বন্যা ও নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করুন

flood_victim_3sep21.jpg
স্টার ফাইল ছবি

জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক আন্তঃসরকার প্যানেল (আইপিসিসি) গত মাসে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে তাদের যুগান্তকারী একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘের মহাসচিব প্রতিবেদনটিকে 'মানুষের জন্য লাল সংকেত' বলে অভিহিত করেছেন।

প্রতিবেদনটির যে অংশে দক্ষিণ এশিয়ার উল্লেখ আছে, সেখানে ঝড়, উপকূলীয় বন্যা, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং অভ্যন্তরীণ বন্যার কারণে মৃত্যু, দুর্বল স্বাস্থ্য ও জীবিকা ব্যাহত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ার ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, 'বন্যা ও বন্যা সংশ্লিষ্ট কারণে ভারত ও বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে জীবন ও সম্পদের ক্ষতির ঝুঁকি রয়েছে।'

প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হওয়ার এক মাসেরও কম সময়ে আমরা এর পূর্বাভাস অনুযায়ী জলবায়ু পরিবর্তনের বাস্তব প্রভাব দেখতে পাচ্ছি। গতকাল বৃহস্পতিবার দ্য ডেইলি স্টার'র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী তিন দিন যমুনা ও পদ্মা নদীর পানি বাড়া অব্যাহত থাকবে বলে পূর্বাভাস আছে। এর ফলে বাংলাদেশের প্রায় ৩০ শতাংশ ভূমি প্লাবিত হতে পারে।

বন্যাকবলিত জেলাগুলোর বাসিন্দারা ইতোমধ্যে তাদের বাড়ি-ঘর ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। তাদের অনেকেই আসবাবপত্র ও গবাদি পশু নিয়ে সরকারি রাস্তা এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছেন। সেখানে খাবার ও নিরাপদ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন জেলা থেকে পাওয়া প্রতিবেদনগুলোতে ত্রাণ কাজে দেরি হওয়া, পর্যাপ্ত ত্রাণ না দেওয়া বা কোনো ত্রাণই না দেওয়ার খবর উঠে আসছে। যেখাকে সরকারি সহায়তার দূরাবস্থার চিত্রও ফুটে উঠছে।

বন্যার পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের একটি বুলেটিনে বলা হয়েছে, বিভিন্ন নদীর ১০৯টির মধ্যে ১৬টি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। অন্য ৫০টি পয়েন্টে পানির সমতল বাড়ছে। এ পরিবর্তনগুলো যেহেতু পর্যবেক্ষণ ও হালনাগাদ করা হচ্ছে, সেহেতু ত্রাণ সরবরাহ ও বিতরণের ব্যবস্থা না করার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের হাতে সত্যিই কোনো অজুহাত নেই। ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কতার সময় যেমন দেখা যায়, দুর্যোগ কবলিতদের আশ্রয়ের জন্যে অন্তত স্বল্প মেয়াদের জন্য হলেও তেমন একটি ব্যবস্থা করা যেত।

এখানে আরও একটি গভীর সমস্যা রয়েছে, যা বলা আবশ্যক— বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশের ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে সত্যি। তবে, পরিবেশ ধ্বংস এবং নদী ভাঙন রোধে ব্যর্থ হওয়ার ক্ষেত্রে আমরা আমাদের দায় এড়াতে পারি না। দুটি বিষয়ই বর্তমান অবস্থার জন্য দায়ী।

বৃহস্পতিবার দ্য ডেইলি স্টার সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার জালালপুর গ্রামের কথা তুলে ধরে। সেখানে বর্ষায় ৫০০ বসতবাড়ি, একটি স্কুল ও তিনটি মসজিদ যমুনা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। অবশিষ্ট ১০০ থেকে ১২০টি ঘরও বিলীন হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। আগের দিন আমরা লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার চিলমারীপাড়া গ্রাম নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলাম। সেখানে দেখা গেছে, পুরো গ্রামকে গ্রাস করেছে তিস্তা।

এমন আরও অসংখ্য গল্প আছে। তথ্য-উপাত্ত বলছে, প্রতি বছর প্রায় ৫৫ হাজার মানুষ নদী ভাঙনের কারণে গৃহহীন হয়ে পড়েন। বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরে সংশ্লিষ্ট ঝুঁকি মোকাবিলায় একটি জাতীয় নদী ব্যবস্থাপনা কৌশলের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করছেন।

সরকার এ ব্যাপারে আর বসে থাকতে পারে না। তাদের অবশ্যই নদীর তীর সুরক্ষার জন্য দীর্ঘ মেয়াদি কৌশল এবং প্রকল্প প্রণয়ন করতে হবে। পাশাপাশি, এসব প্রকল্প যেখানে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, সেখানে যেন সবচেয়ে কার্যকর ও স্বচ্ছভাবে বাস্তবায়িত হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করতে তাদের বিশেষজ্ঞ ও এনজিওগুলোর সঙ্গে কাজ করতে হবে।

একইসঙ্গে, ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর শেষ মুহূর্তে তড়িঘড়ি করে ব্যবস্থা নেওয়া এবং এলোমেলোভাবে ত্রাণ কর্মসূচি চালানো বন্ধ করে কর্তৃপক্ষের উচিত নদী ভাঙন ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য একটি স্থায়ী তহবিল গঠন করা।

অনুবাদ করেছেন জারীন তাসনিম

Comments

The Daily Star  | English

No plan to lift ban on extremist groups

The interim government does not have any plan to lift the ban on extremist groups that were outlawed in recent decades.

5h ago