মরক্কোকে হারিয়ে বিশ্বকাপে তৃতীয় স্থান পেল ক্রোয়েশিয়া
শুরুতেই পিছিয়ে পড়ার ধাক্কা সামলে দ্রুত ঘুরে দাঁড়াল কাতার বিশ্বকাপের চমক মরক্কো। তবে বিরতির আগে ফের লিড নিল গত আসরের রানার্সআপ ক্রোয়েশিয়া। ব্যবধান আর বাড়াতে না পারলেও সেটা তারা ধরে রাখল শেষ বাঁশি পর্যন্ত। একইসঙ্গে নিজেদের জালেও দলটি ফের ঢুকতে দিল না বল। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে ঠাসা ম্যাচ জিতে জ্লাৎকো দালিচের শিষ্যরা পেল তৃতীয় স্থান।
শনিবার খলিফা আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে স্থান নির্ধারণী লড়াইয়ে মরক্কোকে ২-১ গোলে হারিয়েছে ক্রোয়েশিয়া। তাদের পক্ষে লক্ষ্যভেদ করে ইয়োসকো ভারদিওল ও মিস্লাভ অরসিচ। ইতিহাস গড়ে প্রথম আফ্রিকান দল হিসেবে বিশ্বকাপের শেষ চারে জায়গা করে নেওয়া কোচ ওয়ালিদ রেগ্রাগির দলের একমাত্র গোলদাতা আশরাফ দারি। তাদেরকে সন্তুষ্ট থাকতে হলো চতুর্থ স্থান নিয়ে।
১৯৯৮ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপের মঞ্চে গিয়েই তৃতীয় হয়ে চমক দেখিয়েছিল ক্রোয়েশিয়া। ২৪ বছরের ব্যবধানে আরও একবার সেই ফল ছুঁয়ে ফেলল তারা। এতে বিশ্বকাপে রিয়াল মাদ্রিদ কিংবদন্তি ও ক্রোয়াট অধিনায়ক লুকা মদ্রিচের শেষটা হলো রঙিন।
গ্রুপ পর্বেও দেখা হয়েছিল ক্রোয়েশিয়া ও মরক্কোর। ওই ম্যাচ শেষ হয়েছিল গোলশূন্যভাবে। এবার গোলের পাশাপাশি কমতি ছিল না উত্তেজনার।
সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনার কাছে ধরাশায়ী হওয়া ক্রোয়েশিয়া এই ম্যাচে এগিয়ে যেতে সময় নেয়নি। সপ্তম মিনিটে মদ্রিচের ফ্রি-কিকে ফাঁকায় বল পান ইভান পেরিসিচ। তিনি হেডে করে তা বাড়ান ছয় গজ বক্সের সামনে। ছুটে গিয়ে এবার ডাইভিং হেডে জাল খুঁজে নেন ডিফেন্ডার ভারদিওল।
বেলজিয়াম, স্পেন ও পর্তুগালকে হারিয়ে সেমিতে ওঠা মরক্কো গোল শোধ করে দুই মিনিটের মধ্যেই। ডান দিক থেকে হাকিম জিয়েশের ফ্রি-কিক বিপদমুক্ত করতে গিয়ে উল্টো বক্সের মধ্যে বিপজ্জনক জায়গায় পাঠান লভরো মাইয়ের। সুযোগ কাজে লাগিয়ে বলে মাথা ছুঁইয়ে নিশানা ভেদ করেন ডিফেন্ডার দারি।
২৪তম মিনিটে জোড়া সেভে দলকে বাঁচান মরক্কান গোলরক্ষক ইয়াসিন বোনো। মদ্রিচের নিচু শট রুখে দেওয়ার পর পেরিসিচকেও আক্ষেপে পোড়ান তিনি। চার মিনিট পর জিয়েশ ও আশরাফি হাকিমির বোঝাপড়ায় আক্রমণে ওঠা মরক্কো। গোল হতেও পারত। তবে হাকিমির ক্রসের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন সোফিয়ান বৌফাল। তিনি পারেননি বলে হেড করতে।
আক্রমণের ঝাপটা সামলাতে বেশ কিছুক্ষণ বেগ পেতে হয় ক্রোয়াটদের। তবে ৪২তম মিনিটে স্ট্রাইকার অরসিচের একক নৈপুণ্যে এগিয়ে যায় তারা। মার্কো লিভাইয়ার কাছ থেকে ডি-বক্সের বাম দিকে বল পেয়ে যান তিনি। প্রথম ছোঁয়ায় নেন বাঁকানো শট। বল দূরের পোস্টের ভেতরের দিকে লেগে গোললাইন পেরিয়ে যায়।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে তেড়েফুঁড়ে আক্রমণে ওঠে ক্রোয়েশিয়া। দালিচের দল অবশ্য গোলমুখে গিয়েই তালগোল পাকিয়ে ফেলে। বোনোকে পরীক্ষায় ফেলতে ঠিকঠাক শটই নিতে পারছিল না তারা। বিপরীতে, মরক্কো হারিয়ে ফেলে ধার।
৭৪ ও ৭৫তম মিনিটে দুই প্রান্তে পরপর দুটি পেনাল্টির জোরালো আবেদন ওঠে। প্রথমে ক্রোয়েশিয়ার ভারদিওল ট্যাকলের শিকার হন, পরে মরক্কোর সোফিয়ান আমরাবাত। তবে রেফারির দিক থেকে পাওয়া যায়নি কোনো সাড়া। ভিএআরও স্পট-কিকের সিদ্ধান্ত দেওয়ার মতো কিছু খুঁজে পায়নি।
ওই দুই ঘটনার মাঝে দারুণ এক সুযোগ পেয়েছিলেন ইউসেফ এন-নেসিরি। ভারদিওল বল বিপদমুক্ত করতে গেলে দূরের পোস্টে তা পেয়ে যান তিনি। কিন্তু অসাধারণ কায়দায় তার শট রুখে স্কোরলাইনে সমতা আসতে দেননি ক্রোয়াট গোলরক্ষক দমিনিক লিভাকোভিচ।
৮৭তম মিনিটে ইয়োসিপ স্তানিসিচের পাস ডি-বক্সে পেয়ে কোণাকুণি শট নেন মাতেও কোভাচিচ। তবে বল অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে টিকে থাকে মরক্কোর ম্যাচে ফেরার স্বপ্ন। পরে সুযোগ তৈরি হলেও সেটা পূর্ণতা পায়নি। যোগ করা ছয় মিনিটের একেবারে শেষ মুহূর্তে বাঁ দিক থেকে ক্রস করেন ইয়াহিয়া আতিয়াত আল্লাহ। এন-নেসিরির জোরালো হেড উপরের দিকে জালে গিয়ে পড়ে। এর পরপরই বাজে ম্যাচ শেষের বাঁশি।
Comments