উত্তরা-মতিঝিল মেট্রোরেলে যাত্রী কমেছে বাসে

উত্তরা-মতিঝিল মেট্রো
যাত্রীবাহী মেট্রোরেলের একটি কামরা। ভিড়ের সময় যানজট এড়াতে অনেকেই মেট্রোরেলে যাতায়াত করতে পছন্দ করেন। ছবিটি গতকাল সকাল পৌনে ৮টার দিকে তোলা। ছবি: প্রবীর দাস/ স্টার

উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত সারাদিন মেট্রো চলাচল শুরুর পর থেকে যাত্রী কমে যাচ্ছে ওই রুটের বাসগুলোতে।

অনেক বাস মালিক ও পরিবহন শ্রমিকরা জানিয়েছেন, লোকসান গুনছেন তারা।

গত বছরের নভেম্বর থেকে উত্তরা-মতিঝিল রুটে মেট্রোরেল চালু হয়। তবে সকাল ৭টা ১০ মিনিট থেকে সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত মেট্রোরেলের সেবা পাওয়া যেত। গত ২০ জানুয়ারি থেকে সময় বাড়িয়ে রাত ৮টা ৪০ মিনিট করা হয়।

'সারাদিন ট্রেন চলাচল শুরুর আগ পর্যন্ত আমাদের ব্যবসায় মেট্রোর তেমন কোনো ছিল না। কিন্তু এখন আমাদের লোকসান হচ্ছে,' বলেন বিকল্প পরিবহনের একটি বাসের মালিক মাকসুদুর রহমান।

মতিঝিল-মিরপুর-১২ রুটে ৩৫টি বাস চলাচল করে এই পরিবহনের। বিকল্প গত নভেম্বর থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত রুট সম্প্রসারণ করে এই আশায় যে তাদের ব্যবসায় যাতে কোনো প্রভাব না পড়ে।

গতকাল কোম্পানিটির মাত্র ২৭টি বাস চলাচল করে, বাকিগুলো পার্কিং করে রাখা হয়।

সকাল ৯টার দিকে সচিবালয় মেট্রোরেল স্টেশন থেকে বের হওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে যাত্রীরা। বাস মালিকরা জানান, গত ২০ জানুয়ারি থেকে মেট্রোরেল পুরোদমে চলাচল শুরু হওয়ার পর উত্তরা থেকে মতিঝিল রুটে যাত্রী হারিয়েছেন তারা। ছবি: প্রবীর দাস/ স্টার

মাকসুদুর জানান, সাপ্তাহিক কাজের দিন সন্ধ্যায় তার বাস মতিঝিল থেকে মিরপুর-১২ পর্যন্ত গেলে প্রতিবার দেড় হাজার টাকার বেশি আয় হতো। এখন মাত্র ১১শ থেকে ১৩শ টাকা বা তারও কম আয় হয়।

মাকসুদুর জানান, ২০১৯ সালে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তিনি বাসটি কিনেছিলেন।

ঋণ পরিশোধের জন্য তিনি এখন অন্য রুটে বাস চালাবেন কিনা তা নিয়ে ভাবছেন।

আজিমপুর-মিরপুর-১২ রুটে চলাচলকারী মিরপুর সুপার লিংকের চারটি বাসের মালিক মোহাম্মদ জসিম বলেন, মেট্রোরেলের প্রভাব অকল্পনীয়।

সকালে ব্যস্ত সময়ে প্রতিটি বাস মিরপুর থেকে আজিমপুর গেলে তার আয় হতো দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। এখন তা কমে ১২০০-১৪০০ টাকায় নেমে এসেছে।

তিনি আরও জানান, সম্প্রতি মিরপুর সুপার লিংক বাস মালিকরা এই রুটে ৫০টির পরিবর্তে ৩০টি বাস চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

মাওয়া থেকে মিরপুর-১২ রুটে চলাচলকারী স্বাধীন এক্সপ্রেসের হেড সুপারভাইজার জাহিদ হোসেন জানান, তার ক্রেতাদের প্রায় অর্ধেকই পল্লবী থেকে গুলিস্তানে যাতায়াতকারী। কিন্তু এখন সেই হার নেমে এসেছে প্রায় ১০ ভাগে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন ও বিহঙ্গ পরিবহনের কর্মচারীরাও তাদের ব্যবসার একই হিসাব দিয়েছেন।

মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন প্রায় আড়াই লাখ যাত্রী এই পরিষেবা নিচ্ছেন। সকালে পিক আওয়ারে প্রতিটি ট্রেনে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ১৮০০-২০০০ জন যাতায়াত করে। এর প্রভাব পড়েছে বাস ব্যবসায়।

পল্লবী থেকে মতিঝিলে যাতায়াত করা ৪২ বছর বয়সী ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলম বলেন, মেট্রো সার্ভিস তাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে কাটানোর যন্ত্রণা থেকে বাঁচিয়েছে।

তিনি বলেন, 'কখনও কখনও আমার ১৪ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে তিন ঘণ্টা লাগত। এখন সময় লাগে মাত্র ৩০ মিনিট।'

বিশ্বব্যাংকের ২০১৭ সালের এক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ শহর ঢাকায় যানজটের কারণে প্রতিদিন ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২২ সালের ডিসেম্বরে দেশের প্রথম মেট্রোরেলের উত্তরা উত্তর-আগারগাঁও সেকশন উদ্বোধন করেন।

Comments

The Daily Star  | English

$14b a year lost to capital flight during AL years

Bangladesh has lost around $14 billion a year on average to capital flight during the Awami League’s 15-year tenure, according to the draft report of the committee preparing a white paper on the economy.

12h ago