরও বেশি ক্ষতির মুখে না পড়েন, সে ব্যাপারেও ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ। আমাদের অনুরোধ, সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেন লকডাউনে যাদের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি, তাদের সুরক্ষিত করার কাজটিকে যথোপযুক্ত প্রাধান্য দেন।
প্রতিবেদনটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান।
Comments