কুরবানির গরুর হাটের চাহিদা-সরবরাহের ভারসাম্য

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

ঢাকার কুরবানির গরুর হাটে প্রতিবছরের মতো এবারো হাজার হাজার গরু এসেছে এবং এগুলোর প্রায় সবই বিক্রি হয়ে যাবে। একটি গরু খামার থেকে ঢাকার বাজার পর্যন্ত এনে চার-পাঁচ দিন রাখতে নাকি গড়ে প্রায় দুই হাজার টাকা খরচ হয়, কাজেই বিক্রি না করে ফেরত নিয়ে যাওয়া নিশ্চয়ই ব্যবসায়িক বিবেচনায় কাম্য নয় এবং আসলেই খুব বেশি সংখ্যক গরু ফেরত নেওয়ার ঘটনা দেখা যায় না।

এটা ঠিক যে  ব্যাপারিরা বাজারের প্রতিদিনের অবস্থা বুঝে খামারিদের কাছ থেকে আরও গরু সংগ্রহ করে এনে বাজারের সরবরাহ কিছুটা বাড়াতে পারে, তবে সম্ভবত এত অল্প দিনের ব্যবধানে সরবরাহে কেবল সীমিত আকারেই এভাবে নমনীয়তা আনা যায়।
আর বাজারের চাহিদার নমনীয়তা তো আরও কম। যারা কুরবানির পশু কিনতে মনস্থির করেছেন তারা সামান্য ব্যতিক্রম ছাড়া সবাই কিনবেন এটা ধরেই নেয়া যায়। কী করে তাহলে ঢাকার গরুর হাটের এই চাহিদা-সরবরাহে সমতা আসে?
অসংখ্য ক্রেতা-বিক্রেতারা তো আগে থেকে কোনো সমন্বিত সিদ্ধান্ত নেননি, বা নিতে চাইলেও তার আয়োজন করা সম্ভব হতো না। সরকারও পরিকল্পনা করে কিছু বলে দেয়নি (কম্যুনিস্ট সোভিয়েত রাশিয়ায় এ ধরনের পরিকল্পনা করতে গিয়ে প্রতিদিন রুটির দোকানের সামনেও অসংখ্য মানুষকে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে খালি হাতে ফিরে যেতে হতো বলে শোনা যায়।) বাজারের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে বলে একে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, যেমন- এক্ষেত্রে জনস্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর কৃত্তিম উপায়ে গরু মোটাতাজা করার উপর কার্যকর বিধিনিষেধ থাকা দরকার, অতি ধনীদের দৌরাত্মে দাম বেড়ে গেলে সীমিত আয়ের মানুষদের কুরবানির গরু কিনতে হিমশিম খেতে হয় (বাজারের কার্যকারিতা ও ত্রুটি- বিচ্যুতি আর পুঁজিবাদী বিশ্বের অন্যায্যতা ভিন্ন বিষয়)। কিন্তু এই যে বাজারের মাধ্যমে ক্রেতাদের চাহিদা ও ক্রয়ক্ষমতা, গরুর খামারী ও বিক্রেতাদের সরবরাহের খরচ ও সামর্থ্য, প্রতিদিনের দামের ওঠা-নামা- এসবের বিপুল পরিমাণ তথ্য তাৎক্ষণিক সমন্বয়ের মাধ্যমে শেষ পর্যন্ত এক ধরনের চাহিদা-সরবরাহের ভারসাম্য তৈরি হয় তা কোনো সরকারি পরিকল্পনা বা উচ্চ ক্ষমতার কম্পিউটারের পক্ষে সম্ভব নয়। এটাকেই বাজারের "অদৃশ্য হাত" (invisible hand of the market) বলা হয়। জ্যোতির্বিজ্ঞানের মতো অর্থনীতিতেও যে অনেক অবিশ্বাস্য রকমের চমকপ্রদ বিষয় আছে তা আমরা লক্ষ্য করি না, হয়তো প্রতিদিনের সাদামাটা অবধারিত বিষয় মনে করে।
পরিশিষ্ট: আসলে কুরবানির গরুর হাট সম্পর্কে আমার ধারণা খুব সামান্য। গরুর বাজার থেকে কেউ কেউ সাংবাদিক হিসেবে লাইভ ধারাবিবরণ দিচ্ছেন এবং কেনাকাটাতেও মধ্যস্ততা করছেন, তাদের দু-একজনের সাথে যোগাযোগ করে তেমন সাড়া পাচ্ছি না। সেজন্য এই গরুর বাজার বিষয়ে অভিজ্ঞদের মতামত শুনতে চাই। অর্থনীতি পাঠের শুরুতেই বাজারের চাহিদা-সরবরাহের ভারসাম্যের "মডেল" পড়ানো হয়। সেটি বাস্তব ক্ষেত্রে কাজে লাগাতে না পারলে সে পড়াশোনার তো খুব প্রায়োগিক মুল্য নাই। বিষয়টি অর্থনীতির বাংলা বইতে উদাহরণ হিসাবে দেবো হয়তো।

(অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে নেওয়া)

Comments

The Daily Star  | English

If consensus commission fails, it will be a collective failure: Ali Riaz

He made the remarks in his opening statement during the 14th day of the second phase of dialogues with political parties

1h ago