অ্যান্টিবায়োটিকের অকার্যকারিতা জরুরিভাবে মোকাবিলা করতে হবে

ছবি: এএফপি ফাইল ফটো

কয়েকদিন আগে অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার ও এর অত্যধিক ব্যবহার নিয়ে আমরা একটি কলামে উদ্বেগ জানিয়েছিলাম। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) ইনস্টিটিউট অব এপিডেমিওলজি পরিচালিত গবেষণায় দেখা যায়, দেশের প্রায় সব জরুরি ও বহুল ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ ৫০ শতাংশেরও বেশি কার্যকারিতা হারিয়েছে।

এখন দেখা যাচ্ছে আমরা যে খাবার গ্রহণ করি তার মাধ্যমেও অ্যান্টিবায়োটিকের অকার্যকারিতা বা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেসিস্ট্যান্স (এএমআর) ঘটছে।

বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএলআরআই) গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকার ২৯টি বাজার থেকে সংগ্রহ করা মুরগির নমুনায় বিভিন্ন মাত্রায় ১৭টি অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়ার ৩টি ধরণ পাওয়া গেছে, যেখানে প্রতিরোধের মাত্রা ৬ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সালমোনেলা বিশ্বব্যাপী মানুষের ডায়রিয়াজনিত রোগের ৪টি মূল কারণের একটি।

এখানে সমস্যা হলো, খামারিরা কেবল অসুস্থ হাঁস-মুরগিকে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়াচ্ছেন না বরং আইসিডিডিআরবির গবেষণায় অর্ধেকেরও বেশি খামারিদের কারণ ছাড়াই এমনকি ১ দিনের মুরগির ছানাকেও অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়াতে দেখা গেছে।

খামারিরা সুস্থ মুরগিতেও অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারকে 'যৌক্তিক' উল্লেখ করে জানিয়েছেন, এটি খামারের মধ্যে রোগ ছড়িয়ে পড়া ঠেকায়।

সবচেয়ে উদ্বেগজনক হলো, পশু চিকিৎসক ও ফিড ডিলাররা কৃষকদের এই অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। যদিও ফিড ডিলারদের এ ধরনের পরামর্শ দেওয়ার কোনো এখতিয়ার নেই।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অ্যান্টিবায়োটিকের অকার্যকারিতা বা এএমআর একটি প্রধান জনস্বাস্থ্য হুমকি এবং এটি ধীরে ধীরে আগের চিকিত্সাযোগ্য ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও পরজীবীগুলোর চিকিত্সা অসম্ভব করে তুলবে। এটি কেবল অসুস্থ রোগীর সংখ্যা বাড়াবে না বরং আরও বেশি মৃত্যু ঘটবে।

আমাদের ভঙ্গুর স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় এটি আরও চাপ ফেলবে। অন্যদিকে, অর্থনীতিতে এটি যে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সরকার ও স্বাস্থ্যসেবা খাতের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। বড় হাসপাতাল থেকে ছোট ক্লিনিক, মানুষ ও প্রাণীদের ক্ষেত্রেও অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার বন্ধ করার সময় এসেছে।

অ্যান্টিবায়োটিকের এই অকার্যকারিতা কেবল স্বাস্থ্যব্যবস্থাকেই প্রভাবিত করে না, এটি একাধিক ফ্রন্টের খরচও বাড়িয়ে দেয়। ওষুধ হিসেবে ব্যবহারের মাধ্যমে হোক কিংবা অন্য যেকোনো উপায় (যেমন: স্বাস্থ্যবিধি) এএমআর সমস্ত প্রজাতির মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে এবং সবাইকে প্রভাবিত করতে পারে।

এখন এটি নিয়ন্ত্রণের একমাত্র উপায় হলো জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো এবং মানুষ ও প্রাণীদের জন্যে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রেসক্রিপশন ও এর ব্যবহার কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করা।

অনুবাদ করেছেন সুচিস্মিতা তিথি

Comments

The Daily Star  | English

Onion price rises on supply crunch

Onion prices at retail markets in Dhaka rose by Tk 10 to Tk 15 per kg over the past week, deepening the woes of low and fixed-income people

4h ago