এক তরুণ কবির মৃত্যু

তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। ছবি: সংগৃহীত

আপনারা অনেকেই ১৩ শতাব্দীর সুফি কবি, কিংবদন্তি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমীর কবিতা পড়েছেন। তার কবিতা বা দর্শন আমি সহজেই অনলাইন বা অন্য উত্স থেকে নিয়ে এখানে উল্লেখ করতে পারতাম। কিন্তু, তার প্রয়োজন নেই।

আমি অন্য কিছু বলতে চাই। মাত্র চার লাইনের একটি কবিতার বিষয়ে বলতে চাই। আসলে আমার এই লেখার সঙ্গে পারস্য সাহিত্য বা সুফি কবিতার কোনো যোগসূত্র নেই। আমি বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের এক কিশোরের কথা বলব, ২০১৩ সালের মার্চে শীতলক্ষ্যায় যার মরদেহ পাওয়া গিয়েছিল।

মনে পড়েছে নিশ্চয়? হ্যাঁ, তিনি তানভীর মাহমুদ ত্বকী। তাকে চেনার কথা। আপনি তার ছবি, তার বড় গোল কৌতূহলী চোখ পত্রিকার পাতায় দেখেছেন।

ত্বকীর মরদেহ উদ্ধারের পর তার একটি নোটবুক সামনে আসে। সেখানে কিছু ইংরেজি ও বাংলা কবিতা, প্রবন্ধ, কিছু গাণিতিক সমীকরণ ও পদার্থবিজ্ঞানের তত্ত্ব লেখা ছিল। ফেসবুকে ‘সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চ’ নামে একটি পেজে তার কয়েকটি বাংলা কবিতা সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশ করা হয়। পরে ‘রাস্তা’ নামে একটি অ্যাক্টিভিস্ট ম্যাগাজিন সেগুলো প্রকাশ করে।

সদ্য কৈশোর পেরোনো ত্বকী লিখেছেন—

‘আমি প্রস্তর হয়ে মরলাম উদ্ভিদ হতে

উদ্ভিদ হয়ে মরি, তো উত্থিত প্রাণে

মানুষ হয়ে উঠলাম পরে, যখন সত্য উদ্ভাসিত হল

ভয় কিসের? দ্বিধা কেন মৃত্যুতে?’

আমাদের তরুণ ত্বকী তার একটি কবিতায় জিজ্ঞাসা করেছেন— মৃত্যুর ভয় কেন? যেন মৃত্যু কোনও উদযাপন, আনন্দের বিষয়!

অবাক বিষয়, এগুলো রুমীর কবিতার সঙ্গে মিলে যায়— ‘আমার কিসের ভয়? মৃত্যুতে কী হারাবো আমি?’

ছোট ত্বকীর মৃত্যুভয় ছিল না। তবে, ১৭ বছর বয়সে তাকে এক নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে হয়েছিল।

আমি অ্যাক্টিভিস্ট ম্যাগাজিন ‘রাস্তা’র সঙ্গে জড়িত ছিলাম। কিন্তু, কবিতা সম্পর্কে আমার স্বল্পজ্ঞান থাকায়, আমি জানতাম না যে রুমীর একটি কবিতায় একই বক্তব্য ছিল।

ত্বকীর কবিতার পেছনে কার অনুপ্রেরণা ছিল, সে সম্পর্কে আমার উত্সাহ ছিল না। আমি কেবল তার লেখা পড়ে স্তব্ধ হয়ে ছিলাম। ত্বকীর লেখার ভক্ত হয়ে গেলাম আমি। আমাদের পত্রিকার একজন শুভাকাঙ্ক্ষী ও পৃষ্ঠপোষক আমাকে রুমীর কবিতা ‘দ্য স্টোন আই ডাইড’ পড়তে দিয়েছিলেন। এরপরই আমি বিষয়টি জানতে পারি।

ত্বকী কি কখনও রুমী পড়েছিল? আমি জানি না। তবে, তার বাবা বলেছিলেন, ত্বকী রুমীর কবিতা পড়ত। শাস্ত্রীয় ও লোকসংগীতের পাশাপাশি তার সুফিবাদের প্রতি অনুরাগ ছিল।

তবে, এসব জেনে কী লাভ? আমাদের কারো কাছেই এসবের কোনো গুরুত্ব নেই। ত্বকী হত্যাকাণ্ডের পর আট বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। আমরা এখনো কাউকে বিচারের মুখোমুখি হতে দেখিনি।

সম্ভবত, এসব কোনো কিছুতেই কারও কিছু যায়-আসে না। একজন তরুণ কবির নিষ্ঠুর মৃত্যু এমন কিছু নয় যা এই সমাজকে নাড়িয়ে দিতে পারে। এমন আরও অনেক কবির জন্ম হবে, যারা কবিতা লিখবেন, তাদের মৃত্যুও হবে। এবং আমরা ত্বকীকে ভুলে যাব, যিনি হয়তো আমাদের ডিলান টমাস বা রুমী হয়ে উঠতে পারতেন।

ত্বকীর কবিতার কয়েকটি চরণ দিয়েই লেখাটি শেষ করি।

প্রত্যাবর্তন নামে এক কবিতায় তিনি লিখেছেন,

‘আরও একবার আমি মানুষ হয়ে মরব

উত্থিত হতে নিষ্কলঙ্ক ফেরেশতাদের পাশে

তবে তা থেকেও উন্নীত হতে হবে আমাকে...’

Comments

The Daily Star  | English

Rawhide market disappoints again despite govt price hike

The Ministry of Commerce had increased the price of cowhide in Dhaka by Tk 5-10 per square foot, setting the official rate at Tk 60-65

26m ago