ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

যারা ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধ না করে ঋণখেলাপি হয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) এর সভাপতির আহ্বানে আমরা খুশি হয়েছি। এই বছরের জুন পর্যন্ত খেলাপি ব্যাংক ঋণের পরিমাণ প্রায় এক লাখ কোটি টাকায় পৌঁছেছে, যেটি গত ৬ মাসের তুলনায় ১১ দশমিক ৮০ শতাংশ এবং এক বছর আগের তুলনায় ৩ দশমিক ২১ শতাংশ বেড়েছে। খেলাপি ব্যাংক ঋণ ও নন-পারফর্মিং লোন (এনপিএল) আমাদের সঙ্গে আছে বেশ কয়েক দশক ধরে। শিশুদের সঙ্গে যেরকম কোমল আচরণ করা হয়, ঠিক সেইভাবে একের পর এক সরকার এসে খেলাপি ঋণের বিষয়টিকে শুধুমাত্র টিকে থাকতেই সাহায্য করেনি, তারা একই সঙ্গে এটিকে বর্তমানের সুবিশাল পরিমাণে আসতে সাহায্য করেছে। যে কোনো সুষ্ঠু ব্যাংকিং ব্যবস্থায় যে বিষয়টি অনিয়ম হিসেবে বিবেচিত হয়, সেটি আমাদের দেশে একটি নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে।

খেলাপি ও ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের মধ্যে পার্থক্য জানা জরুরি। খেলাপিরা পরিস্থিতির শিকার এবং ইচ্ছাকৃত খেলাপিরা নিজেরাই এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করেন, যাতে ব্যাংকের কাছ থেকে নেওয়া টাকা ফিরিয়ে না দিতে হয় এবং না দেওয়ার পেছনে কোনো এক ধরনের যুক্তি দেওয়া যায়। এই খেলাপি যারা ইচ্ছাকৃত ও পরিকল্পিতভাবে নির্ধারিত সময়ে ঋণের কিস্তি ফিরিয়ে দিচ্ছে না, তারাই পুরো ব্যাংকিং ব্যবস্থার ক্ষতি করছেন। এরা আমানতকারীদের টাকা নিয়ে খেলছেন, তারা দেশের অর্থায়ন সংক্রান্ত আইনকে তামাশায় পরিণত করেছেন এবং সোজা কথায় বলতে গেলে, তারা আমানতকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করছেন। 

দ্য ডেইলি স্টার এ ধরনের অসাধু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের চরিত্র উন্মোচনে নিরন্তর কাজ করছে। আমাদের অভিমত, তাদের অনেক বেশি সুযোগ দেওয়া হয়েছে, তাদের সঙ্গে অনেক বেশি ভদ্র ও নমনীয় আচরণ করা হয়েছে। ফলশ্রুতিতে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার নেওয়ার ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের মনোভাব সম্পর্কে ভুল বার্তা পেয়েছি। বারবার তাদের ঋণের পুনঃতফসিল করা হয়েছে, আর প্রতিবার পুনঃতফসিল করার সময় সুদের হার কমিয়ে দেওয়া হয়েছে, প্রদেয় অর্থ থেকে সুদের অংশবিশেষ বাদ দেওয়া হয়েছে অথবা কিস্তিগুলোকে আরও সহজ করা হয়েছে।

যতবার একজন ঋণ খেলাপির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে তাকে আমরা ছেড়ে দিচ্ছি, ততবার একজন প্রকৃত ঋণগ্রহীতা এই ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের চেয়ে বেশি সুদের হারে ঋণ পরিশোধ করতে বাধ্য হচ্ছেন। এখনই উপযুক্ত সময়, এনপিএল কমিয়ে আনার দিকে বিশেষ নজর দেওয়ার। আমরা এফবিসিসিআইর সভাপতির বক্তব্যকে সাধুবাদ জানাই, কিন্তু এ ধরনের বিচ্ছিন্ন ও এককালীন আহ্বান এই অসুস্থ পরিস্থিতির অবসান ঘটাতে পারবে না। যা দরকার, তা হলো এই জাতীয় সমস্যা মোকাবিলায় সমগ্র ব্যবসায়ী সম্প্রদায় ও ব্যাংকিং খাতের সমন্বিত উদ্যোগ।

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English

No plan to lift ban on extremist groups

The interim government does not have any plan to lift the ban on extremist groups that were outlawed in recent decades.

1h ago