থাকার জায়গা সংকটে রাবির ভর্তি পরীক্ষার্থীরা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভর্তি পরীক্ষার্থীদের থাকার জায়গার তীব্র সংকট হওয়ার যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, আমরা তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। প্রতি বছর রাবির ভর্তি পরীক্ষার সময় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে যাওয়া শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে থেকে পরীক্ষা দেন।
সাধারণত ভর্তি পরীক্ষার্থীদের প্রায় ৫০ শতাংশ এসব হলে অবস্থান করে পরীক্ষা দেন। বিশেষ করে অসচ্ছল পরিবার বা অনেক দূর থেকে যাওয়া পরীক্ষার্থীরা হলেই অবস্থান করেন। তবে, এ বছর করোনা মহামারির কারণে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়ায়, ভর্তি পরীক্ষার্থীরা থাকার জায়গা পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়ছেন।
অন্যান্য বছর হলের রুমগুলোর পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সাধারণত ভর্তি পরীক্ষার্থীদের অডিটোরিয়াম, মসজিদ, ডাইনিং রুম এবং কখনো কখনো হলের বারান্দাসহ অন্যান্য খোলা জায়গায় থাকার অনুমতি দেয়। এ ছাড়া, পরীক্ষার্থীরা রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও অবস্থান করেন। কিন্তু, এ বছর এগুলোও বন্ধ আছে।
ফলে এরইমধ্যে প্রাইভেট হোস্টেলগুলো প্রায় পুরোপুরি ভরে গেছে। পাশাপাশি, শহরের আবাসিক হোটেলগুলোও ফাঁকা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। পরীক্ষার্থীদের অভিযোগ, কিছু হোটেল সংকটের সুযোগে অতিরিক্ত রুম ভাড়া আদায় করছে।
এই সংকট মূলত মহামারির কারণে ঘটলেও, এটি আসলে একটি আরও বড় সমস্যার অংশ বলে আমাদের বিশ্বাস। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পৃথকভাবে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের অনেক দূরে যাতায়াত করতে হয়। সময়, শক্তি ও আর্থিক দিক বিবেচনা করলে বছরের পর বছর ধরে ভর্তি পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের প্রচুর ক্ষতি হয়েছে।
ভর্তিচ্ছুদের চাপ কমাতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কিছু উদ্যোগ নেওয়া উচিত ছিল। ইউজিসি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু, রাবিসহ অন্যান্য প্রধান পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেই প্রস্তাবের সঙ্গে একমত হয়নি। এই গুচ্ছ পদ্ধতি হয়তো ভর্তিচ্ছুদের ভোগান্তি কমাতে পারত। এ ছাড়া, রাবি কর্তৃপক্ষ বিকল্প জায়গায় পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে পারত, যেনো শিক্ষার্থীদের বেশি দূরে যেতে না হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাজশাহীর ভর্তি পরীক্ষার্থীদের জন্য এমন ব্যবস্থা নিয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে রাবি কর্তৃপক্ষ যে অবস্থায় পড়েছে, তা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অব্যবস্থাপনা ও দুর্বল পরিকল্পনার প্রমাণ। রাবি কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল আগেই এসব সমস্যা দূর করা এবং শিক্ষার্থীদের ঝামেলা কমানোর জন্য কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা।
মহামারির মধ্যে পরিক্ষার্থীদের থাকার জায়গা এবং স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা সম্পর্কিত সমস্যা নিয়ে চিন্তায় ফেলে দেওয়া উচিত হয়নি। তাই ভর্তি পরীক্ষার মাত্র কয়েক দিন বাকি থাকলেও, ভর্তিচ্ছুদের দুর্ভোগ কমাতে আমরা রাবি কর্তৃপক্ষের কাছে জরুরি ভিত্তিতে কিছু বিকল্প খুঁজে বের করার আহ্বান জানাচ্ছি।
অনুবাদ করেছেন জারীন তাসনিম
Comments