ফ্রান্স বনাম মরক্কো: প্রেডিকশন, একাদশ ও অন্যান্য রেকর্ড
বেঞ্চ পরীক্ষা করতে গিয়ে তিউনিসিয়ার সঙ্গে ধাক্কা খেয়েছিল ফ্রান্স। এছাড়া শিরোপা ধরে রাখার মিশনে পুরো আসর জুড়েই দুর্দান্ত দলটি। অন্যদিকে টুর্নামেন্টের একমাত্র অপরাজিত দল মরক্কো। একটা দলের রক্ষণভাগ কতোটা জমাট হতে পারে রীতিমতো তার উদাহরণ সৃষ্টি করেছে দলটি। কিন্তু ফরাসিদের হয়েছে দুর্দান্ত আক্রমণভাগ। লড়াইটা তাই ফ্রান্সের আক্রমণভাগের সঙ্গে মরক্কোর রক্ষণভাগের।
ম্যাচের ফলাফল জানা যাবে ম্যাচ শেষেই, তবে তার আগে কাগজে কলমে দুদলের সামর্থ্য ও সাম্প্রতিক ফর্মের আলোকে ভবিষ্যৎবাণী নিয়ে হাজির আমরা। পাশাপাশি দুই দলের সম্ভাব্য একাদশ, ফর্মেশনও তুলে ধরা হলো ডেইলি স্টারের পাঠকদের জন্য-
কখন?
বুধবার, ১৪ ডিসেম্বর, বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত ১টা
কোথায়?
আল বাইত স্টেডিয়াম, আল খোর
টিম নিউজ
মহাগুরুত্বপূর্ণ সেমিফাইনাল ম্যাচের আগে মরক্কান শিবিরে দুশ্চিন্তার নাম ইনজুরি। রক্ষণভাগের অন্যতম প্রধান দুই সদস্য রোমান সাইস ও নায়েফ আগুয়ের্ড ভুগছেন চোটে। তবে নকআউট ম্যাচ হওয়ায় ঝুঁকি নিয়েই তাদের খেলিয়ে দিতে পারেন ওয়ালিদ রেগরাগি। পর্তুগালের বিপক্ষে লাল কার্ড দেখায় খেলতে পারবেন না ওয়ালিদ সেদিরাও।
ফরাসি শিবিরে অবশ্য এমন কোনো কিছু নিয়ে মাথা ঘামাতে হচ্ছে না ফ্রান্স কোচ দেশমকে। ফাইনাল নিশ্চিতের লড়াইয়ে দলের সব খেলোয়াড়কেই পাচ্ছেন তিনি। যদিও গুঞ্জন রয়েছে চোটে পড়েছেন ডিফেন্ডার ডাওট উপমেকানো ও আদ্রিয়েন রাবিও। তবে অফিশিয়াল কোনো বিবৃতি পাওয়া যায়নি।
নজরে থাকবেন যারা
চলতি আসরে এখন পর্যন্ত মরক্কোর জালে গোল দিতে পারেনি কোন প্রতিপক্ষ। একটি গোল যা হজম করেছে সেটা এসেছে আত্মঘাতী থেকে। তাই এই ম্যাচেও তাদের রক্ষণের দিকেই চেয়ে থাকবেন আরব ভক্তরা। পিএসজি তারকা আশরাফ হাকিমিকে দিতে হবে সামনে থেকে নেতৃত্ব। এছাড়া আক্রমণভাগে হাকিম জিয়েশকে থাকতে হবে নিজের সেরা ছন্দে। সোফিয়ান বোফাল ও ইউসেফ এন-নেসিরিকে ফিনিশিংয়ে হতে হবে নিখুঁত।
ফরাসিদের ফাইনাল যাত্রা অনেকাংশে নির্ভর করবে কিলিয়ান এমবাপের জ্বলে ওঠার ওপর। ফর্মে থাকা এই ফরোয়ার্ড এই ম্যাচেও এগিয়ে নেবেন দলকে এমনটাই থাকবে ভক্তদের প্রত্যাশা। পিএসজি ফরোয়ার্ড তার গতিময় ড্রিবলিং ছন্দ খুঁজে পেলে বড় বিপদে পড়তে পারে মরক্কো। অলিভিয়ের জিরুদকেও ধরে রাখতে হবে ফিনিশিং নৈপুণ্য, বার্সেলোনা তারকা দেম্বেলেকেও যোগাতে হবে সমর্থন।
সম্ভাব্য লাইন আপ
মরক্কো: (৪-৩-৩) ইয়াসিন বুনো (গোলরক্ষক), জাওয়াদ এল ইয়ামিক, আশরাফ হাকিমি, আশরাফ দারি, ইয়াহিয়া আত্তিয়াত আল্লাহ, সোফিয়ান আমরাবাত, সেলিম আমাল্লাহ, আজজেদিন ওনাহি, সোফিয়ান বোফাল, ইউসেফ এন-নেসিরি ও হাকিম জিয়েশ।
ফ্রান্স: (৪-২-৩-১) হুগো লরিস (গোলরক্ষক), জুলস কুন্দে, থিও হার্নান্দেজ, রাফায়েল ভারানে, ডাওট উপমেকানো, অহেলিয়া চুয়ামেনি, আদ্রিয়েন রাবিও, উসমানে দেম্বেলে, আঁতোয়া গ্রিজম্যান, কিলিয়ান এমবাপে ও অলিভিয়ের জিরুদ
প্রেডিকশন
শক্তির বিচারের ফরাসিরা যোজন যোজন এগিয়ে থাকলেও মরক্কোও ফেলে দেওয়ার মতো দল নয়। চলতি আসরে ইতোমধ্যে তারা একাধিকবার ঘটিয়েছে অঘটন। ফলে আরব বিশ্বকে গর্বিত করতে সর্বোচ্চ দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে তারা, বলাই বাহুল্য। তবে ফ্রান্স নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী খেলতে পারলে সাফল্য আসবে তাদের দিকেই।
সম্ভাব্য স্কোর:
মরক্কো ০-২ ফ্রান্স
ম্যাচ ফ্যাক্টস
১. এখন পর্যন্ত পাঁচবার মুখোমুখি হয়েছে মরক্কো ও ফ্রান্স। তাতে একবারও হারেনি ফরাসিরা। ২০০৭ সালে প্যারিসে সর্বশেষ দেখায় ২-২ গোলে ড্র করেছিল দুই দল।
২. চলতি আসরে পাঁচ ম্যাচে পাঁচ গোল করে লিওনেল মেসির সঙ্গে যৌথভাবে সর্বোচ্চ গোলদাতাদের তালিকার শীর্ষে অবস্থান করছেন এমবাপে। মাত্র ২৩ বছর বয়সেই সর্বোচ্চ মর্যাদার আসর বিশ্বকাপে ১২ ম্যাচ খেলে নয় গোলের মালিক ফরাসি তরুণ তুর্কি।
৩. মরক্কানদের হারাতে পারলে ২০০২ সালের পর প্রথম দল হিসেবে টানা দুটি বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলার হাতছানি থাকবে ফ্রান্সের সামনে।
৪. প্রথম আরব ও আফ্রিকান দেশ হিসেবে বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলছে মরক্কো। সবমিলিয়ে সেমি-ফাইনালে খেলা ২৫তম দল। প্রথম আরব ম্যানেজার হিসেবে কোন দলকে ফুটবলের মহাযজ্ঞের সেমিফাইনাল পর্যন্ত নিয়ে গিয়ে রেকর্ড গড়েছেন ওয়ালিদ রেগরাগিও।
৫. কাতার বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত কোন প্রতিপক্ষ দলের কাছে গোল হজম করেনি মরক্কো। কানাডার বিপক্ষে তাদের হজম করা গোলটি ছিল নায়েফ আগুয়ের্ডের দেওয়া আত্মঘাতী গোল।
৬. চলমান বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ১৯বার প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়কে ট্যাকেল করেছেন হাকিমি। সবচেয়ে বেশি সাফল্যও ধরা দিয়েছে তার হাতে, ১৫ বার প্রতিপক্ষের পা থেকে বল কেড়ে নিতে সক্ষম হয়েছেন তিনি।
৭. ১৯৫৮, ১৯৮২ ও ১৯৮৬ সালে নিজেদের খেলা প্রথম তিনটি বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল থেকেই বিদায় নিয়েছিল ফ্রান্স। তবে ১৯৯৮, ২০০৬ ও ২০১৮ সালে এই পর্বের ম্যাচ সফলভাবে জিতে ফাইনালে পা রাখে তারা।
৮. বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত একটি ম্যাচেও ক্লিন শিট (কোন গোল হজম না করা) রাখতে পারেনি ফ্রান্স। জুন থেকে এখন পর্যন্ত খেলা ১১ টি ম্যাচে মাত্র একবারই এই কৃতিত্ব দেখাতে সক্ষম হয়েছিল দেশমের শিষ্যরা।
Comments