আমাদের শিল্প নিরাপত্তার দুর্বলতা ও সীতাকুণ্ডের দুঃস্বপ্ন

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপোর আগুন নেভানোয় চেষ্টায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। ছবি: রাজীব রায়হান/স্টার

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপোর (আইসিডি) ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণ আমাদের জন্য এক প্রচণ্ড ধাক্কা। এ ঘটনায় গতকাল রোববার রাত ১২টা পর্যন্ত ৪৯ জন নিহত ও দেড় শতাধিক দগ্ধ ও আহত হয়েছেন।

গত শনিবার রাত থেকে শুরু এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণে যেভাবে ডিপোটি ছাই হয়ে গেল, এর সঙ্গে শুধু অপরাপর ট্র্যাজেডিগুলোর সঙ্গেই তুলনা করা যায়। গত ২৪ ঘণ্টায়ও আগুন পুরোপুরি নেভানো যায়নি। যে সব মর্মান্তিক ঘটনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের শিল্প নিরাপত্তার প্রকৃত অবস্থা এখন প্রকাশ্য, এই মর্মঘাতী ট্রাজেডি সে তালিকায় যোগ হয়ে গেল।

আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। এ অবস্থায় মৃতের সংখ্যা নিঃসন্দেহে বাড়বে। ঘটনাস্থল ও হাসপাতাল উভয় স্থানেই এখন আতঙ্ক-ধ্বংসযজ্ঞের ভয়াবহতা। অজস্র বিস্ফোরণ হয়েছে সেখানে। কিছু বিস্ফোরণ এতটাই প্রবল ছিল যে সেগুলোর শব্দ কয়েক কিলোমিটার দূর পর্যন্ত শোনা গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী সেখানে যেন 'আগুনের গোলার বৃষ্টি' হচ্ছিল। উদ্ধারকাজে প্রথমে ফায়ার সার্ভিস ও পরে সেনাবাহিনী যোগ দেয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ও ধ্বংসাবশেষ থেকে পুড়ে যাওয়া মরদেহগুলোকে বের করতে উদ্ধারকারীদের বেশ ভয়ঙ্কর চ্যালেঞ্জ নিতে হয়েছে। অন্যদিকে হাসপাতালগুলোয় উৎকণ্ঠা আর দুশ্চিন্তার মধ্যে বইছে শোকার্ত বাতাস।

আমরা এখনো জানি না কীভাবে আগুন লেগেছে? কিন্তু, ডিপোর বেশ কিছু কনটেইনারে প্রচুর পরিমাণে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডের মতো দাহ্য পদার্থ ছিল বলে খবরে প্রকাশ পেয়েছে। এই পদার্থ আগুনকে আরও তীব্র করতে পারে এবং অন্যান্য রাসায়নিকের সঙ্গে বিক্রিয়ায় বড় ধরনের বিপত্তি ঘটাতে পারে।

স্বাভাবিকভাবেই ফায়ার সার্ভিসকে ডিপোতে রাসায়নিকের মজুতের কথা জানানো হয়নি। ফলে, অন্তত ৯ ফায়ার সার্ভিসকর্মী প্রাণ হারিয়েছেন।

ডিপোতে লাখ লাখ ডলারের গার্মেন্টস পণ্য ছিল। অবশ্যই এ ঘটনার তদন্তের দিকে সবার নজর থাকবে। অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের কারণ যাই হোক না কেন, আমরা আশা করি, তদন্তকারীরা তা শিগগির খুঁজে বের করবেন। আমরা আরও আশা করি, এ ঘটনায় দায়ীদের জবাবদিহি করা হবে।

চট্টগ্রামে কন্টেইনার ডিপো শিল্পের ২৪ বছরের ইতিহাসে সীতাকুণ্ডের এই ট্রাজেডি সবচেয়ে বড় এবং দাহ্য রাসায়নিকের জন্য প্রথম বিপর্যয়। দুর্ভাগ্যবশত, বাংলাদেশে এ ধরনের ভয়াবহ ঘটনা খুব অহরহই ঘটছে।

বাংলাদেশের শিল্প-বাণিজ্যের জন্য অবকাঠামোগত ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রস্তুতি দুর্বল এবং এটি বিকশিত হওয়ার প্রাথমিক পর্যায়ে আছে বলে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এ বছরের শুরুতে উল্লেখ করেছিল।

দুর্বলতার কারণে এ ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা প্রায় অনিবার্য হয়ে উঠে। শেষ পর্যন্ত এর মূল্য হিসেবে এসব ঝুঁকিপূর্ণ কর্মস্থলে নিয়োজিত শ্রমিকদের জীবন দিতে হয়।

আমরা সরকারকে এই হৃদয়বিদারক ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করার এবং এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে ডিপোসহ শিল্প সংশ্লিষ্ট সব স্থাপনায় প্রয়োজনীয় সংস্কার আনার আহ্বান জানাই। আমরা আশা করব নিহতদের মরদেহ দ্রুত শোকাহত পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এ ছাড়া, যারা এ ঘটনায় বেঁচে ফিরেছেন এবং যারা দগ্ধ ও আহত হয়েছেন তাদের সঠিকভাবে চিকিত্সা ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে হবে। তাদের ও তাদের পরিবারের যে ক্ষতি হয়েছে তা অপূরণীয়।

এ দুর্ভোগের কোনো কিছুই যেন বিফলে না যায়, সরকারকে অবশ্যই তার জন্য যা যা করা দরকার সব করতে হবে।

Comments

The Daily Star  | English
consensus commission bicameral parliament proposal

Consensus commission: Talks stall over women’s seats, upper house

The National Consensus Commission proposed establishing an upper house comprising elected representatives from each district and city corporation, and suggested abolishing the current system of reserved seats for women in parliament.

6h ago