ছাত্রাবাসের জন্য দান করা জমিতে আ. লীগের কার্যালয়
কৃষক দীনেশ চন্দ্র বর্মণ তার বাবার নামে ছাত্রাবাস নির্মাণের জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষকে জমি দান করলেও সেই জমি দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়সহ বেশ কিছু স্থাপনা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীনেশ চন্দ্র বর্মণ তার বাবার নামে ছাত্রাবাস নির্মাণের জন্য ১৯৯৯ সালে লালমনিরহাটের আদিতমারী সরকারি কলেজকে ১৮ শতাংশ জমি দান করেছিলেন। ওই জমিতে 'গিরীশ চন্দ্র বর্মণ ছাত্রাবাস' নামে একটি সাইনবোর্ডও টাঙানো হয়েছিল। কিন্তু সেখানে ছাত্রাবাস গড়ে উঠেনি। দান করা জমিতে গড়ে উঠেছে আদিতমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়সহ আরও কয়েকটি স্থাপনা।
লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কের পাশে আদিতমারী উপজেলা শহরের ভাদাই এলাকায় প্রায় ২ কোটি টাকা মূল্যের এই জমি উদ্ধারে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কলেজ কর্তৃপক্ষ।
জমিদাতা কৃষক দীনেশ চন্দ্র বর্মণ আদিতমারী উপজেলার কমলাবাড়ী ইউনিয়নের চন্দনপাট গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবা দীনেশ চন্দ্র বর্মণ ২০০০ সালে মারা যান। বাবা জীবিত থাকা অবস্থায় তার সম্মতিতে দীনেশ চন্দ্র বর্মণ কলেজকে রেজিস্ট্রি করে জমি দান করেন।
এ বিষয়ে দীনেশ চন্দ্র বর্মণ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, '২০০০ সালে আমার বাবা মৃত্যুবরণ করলে কলেজে দান করা জমিতে আওয়ামী লীগ অফিসসহ কয়েকটি স্থাপনা গড়ে উঠে। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ ওই স্থানে ছাত্রাবাস নির্মাণে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেননি।'
'আমার বাবা চেয়েছিলেন তার নামে কলেজের ছাত্রাবাস হবে। কলেজ কর্তৃপক্ষ দান করা জায়গাটি উদ্ধার করে আমার স্বর্গীয় বাবার নামে ছাত্রাবাস করবে, এটা আমার প্রত্যাশা।'
তিনি আরও বলেন, 'আমি জমি দান করেছি। এটা রক্ষা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব কলেজ কর্তৃপক্ষের।'
এ বিষয়ে আদিতমারী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আজিজার রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কলেজ ছাত্রাবাস নির্মাণের জন্য দান করা জমি উদ্ধার করতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। এক্ষেত্রে আমরা অসহায়।'
সরকারিভাবে উদ্যোগ নিয়ে জায়গাটি উদ্ধার করে ছাত্রাবাস নির্মাণের দাবি জানান তিনি।
১৯৯১ সালে স্থাপিত হয় আদিতমারী ডিগ্রি কলেজ এবং ২০১৮ সালের ৮ আগস্ট কলেজটি জাতীয়করণ করা হয়।
এ বিষয়ে আদিতমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সেই সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয়টি নির্মাণ করেছেন। এ ব্যাপারে কলেজ কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।'
স্থানীয়রা ডেইলি স্টারকে জানান, সে সময় জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও কমলাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সামছুল ইসলাম কলেজ ছাত্রাবাসের জায়গায় দলীয় কার্যালয়টি নির্মাণ করেন। ২০০৩ সালে সামছুল ইসলাম দুষ্কৃতকারীদের হাতে নিহত হওয়ার পর তার পরিবারের লোকজন দলীয় কার্যালয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন দোকান গড়ে তোলেন। বর্তমানে ওই পরিবারের লোকজনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে জায়গাটি।
এ বিষয়ে প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা সামছুল ইসলামের ছেলে ও কমলাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা মাহমুদ ওমর চিশতি ডেইলি স্টারকে জানান, তার বাবার মাধ্যমে দীনেশ চন্দ্র বর্মণ জমিটি কলেজকে দান করেছেন। এখানে দলীয় কার্যালয় নির্মাণ করতে দীনেশ চন্দ্রের কোনো বাঁধা ছিল না এবং এখনো কোনো আপত্তি নেই। প্রয়োজনে কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ৯৯ বছরের জন্য জায়গাটির লিজ নেব।'
তবে, দীনেশ চন্দ্র বর্মণ বলেন, 'আওয়ামী লীগের কার্যালয় করার জন্য আমরা জমিটি দান করিনি। আমি চাই সেখানে আমার বাবার নামে ছাত্রাবাসটি নির্মাণ করা হোক।'
কলেজের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জি আর সারোয়ার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিষয়টি লালমনিরহাট জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে। তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবগত করে উদ্যোগ নিতে পরামর্শ দিয়েছেন। এ বিষয়ে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া হবে।'
Comments