কোটি টাকার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সরঞ্জাম পড়ে আছে কেন?

বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ৭৪৬ দশমিক ৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের আওতায় কেনা বিভিন্ন ধরনের জরুরি উদ্ধার সরঞ্জাম ঢাকার বিভিন্ন স্থানের গুদাম ও স্যাটেলাইট নিয়ন্ত্রণ কক্ষে পড়ে আছে। পড়ে থাকতে থাকতে ধুলো জমতে শুরু করেছে এগুলোতে।

এসব যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কোনো ধরনের বরাদ্দ নেই বলে প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও এসবের মধ্যে এমন কিছু যন্ত্রপাতি আছে, যেগুলো সংবেদনশীল এবং এভাবে ফেলে রাখলে নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) পরিচালিত উপ-প্রকল্পের আওতায় এসব সরঞ্জাম কেনা হয়েছিল অগ্নিকাণ্ড ও ভূমিকম্পসহ অন্যান্য বিপর্যয়ে জরুরি সাড়াদানে দেশের সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্দেশে।

২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের এপ্রিলের মধ্যে প্রকল্পটির ৮০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়। পরে কোভিড-১৯ মহামারির কারণে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত এক বছর বাড়ানো হয়। কিন্তু, কর্তৃপক্ষ এখন প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত এবং ব্যয় বাড়িয়ে ৮০৫ দশমিক ৯০ কোটি করতে চাইছে। সংশোধনী প্রস্তাবটি বর্তমানে পরিকল্পনা কমিশনের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।

কিন্তু, যেসব সরঞ্জাম ইতোমধ্যে বিভিন্ন গুদাম ও স্যাটেলাইট কক্ষে পড়ে আছে, সেগুলোর কী হবে? অব্যহৃত অবস্থায় পড়ে থাকা সরঞ্জামের মধ্যে জার্মানি থেকে কেনা তিনটি টার্নটেবল মই রয়েছে, যেগুলো বহুতল ভবনে আগুন নেভানোর কাজে লাগে। কিন্তু, ইএমআইডির পরিদর্শক দল গত মে মাসে এগুলোকে ব্যবহারযোগ্য অবস্থায় পায়নি। তিনটি মইয়ের একটিকে কার্যক্ষম অবস্থায় পাওয়া গেলেও, একটি মেরামত করা হচ্ছে এবং একটি আংশিক নষ্ট।

এ ছাড়া, অনেক আইসিটি সরঞ্জাম এখনো বাক্সবন্দিই রয়ে গেছে। পরিদর্শক দলটি কল্যাণপুর, মিরপুর ১০, মহাখালী, আজিমপুর ও কারওয়ান বাজার এলাকার বিভিন্ন গুদাম ও স্যাটেলাইট নিয়ন্ত্রণ কক্ষ পরিদর্শন করে এসব সরঞ্জাম, অ্যাম্বুলেন্স ও আসবাবপত্রে ধুলোর আস্তরণ পড়ে থাকতে দেখেছেন।

গত ৮ জুলাই কারওয়ান বাজারের গুদাম পরিদর্শনে গিয়ে দ্য ডেইলি স্টারের প্রতিবেদকরা পাশে কর্মরত শ্রমিকদের কাছ থেকে জানতে পারেন, গত রমজান মাসে শেষবার এ গুদাম খোলা হয়েছিল। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিএনসিসি অঞ্চল-৩ এর নির্বাহী প্রকৌশলী প্রতিবেদকদের প্রকল্প কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। আর প্রকল্প পরিচালক বলেন, প্রায় দুই বছর আগে এসব গুদাম ও নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দায়িত্ব ডিএনসিসির জোনাল এক্সিকিউটিভ অফিসের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

টার্নটেবল মইগুলো কেন ঠিক করা হচ্ছে না- জানতে চাইলে প্রকল্প কর্মকর্তারা যে ব্যাখ্যা দেন তা খুবই দুর্বল। এর মাধ্যমে এ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জামগুলো রক্ষণাবেক্ষণের প্রতি উদাসীনতাই ফুটে ওঠে।

নারায়ণগঞ্জে কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড এবং এ জাতীয় ধ্বংসাত্মক বিপর্যয় আমাদের জরুরি উদ্ধার সরঞ্জামের প্রয়োজনের কথা মনে করিয়ে দেয়। প্রকল্পটির সংশোধনী যদি অনুমোদন পায় এবং যদি ২০২২ সালের এপ্রিলে এর মেয়াদ শেষ হয়, তাহলে ওই সময়ের মধ্যেই কাজটি শেষ করতে কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানাচ্ছি আমরা। এ ছাড়া, প্রকল্পের আওতায় কেনা সব সরঞ্জাম রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রয়োজনে ব্যবহারেরও আহ্বান জানাচ্ছি।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh economy growth projection 2024-25

Can Bangladesh's economy achieve its revised growth projection?

Bangladesh’s economic growth slowed down due to global uncertainties and domestic political instability and natural disasters.

9h ago