ঢাকা কেন্দ্রিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা তৈরি করার পরিণতি
দেশের বেশিরভাগ স্বাস্থ্যসেবার সুবিধাগুলোকে ঢাকা কেন্দ্রীক করার পরিণতিতে আবারও আমাদের ভুগতে হচ্ছে এবং নতুন করে আমাদের শিক্ষা হচ্ছে। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো মানুষের জীবনের বিনিময়ে আমরা এই শিক্ষা পাচ্ছি। দেশের প্রায় ৭০ শতাংশ আরটি-পিসিআর পরীক্ষাগারকে ঢাকা বিভাগে স্থাপন করার পেছনের যুক্তিটি মেনে নেওয়া কষ্টকর। আশ্চর্যজনকভাবে, করোনাভাইরাস শনাক্তের জন্য অত্যাবশ্যক ১২৮টি আরটি-পিসিআর সুবিধাযুক্ত পরীক্ষাগারের মধ্যে মাত্র ৩৯টি পরীক্ষাগার বাকি সাতটি বিভাগে রয়েছে। যার মধ্যে আবার ১০ শতাংশেই চট্টগ্রাম বিভাগে। এটি খুবই উদ্বেগজনক বিষয়, কারণ মহামারি এখন অন্যান্য জেলা ও শহরে, বিশেষ করে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।
গত বছরে শুরুর দিকে মহামারি আঘাত হানার সময় এই ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি নজরে এসেছিল। এটি পরিষ্কার যে, স্বাস্থ্য খাতে বড় ধরনের বিনিয়োগ করে এবং দেশের অলিগলিতে শত শত স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র স্থাপিত হলেও মহামারির মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় সময়ে এগুলোতে অনেক ঘাটতি রয়েছে। এ কারণে মহামারি শুরুর পর থেকেই বিভিন্ন জেলা ও শহরগুলোতে প্রয়োজনীয় মানবসম্পদ ও সরঞ্জামের হাহাকার দেখা গেছে। নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) শয্যা ও জরুরি স্বাস্থ্যসেবার অভাব, সঙ্গে প্রশিক্ষিত নার্স ও ডাক্তারের স্বল্পতা সব মিলিয়ে ঢাকার সঙ্গে অন্যান্য জেলার বৈষম্যটি লজ্জাজনকভাবে পরিষ্কার হয়েছে। অক্সিজেন সরবরাহের ক্ষেত্রেও একই ধরনের বৈষম্য চোখে পড়ে। প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা গেছে, দেশের প্রায় ১১ হাজার অক্সিজেন সিলিন্ডারের ৫০ শতাংশই ঢাকা ও চট্টগ্রামে রয়েছে। এছাড়াও, দেশের খুব কম হাসপাতালেই কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ সুবিধা রয়েছে।
আমরা বিশ্বাস করি, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিহত করার জন্য দ্রুত ও স্বয়ংসম্পূর্ণ পরীক্ষণ ব্যবস্থার কোন বিকল্প নেই। সঠিক পরীক্ষণ ছাড়া রোগীদের শনাক্ত করে তাদেরকে আইসোলেশনে পাঠানো ও চিকিৎসা করার প্রক্রিয়াটি কার্যকর হবে না। এ কারণে পরীক্ষার সুবিধাগুলো জরুরি ভিত্তিতে সম্প্রসারণ করতে হবে। পাশাপাশি, অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা সুবিধাগুলোও বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা হাসপাতালগুলোতে নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোপরি, সমগ্র দেশকে সঠিকভাবে চিকিৎসা সেবার আওতায় না আনতে পারলে কখনোই ঢাকাকে নিরাপদ বা সুরক্ষিত রাখা যাবে না।
ভাইরাসটির দ্রুত সংক্রমণের কথা মাথায় রেখে এ সকল উদ্যোগ অনেক আগেই নেওয়া উচিত ছিল। প্রধানমন্ত্রী ২০২০ সালের জুন মাসে সারাদেশে আরও আইসিইউ শয্যা তৈরি করতে এবং সকল সরকারি হাসপাতালে হাই-ফ্লো অক্সিজেন সহায়তার ব্যবস্থা করতে নিদের্শনা দিয়েছিলেন। সেই নির্দেশনা যারা মান্য করেননি সেই কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে জবাবদিহির আওতায় আনার সময় এসেছে। এসব কর্মকর্তাদের নিষ্ক্রিয়তায় দেশের মানুষের নাভিশ্বাস উঠে গেছে।
ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান
Comments