জনপ্রশাসনে আমলাতন্ত্রের অসমতা উদ্বেগের বিষয়

সুশাসন নিশ্চিতে কর্তৃপক্ষের উচিত সংস্কার করা

যে কোনো দেশের জন্য একটি শক্তিশালী ও কার্যকর জনপ্রশাসন অবকাঠামো থাকা খুবই জরুরি। কারণ এটি না থাকলে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়।

আমরা বাংলাদেশের প্রশাসনিক আমলাতন্ত্রের বর্তমান কাঠামো নিয়ে উদ্বিগ্ন। কারণ  সরকারের জনপ্রশাসন বিভাগে অস্বাভাবিক পদোন্নতির কারণে উচ্চপর্যায়ে লোকবল বাড়লেও, নিচের দিকের পদ ফাঁকা থাকছে। এতে এক ধরনের ভারসাম্যহীনতা দেখা দিচ্ছে, ফলশ্রুতিতে কর্মক্ষেত্রে উপযোগিতা ও জবাবদিহিতা কমছে এবং অ্যাডমিন ক্যাডারের বাইরের কর্মকর্তাদের মধ্যে হতাশা তৈরি হচ্ছে।

এই সংবাদপত্রের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, কিছু ক্ষেত্রে ভারসাম্যহীনতা এতোটা বেশি যে শীর্ষ পদের কর্মকর্তাদের সংখ্যা অনুমোদিত পদের তিন গুণেরও বেশি, যেখানে কয়েক হাজার পদ শুধু কাগজে কলমে বিদ্যমান।

দ্য ডেইলি স্টারের প্রতিবেদনে প্রকাশিত সংখ্যাগুলো আমাদের কিছু বিষয় দেখিয়ে দিয়েছে। যেমন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাদের প্রতি পাঁচটি পদের মধ্যে একটির বেশি খালি পড়ে আছে, যেখানে এখন ৯৯টি পদের বিপরীতে ৩০৯ জন অতিরিক্ত সচিব (গ্রেড-২) আছেন। যেখানে ২১০টি সুপারনিউমাররি বা ইন-সিটু পদোন্নতি হয়েছে। তবে, ২৬ জন ক্যাডারের মধ্যে মূলত প্রশাসন ক্যাডারেই এ ধরনের পদোন্নতি উপভোগ করছে— যাকে অন্যান্য ক্যাডার কর্মকর্তারা 'বৈষম্যমূলক' বলে অভিহিত করেছেন।

সরকারের নিজস্ব তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ৩৭০টি অনুমোদিত পদের বিপরীতে যুগ্মসচিব (গ্রেড-৩) পদে ৪৯০ জন কর্মকর্তা আছেন এবং ১৩৫টি পদের বিপরীতে গ্রেড-৪ (সিলেকশন গ্রেড) পদে ১৬৫ জন কর্মকর্তা আছেন। অন্যদিকে নিচের পদগুলো কর্মী সংকটে ভুগছে। এখানের ১ হাজার ৭৪০টি পদের বিপরীতে ৮৮৬ জন সিনিয়র সহকারী সচিব এবং ১ হাজার ৩১৪টি পদের বিপরীতে ৭৩৬ জন সহকারী সচিব আছেন।

একই পদে থাকা এবং আগের মতো একই দায়িত্ব পালনের জন্য করদাতাদের অর্থ কেন উচ্চ পদ এবং উচ্চ বেতন দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে? বিশেষজ্ঞদের মতে, আমলাতন্ত্রের কাঠামোগত কার্যকারিতা ক্ষতিগ্রস্ত করার পেছনে প্রধান কারণ ইন-সিটু পদোন্নতি। যেহেতু এ বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট নির্দেশিকা নেই, তাই এটি প্রার্থীদের যোগ্যতার ভিত্তিতে নয়, বরং তাদের লবিং প্রচেষ্টা এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কারণ বেছে নেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করে।

চলতি বছরের জুনে দ্য ডেইলি স্টার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল যে, সরকার কীভাবে সিভিল সার্ভিসের বাইরে জনপ্রতিনিধি বা পেশাদারদের পরিবর্তে প্রায় সব সরকারি সংস্থার শীর্ষে বর্তমান এবং প্রাক্তন আমলাদের রেখেছে। জুলাই মাসে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রিসভার সামনে একটি অযৌক্তিক প্রস্তাবও দেখলাম। যেখানে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীদের দায়মুক্তি চাওয়া হয়, যারা গুরুতর অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়েছে বা নৈতিক স্খলনে অভিযুক্ত। তবে, এটি প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল।

তবে, এসব ঘটনায় আমরা একই বিষয়ের পুনরাবৃত্তি দেখতে পাচ্ছি- উচ্চপদের আমলাদের কাছে অসম পরিমাণ ক্ষমতা ও তাদের পদগুলোও তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি সুরক্ষিত। জনপ্রশাসনের সংস্কার ও সংশোধন কর্মসূচী চালু করে আমলাতন্ত্রের এসব অসমতা দূর করা খুব জরুরি। শিগগির এসব উদ্যোগ নেওয়া না হলে কাঠামোগত দুর্বলতার কারণে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এই সংস্থাটি জনগণের সেবার মৌলিক কার্যক্রম পরিচালনার সক্ষমতা হারাবে।

ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English

Bid to remove president: BNP at odds with student movement

The interim government’s decision on whether to remove President Mohammed Shahabuddin from office is still awaiting a “political consensus”, because the BNP believes removing him would unnecessarily stir things up in post-Hasina Bangladesh.

7h ago