টিকাদান: শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত বদল সরকারের অদূরদর্শিতার বহিঃপ্রকাশ
ছয় দিনে প্রায় এক কোটি মানুষকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে সরকার যে উচ্চাভিলাষী টিকা কর্মসূচি হাতে নিয়েছিল, শুরু হওয়ার আগেই তা সংশোধন করতে হয়েছে। এতে আমরা হতাশ হলেও, অবাক হইনি।
শুরু থেকেই আমরা টিকাদান কর্মসূচি নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখছি। টিকা স্বল্পতার কারণে গত এপ্রিলে টিকাদান কর্মসূচি স্থগিত হয়ে যায়। এ ব্যাপারে পরিকল্পনা না থাকায় সরকার ওই সময় সমালোচিত হয়। আরও টিকা পাওয়ার পর অবশ্য জুলাইয়ে ফের টিকাদান কর্মসূচি চালু করা হয়। তবে, বড় পরিসরের কর্মসূচিটি থেকে শেষ মুহূর্তে পিছু হটার কারণে, এ বিষয়ে সরকারের সমন্বয় ও পরিকল্পনার অভাব নিয়ে আবারও প্রশ্ন ওঠছে।
এ পরিকল্পনা পরিবর্তনের পেছনের কারণটা আসলে কী? স্ট্রেইট ফ্রম স্টার নিউজরুমের প্রতিবেদন অনুসারে, সরকার চলতি মাসের শুরুতে চীন ও কোভ্যাক্স থেকে আরও টিকা পাওয়ার আশা করছিল। কিন্তু, পরে এ প্রক্রিয়া বিলম্বিত হয়ে যায়। এ ধরনের বিলম্বের ঘটনা আগেও ঘটেছে। এরপরও সরকার কর্মসূচি পরিকল্পনার সময় বিষয়টি কেন মাথায় রাখেনি, তা নিয়ে আমরা বিভ্রান্ত।
টিকার প্রথম ডোজ নেওয়া অর্ধেকেরও বেশি লোক এখনও দ্বিতীয় ডোজ পাননি। ফলে কিছু সহজ হিসাব-নিকাশ করলেই বোঝা যেতো, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ে নতুন লোকজনকে হাতে থাকা প্রায় সব টিকা দিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাস্তবধর্মী নাও হতে পারে। বিশেষ করে সরকার যেহেতু অন্যান্য গোষ্ঠীকেও টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলেছে।
মূল বিশেষ টিকাদান কর্মসূচি এখন ১৪ আগস্ট থেকে শুরু হতে চলেছে। আর আজ সরকার গ্রামাঞ্চলে বয়স্ক ও অন্যান্য লোকজনকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যে একটি পরীক্ষামূলক কর্মসূচি পরিচালনা করছে। সম্প্রতি আমরা দেখেছি, করোনাভাইরাস বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে আঘাত হেনেছে এবং ৫০ বছরের বেশি বয়সীদের মৃত্যুহার সর্বোচ্চ। তাই, আজকের টিকাদান কর্মসূচিতে গ্রামাঞ্চলের বয়স্কদের ব্যাপারে মনোযোগ দেওয়া একটি ভালো সিদ্ধান্ত।
যাই হোক, আমাদের অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে মনে করিয়ে দিতে হবে যে, টিকাদানের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে একটি দীর্ঘমেয়াদী কৌশলগত পরিকল্পনা থাকতে হবে।
এখন পর্যন্ত সরকার পূর্ণবয়স্ক জনগোষ্ঠীকে টিকা দেওয়ার বিষয়ে অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু, এসব কাজ কীভাবে করা হবে সে সম্পর্কে কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার রূপরেখা দেয়নি। নানা সময় কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন গোষ্ঠীকে (বয়স্ক, প্রতিবন্ধী, প্রবাসী শ্রমিক, ফ্রন্টলাইন কর্মীদের পরিবার, শিক্ষার্থী ইত্যাদি) অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলেছে। কিন্তু, সীমিত সরবরাহ নিয়ে ঠিক কীভাবে এ কাজটি করা হবে? এটি কি পর্যায়ক্রমে করা হবে? করোনাভাইরাসের হটস্পটগুলোকে কি বিশেষভাবে টার্গেট করা হবে?
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, সরকার এ পরীক্ষামূলক কর্মসূচিটি টিকাদানের ক্ষেত্রে সমস্যা চিহ্নিত করতে এবং সেগুলো মূল কর্মসূচির আগে ঠিক করতে ব্যবহার করবে। পাশাপাশি, এ কর্মসূচিতে গ্রামাঞ্চলে সচেতনতা বৃদ্ধিতে বিশেষ মনোযোগ থাকবে। শেষ পর্যন্ত এটিই ঘটবে এবং আজকের কর্মসূচিটি সুচারুভাবে ও দক্ষতার সঙ্গে পরিচালিত হবে বলে আমরা আন্তরিকভাবে আশা করি।
আমরা প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ১৪ আগস্টের কর্মসূচি এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। তা না হলে, ক্রমাগত পরিকল্পনা পরিবর্তন ও বিভ্রান্তি কেবল টিকা কর্মসূচির ক্ষেত্রেই নয়, বিধিনিষেধ ও কোভিড-১৯ সংক্রান্ত অন্যান্য সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রেও সরকারকে আস্থার সংকটে ফেলতে পারে।
ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন জারীন তাসনিম।
Comments