আমরাই চ্যাম্পিয়ন: হেরেও গর্বিত মরক্কোর সমর্থকরা
বিশ্বকাপে এবার শুরু থেকেই দুর্দান্ত মরক্কো। একের পর এক অসাধারণ ফুটবল শৈলী উপহার দিয়ে পৌঁছে যায় সেমি-ফাইনালে। এ স্বপ্নযাত্রায় তারা হারায় বেলজিয়াম, স্পেন ও পর্তুগালের মতো শক্তিশালী দলগুলোকে। কিন্তু সেমিতে তারা পেরে ওঠেনি ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের সঙ্গে। কিন্তু তারপরও ইতিহাসটা তারা নিজ হাতে লিখেই ফিরছে।
আল খোরের আল বাইত স্টেডিয়ামে আগের দিন দিন দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ফ্রান্সের কাছে ০-২ গোলের ব্যবধানে হেরে যায় মরক্কো। ম্যাচ শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যেই থিও হার্নান্দেজ এগিয়ে দেন ফরাসিদের। এরপর আপ্রাণ চেষ্টা করেও গোল শোধ দিতে পারেনি মরক্কানরা। বিরতির পর মিনিটে উল্টো র্যান্ডাল কোলো মুয়ানির গোলে ব্যবধান হয় দ্বিগুণ। হাল না ছেড়ে আক্রমণের ধারা অব্যাহত রাখে অ্যাটলাসের সিংহরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর সাফল্য ধরা দেয়নি তাদের।
তবে প্রথম আফ্রিকান দেশ হিসেবে বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে ওঠে মরক্কো। ঐতিহাসিক এ অর্জনটা আরেক ধাপ এগিয়ে ফাইনাল পর্যন্ত নিয়ে যেতে চেয়েছিল দলটি। কিন্তু একজন ফিনিশারের অভাবেই হারে দলটি। ম্যাচে ফ্রান্সের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সমান তালে খেলেছে দলটি। মাঝমাঠের দখল তো বেশি ছিল তাদেরই। ফ্রান্সের ১৪টি শটের বিপরীতে ১৩টি শট নেয় মরক্কানরা। লক্ষ্যে শট দুই দলের সমান ৩টি। যেখানে ফরাসিরা দুইবার গোল পেলেও পাওয়া হয়নি মরক্কোর। এরমধ্যে আবার বারপোস্টও বাধা হয় একবার।
এমন লড়াই শেষে ফাইনালে উঠতে না পারলেও গর্বিত দেশটির সমর্থকরা। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরার সঙ্গে আলাপকালীন সময়ে ফাতিমা নামে এক সমর্থক বলেন, 'এটাই তো ফুটবল। আমাদের দল নিয়ে আমরা সত্যিই গর্বিত। মরক্কোর ফুটবল এখন পুরোপুরি বদলে গেছে। আমরা হারিনি, প্রশ্নই আসে না। আমরাই চ্যাম্পিয়ন।'
স্টেডিয়ামে তো বটেই মাঠ ছাড়ার সময়ও 'মরক্কো', 'মরক্কো', 'এগিয়ে যাও', 'এগিয়ে যাও' চিৎকারে মাততে থাকেন সমর্থকরা। আমিনী নামের আরেক মরোক্কান সমর্থক বলেন, 'গর্বিত, গর্বিত আর গর্বিত- এই মুহূর্তে আমি এমন টাই অনুভব করছি। তারা ইতিহাস রচনা করেছে। এই দলটা এখনও তরুণ এবং পরের বিশ্বকাপের জন্য উচ্চবিলাসী। আমরা এখনই হাল ছাড়ছি না। এটা একটা মানসিকতার পরিবর্তন, আমাদের পুরো দল, খেলোয়াড় এবং দেশের এখন জয়ের মানসিকতা তৈরি হয়েছে। এটা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেই বদলে রেখে দেবে।'
মরক্কোর হারে কেঁদে বুক ভাসিয়েছেন ইউস্রা নামের আরেক সমর্থক, 'আমি আবেগাক্রান্ত হয়ে পড়েছি , তাই বলে আমি কিন্তু হতাশ নই। এখন পর্যন্ত আমাদের যাত্রাটা ছিল দারুণ। আমরা দারুণ খুশি এবং অনেক গর্বিত। ওরা ইতিহাস রচনা করেছে। ওরা লড়াকু। আমরা ওদের সব সময় সমর্থন দিয়ে যাব, যাই কিছু হোক না কেন।'
ফ্রান্সে জন্ম নেওয়া আরেক মরক্কান সমর্থক শাইমার জন্য ছিল মিশ্র অনুভূতি, 'আমার মা-বাবা মরক্কোর এবং আমি রাতে মরক্কোর পক্ষেই ছিলাম। তারা দারুণ পারফরম্যান্স করেছে। তারা দেখিয়েছে যে, আফ্রিকার একটি দলও ভালো কিছু রজন করতে পারে।'
ফ্রান্সের কাছে হারলেও মরক্কোর যাত্রা শেষ হয়ে যায়নি। আগামী শনিবার তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার মুখোমুখি হবে তারা। জিততে চাইলেও ম্যাচটি নিছক আনুষ্ঠানিকতা রক্ষার হওয়ায় কোনো খেদ নেয় তাদের। লামিয়া নামের এক সমর্থক বলেন, 'আমরা অ্যাটলাস লায়নদের নিয়ে অত্যন্ত গর্বিত। কেউ স্বপ্নেও ভাবেনি যে আমাদের দল বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠবে। এখন আমরা চাই বিশ্বকাপের তৃতীয় স্থান জয় করে নিতে। তবে যদি সেটি নাও হয়, তাতেও সমস্যা নেই। আমরা তো ইতিমধ্যেই কল্পনার চেয়েও বেশি পেয়ে আছি।'
Comments