কেন হয় না সাংবাদিক হত্যায় ন্যায়বিচার?
গতকাল মঙ্গলবার সাংবাদিকদের ওপর হওয়া অপরাধের দায়মুক্তি অবসানে আন্তর্জাতিক দিবস পালিত হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল প্রেস ইনস্টিটিউট এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সাংবাদিকদের ওপর হওয়া সহিংস অপরাধের জন্য বিশ্বব্যাপী দোষী সাব্যস্ত হওয়ার প্রবণতা অত্যন্ত কম। এ ধরনের প্রায় ১০টি মামলায় অন্তত ৯টিতেই কেউ শাস্তি পায় না। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এটি সত্য।
দ্য ডেইলি স্টারে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত আড়াই দশকে অন্তত ১৩ জন সাংবাদিক হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় সাধারণ বৈশিষ্ট্যের মধ্যে রয়েছে তদন্ত শেষ না হওয়া, অপরাধীদের খুঁজে না পাওয়া এবং সবশেষে একটাই সমাপ্তি— ন্যায়বিচারের অভাব এবং হত্যাকারীদের দায়মুক্তি।
১৯৯২ সাল থেকে বাংলাদেশে অন্তত ২৩ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে এবং এর মধ্যে মাত্র কয়েকটি মামলার রায় হয়েছে। যেসব মামলা এখনও আটকে আছে, তাতে মনে হয় কেবল নিহতদের পরিবারই ন্যায়বিচার পাওয়ার বিষয়ে উদ্বিগ্ন। এর মধ্যে কয়েকজন সাংবাদিককে এক দশকেরও বেশি আগে হত্যা করা হয়েছিল, এখনও তাদের মামলা আদালতে ওঠেনি।
নিহতদের পরিবারের বিক্ষুব্ধ সদস্যরা গণমাধ্যমকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে তদন্তকারীদের ব্যর্থতা, কখনো কখনো তদন্তই না হওয়ার কথা জানিয়েছেন। এই মামলাগুলো এতো দিন ধরে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, এতো দীর্ঘ সময় ধরে আমাদের বিচার ব্যবস্থার আইনি গোলকধাঁধায় আটকে আছে যে একটি মামলায় এমনকি প্রসিকিউশনের আইনজীবীরও মামলার অবস্থা সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই।
কিছু ক্ষেত্রে আদালত মামলা খারিজ করে দিয়েছেন কিংবা অভিযুক্তদের খালাস দেওয়া হয়েছে। যে কয়টি মামলায় রায় হয়েছে, সেগুলোতেও সময় লেগেছে প্রায় এক দশকেরও বেশি।
দায়মুক্তির এই সংস্কৃতি এবং ন্যায়বিচারের প্রতি এমন উদাসীনতা নির্ভয়ে দায়িত্ব পালনে সাংবাদিকদের জন্য একটি গুরুতর হুমকি।
যদি স্বার্থান্বেষী মহল এমন সহিংসতার মাধ্যমে স্বাধীন সাংবাদিকতাকে স্তব্ধ করতে পারে এবং এর কারণে যদি তাদের প্রায় কোনো শাস্তির মুখোমুখিই না হতে হয়— তাহলে তা একটি দেশের সংবাদপত্রের স্বাধীনতার অবস্থা সম্পর্কে কী বার্তা দেয়?
বাংলাদেশের সাংবাদিকরা ইতোমধ্যেই ক্রমবর্ধমান পুলিশিংয়ের মধ্যে কাজ করছে। তাদের মাথার ওপর ভয়ঙ্কর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ঝুলছে। বর্তমানে যে ভয়ের পরিবেশে সাংবাদিকরা কাজ করছে এই ধরনের পরিস্থিতি সেই ভয় আরও বাড়িয়েছে।
বাংলাদেশে যে সাংবাদিকদের হত্যা করা হয়েছে আমরা অতি দ্রুত তাদের হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি করছি এবং দেশে গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য নিরাপদ ও উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের ক্ষেত্রে দায়মুক্তির সংস্কৃতি অব্যাহত থাকলে এই ধরনের হামলার ঘটনা বাড়বে এবং স্বাধীন ও সমালোচনামূলক সাংবাদিকতার ভবিষ্যৎ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শেষ পর্যন্ত এটা শুধু সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপরই নয়, গণতন্ত্রের ওপরও আক্রমণ।
ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন সুচিস্মিতা তিথি
Comments