নতুন দরিদ্রদের সহায়তায় উদ্যোগ নিন
পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) করা একটি সমীক্ষার ফলাফল অনুসারে, মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের পর গত আগস্ট মাসে নতুন দরিদ্রের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩২ দশমিক ৪ মিলিয়নে। তার আগের গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে জারি করা লকডাউনের আগে নতুন দরিদ্রের সংখ্যা ছিল ১৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ। সবশেষ গবেষণায় দেখা গেছে, এই সংখ্যাটি এখন ১৯ দশমিক ৫৪ শতাংশে পৌঁছেছে।
আগের গবেষণাগুলোতে যে বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছিল, এই গবেষণাটি আবারও সে বিষয়টি নিশ্চিত করে যে, মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে দারিদ্রের হার আরও বেড়েছে। কোভিড-১৯ মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে পরিচালিত বেশ কয়েকটি গবেষণায় ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, মহামারির ফলে জারি করা লকডাউনের পাশাপাশি অন্যান্য কারণে দেশে দারিদ্র্য বেড়েছে। ইতোমধ্যে আমরা দেখেছি, উচ্চপর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তারা এই দারিদ্রের হার বৃদ্ধিকে অস্বীকার করছেন। যদিও এই হার কেন গ্রহণযোগ্য নয়, সে ব্যাপারে নিজেদের ব্যাখ্যা দিতে তারা ব্যর্থ হয়েছেন।
যা-ই হোক না কেন, এটা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার যে, দেশে দারিদ্র্য আরও বেড়েছে এবং এর ফলে মানুষকে সংগ্রাম করতে হচ্ছে। সর্বোপরি, আন্তর্জাতিক সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যাহত এবং বিভিন্ন স্থানীয় ব্যবসায়িক সিন্ডিকেটের কারণে সাম্প্রতিক সময়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। সবমিলিয়ে মানুষের জন্য বিশাল এক দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিশেষ করে মহামারির সময় যাদের দারিদ্রের মধ্যে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।
এই ধরনের পরিস্থিতিতে আমরা বুঝতে পারি না সরকার কেন জ্বালানির দাম বাড়াচ্ছে, যা অবশ্যই অন্যান্য সব পণ্য ও পরিষেবার ওপর প্রভাব ফেলবে। সরকারের এখন যা করা প্রয়োজন তা হলো, অর্থনৈতিকভাবে সংগ্রামরত মানুষদের জন্য সব ধরনের সহায়তা প্রদান করা, তাদের আর্থিক বোঝা বাড়ানোর ব্যবস্থা করা নয়।
এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সরকারের উচিত অবিলম্বে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে এমন কৌশল নির্ধারণ করা যা, নতুন দরিদ্রদের দ্রুত নিজের পায়ে দাঁড়াতে সাহায্য করতে পারে। দারিদ্র্য বেড়ে যাওয়ার একটি বড় কারণ হলো চাকরি হারানো। এ ক্ষেত্রে সরকারকে একদিকে তাদের বেকারত্বের জন্য ভাতা প্রদান করা উচিত। অন্যদিকে, তাদের আবারও কর্মসংস্থানে সহায়তা করতে পারে এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
তদুপরি, সরকারের উচিত এসব মানুষদের আর্থিক সহায়তা হিসেবে সরাসরি নগদ অর্থ হস্তান্তর করা এবং এর জন্য চিহ্নিত করা প্রয়োজন, কাদের এই ধরনের সহায়তা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ এবং বিভিন্ন এনজিও'র সঙ্গে পরামর্শ করে কাজটি করা যেতে পারে।
Comments