এটি কি ভুক্তভোগীকেই হেনস্তা করা নয়?
ধর্ষণের ঘটনার ৭২ ঘণ্টা পর কোনো অভিযোগকারী থানায় গেলে মামলা গ্রহণ না করার যে সুপারিশ করেছেন ঢাকার একটি আদালত, তার সঙ্গে অনেক নারী অধিকার সংগঠনের পাশাপাশি আইন বিশেষজ্ঞরাও দ্বিমত পোষণ করেছেন। আমরা মনে করি এটি ভুক্তভোগীদের আরও ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেবে। এই ধরনের মামলা লড়তে চান এমন সিদ্ধান্তে আসতে অনেক নারীর কয়েক মাস, এমনকিও বছরও লেগে যায়। আবার অনেক ক্ষেত্রে, কোনো ভুক্তভোগী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তার ট্রমা কাটিয়ে উঠবেন বলে আশা করাটা যৌক্তিক নাও হতে পারে। তাহলে আমরা কীভাবে আশা করতে পারি যে, তারা মামলা লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে, নিজেদের তৈরি করে ৭২ ঘণ্টা সময়সীমার মধ্যে পুলিশে অভিযোগ করবে?
আমাদের পুলিশ ও বিচারব্যবস্থা ভুক্তভোগী নারীদের জন্য কতটা প্রতিকূল- তা অতীতের অসংখ্য মামলায় স্পষ্ট। এই পরিস্থিতিতে এ ধরনের মামলা লড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া নারীদের জন্য আরও কঠিন। সর্বোপরি এই ধরনের পূর্বশর্ত ভিকটিমের আইনি সহযোগিতা চাওয়ার ক্ষেত্রেও নিরুৎসাহিত করতে পারে। এটি স্পষ্টতই এমন কিছু নয়, যা আমরা চাই।
ধর্ষণ সবচেয়ে গুরুতর অপরাধগুলোর একটি। যে নারীকে ধর্ষণ করা হয় তিনি গুরুতর শারীরিক ও মানসিক আঘাতের ভেতর দিয়ে যান। স্বাভাবিকভাবেই এই ট্রমা নিরাময়ে দীর্ঘ সময় লাগতে পারে। সামাজিক নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। কোনো অভিযোগকারীকে পদক্ষেপ নেওয়ার আগে ও এফআইআর দায়েরের আগে প্রচুর সাহস সঞ্চয় করতে হয়। যা তাদের আবার একই ধরনের ট্রমার মধ্য দিয়ে নিয়ে যায়। এসব কারণে বিচার ব্যবস্থাকে এমনভাবে তৈরি করা উচিত যা ভুক্তভোগীকে ন্যায়বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে সাহস জোগায়। এর থেকে দূরে সরিয়ে দেবে না। একই কথা প্রযোজ্য, যখন কোনো ভিকটিমের প্রতি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মনোভাবের কথা আসে। সুতরাং এই সুপারিশ উভয়দিকেই ভালো রকমের প্রভাববিস্তার করতে পারে। আর ভিকটিমদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে।
কিছু অধিকার কর্মী যেমন উল্লেখ করেছেন, একজন নারীকে ধর্ষণের পর ৭২ ঘণ্টা আটকে রাখলে তখন কী হবে? সে কি কখনও বিচার চাওয়ার সুযোগ পাবে না?
সে হিসেবে আমরা বিনীতভাবে, বিচারকের প্রতি যথাযথ সম্মান রেখেই বলছি যে, আদালতের সুপারিশ কেবল ন্যায়বিচারের পথই রুদ্ধ করবে না। বরং এর বিরূপ প্রভাবও পড়বে। বাংলাদেশে ধর্ষণের মামলায় মাত্র ৩ শতাংশের শাস্তি হয়। আমরা আদালতকে আইনি ব্যবস্থার ফাঁকফোকরগুলো খুঁজে বের করার এবং ভিকটিমের প্রতি আরও বন্ধুত্বপূর্ণ করে তোলার অনুরোধ করছি। যারা সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও আর্থিকসহ নানা কারণে সুবিচার পেতে কঠিন সময় পার করেন। যে ন্যায়বিচার তাদের প্রাপ্য।
Comments