ডেনিশদের হারিয়েই ১৬ বছর পর দ্বিতীয় রাউন্ডে অস্ট্রেলিয়া
এডুকেশন সিটি স্টেডিয়াম থেকে তখন সংবাদটা মাত্র আসে, তিউনিসিয়ার বিপক্ষে পিছিয়ে পড়েছে ফরাসিরা। অর্থাৎ নকআউট পর্বে উঠতে তখন জয়ের বিকল্প নেই অস্ট্রেলিয়ার। হয়তো তাতেই জ্বলে ওঠে দলটি। দুই মিনিট না যেতেই আদায় করে নেয় গোল। যে লিড শেষ পর্যন্ত ধরে রেখে ডেনমার্ককে হারিয়েই ১৬ বছর পর শেষ ষোলোতে নাম লেখাল সকারুরা।
বুধবার আল ওয়াকরাহর আল জানোব স্টেডিয়ামে ফিফা বিশ্বকাপের 'ডি' গ্রুপের ম্যাচে ডেনমার্ককে ১-০ গোলের ব্যবধানে হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। ম্যাচের একমাত্র গোলটি করেন ম্যাথিউ লাকি। ফ্রান্সের সমান দুটি জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠে অস্ট্রেলিয়া। তবে গোল ব্যবধানে পিছিয়ে থাকায় গ্রুপে দ্বিতীয় হতে হয় তাদের। সবশেষ ২০০৬ সালে নকআউট পর্বে খেলেছিল অস্ট্রেলিয়া।
একই সময়ে অনুষ্ঠিত এই গ্রুপের অপর ম্যাচে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সকে ১-০ গোলের ব্যবধানে হারিয়ে চমক দেখায় তিউনিসিয়া। কিন্তু তারপরও লাভ হয়নি দলটির। কারণ তিন ম্যাচে তাদের সংগ্রহ ৪ পয়েন্ট। তিন ম্যাচে দুটি ড্রয়ে ২ পয়েন্ট পেয়ে তলানিতে থেকে আসর থেকে বিদায় নেয় ডেনিশরা।
বিশ্বকাপে এ নিয়ে টানা ছয়টি ম্যাচ হারল ডেনমার্ক। অথচ সাম্প্রতিক সময়ে দারুণ ছন্দে ছিল দলটি। ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের পর বাছাই পর্ব ও নেশন্স লিগেও দুর্দান্ত খেলেছিল দলটি। কিন্তু বিশ্বমঞ্চে এসে ছন্দ হারায় দলটি।
তবে মাঝমাঠের আধিপত্য রেখেই খেলছিল ডেনিশরা। ৬৯ শতাংশ সময় বল দখলে ছিল তাদেরই। শটও নেয় ১৩টি, যার ৩টি ছিল লক্ষ্যে। অন্যদিকে ৮টি শট নিয়ে ৪টি লক্ষ্যে রাখে অস্ট্রেলিয়া।
নিজেদের রক্ষণ জমাট রেখে পাল্টা আক্রমণেই খেলতে থাকে অস্ট্রেলিয়া। ৬০তম মিনিটে সেভাবেই গোলটি পায় তারা। পাল্টা আক্রমণ থেকে রিলে ম্যাকগ্রির বাড়ানো বল থেকে এক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে অসাধারণ এক কোণাকোণি শটে লক্ষ্যভেদ করেন লাকি।
তবে গোল করার মতো দারুণ কিছু সুযোগ ছিল ডেনিশদের। ম্যাচের দশম মিনিটে ফাঁকায় বল পাওয়া ইয়াস্পার লিন্ডস্টর্মকে দারুণ এক ট্যাকল করে কোনো বিপদ হতে দেননি এক অস্ট্রেলিয়ান ডিফেন্ডার। পরের মিনিটে ম্যাথিয়াস ইয়ানসেন জোরালো শট কর্নারের বিনিময়ে ঠেকান অস্ট্রেলিয়ান গোলরক্ষক ম্যাট রায়ান।
১৯তম মিনিটে বাঁ প্রান্ত থেকে বল নিয়ে ডি-বক্সে থাকা মার্টিন ব্র্যাথওয়েটকে কাটব্যাক করতে চেয়েছিলেন মাহলে। তবে অস্ট্রেলিয়ান ডিফেন্ডার হ্যারি সাউটারের পায়ে লেগে দিক বদলে গোলের দিকেই যাচ্ছিল। তবে কোনোমতে পা দিয়ে তার শট ঠেকান গোলরক্ষক রায়ান।
তিন মিনিট পর অস্ট্রেলিয়ান মিডফিল্ডার রিলে ম্যাকগ্রির দুর্বল ভলি ধরে নিতে কোনো বেগ পেতে হয়নি ডেনিশ গোলরক্ষক ক্যাস্পার স্মাইকেলের। এর তিন মিনিট পর ইয়ানসেনের সঙ্গে দেওয়া নেওয়া করে ফাঁকায় ভালো সুযোগ পেয়েছিলেন স্কভ ওলসেন। তবে তার শট হরতে তেমন সমস্যা হয়নি রায়ানের।
২৯তম মিনিটে বাঁ প্রান্ত থেকে ব্র্যাথওয়েটের কাটব্যাক থেকে ক্রিস্তিয়ান এরিকসেনের লক্ষ্যে থাকেনি। ১২ মিনিট পর ডি-বক্সের বাইরে থেকে চেষ্টা চালিয়েছিলেন মিচেল ডিউক। তবে শটে তেমন জোর না থাকায় সহজেই লুফে নেন গোলরক্ষক স্মাইকেল।
দ্বিতীয়ার্ধের তৃতীয় মিনিটে ম্যাকগ্রির কাটব্যাক থেকে জ্যাক সন আরভিনের শট লক্ষ্যে থাকেনি। চার মিনিট পর ওলসেনের শট ব্লক না করলে বিপদে পড়তে পারতো অস্ট্রেলিয়া। ৭১তম মিনিটে পেনাল্টির বাঁশি বাজিয়েছিলেন রেফারি। তবে ভাগ্য সঙ্গেই ছিল সকারুদের। ক্যাস্পার ডলবার্গ অফসাইডে থাকায় বেঁচে যায় অস্ট্রেলিয়া।
৮৭তম মিনিটে একেবারে ফাঁকায় থাকা ওলসেনের শট এক অস্ট্রেলিয়ান ডিফেন্ডার ব্লক করে বিপদমুক্ত করেন। তবে আলগা বলে সুযোগ ছিল আলেকজান্ডার বাহরও। তবে তার শট লক্ষ্যে না থাকলে হতাশ বাড়ে ডেনিশদের। ম্যাচের যোগ করা সময়েও ভালো সুযোগ ছিল। কিন্তু ক্রিস্তেনসেনরা তা কাজে লাগাতে না পারলে হার নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় তাদের।
Comments