কবি সরোজ দেবের ওপর হামলায় সর্বজনের নিন্দা
'লিটল ম্যাগ' সম্পাদক এবং কবি সরোজ দেবের (৭৪) ওপর হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন সমাজের বিশিষ্টজনেরা। হামলার শাস্তি দাবি করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন তারা।
গত শুক্রবার গাইবান্ধা শহরের পূর্বপাড়ায় নিজ বাসভবনে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন সরোজ দেব। পরে গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বর্তমানে বাড়িতে চিকিৎসাধীন।
পুলিশ এবং স্থানীয়দের দেওয়া তথ্যমতে, গাইবান্ধা সবুজপাড়া এলাকার আলতাব হোসেনের ছেলে মো. সাজ্জাদ হোসেন (৪৫) কবির ওপর এই হামলা চালায়। সাজ্জাদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য সেবন, বিক্রি এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে গাইবান্ধা সদর থানায় একাধিক মামলা রয়েছে, বলে জানায় পুলিশ।
হামলার প্রতিবাদ এবং কবি সরোজ দেবের জীবনের নিরাপত্তার দাবিতে আগামীকাল গাইবান্ধা নাট্য এবং সাংস্কৃতিক সংস্থার চত্বরে এক প্রতিবাদী মানববন্ধনের ডাক দিয়েছে গাইবান্ধার সাহিত্য এবং সাংস্কৃতিক কর্মীরা।
গাইবান্ধা উদীচী শাখার সভাপতি জহুরুল কাইয়ূম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কবি সরোজ দেব খুব সাদাসিধে মানুষ। তার সাথে কারো বিরোধ থাকার কথা নয় । তবুও তিনি সন্ত্রাসী হামলার শিকার হলেন। আমরা হামলাকারীর শাস্তি চাই। তার জীবনের নিরাপত্তা চাই।'
সরোজ দেব প্রান্তিক মানুষের কবি। তার অনেকগুলো কাব্যগ্রন্থ আছে যেগুলো সারা দেশেই প্রশংসা কুড়িয়েছে। এছাড়া "শব্দ" নামের একটি লিটল ম্যাগাজিন তিনি দীর্ঘদিন ধরে সম্পাদনা করে আসছেন, বলেন কাইয়ূম।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক (বিভাগীয় প্রধান), নদী রক্ষাবিষয়ক সংগঠন রিভারাইন পিপলের পরিচালক এবং কলামিস্ট তুহিন ওয়াদুদ তার ফেসবুকে পোস্টে লিখেছেন, 'সরোজ দেবের ওপর হামলাকারীদের শাস্তি চাই। কবি সরোজ দেব। বাড়ি গাইবান্ধা। তিনি ছয়টি কাব্য গ্রন্থ লিখেছেন। "শব্দ" নামের একটি ছোটকাগজ সম্পাদনা করেন। ৫৫টি সংখ্যা প্রকাশ করেছেন। জীবনী গ্রন্থ লিখেছেন। দাদা ক্ষত-বিক্ষত হাত নিয়ে পড়ে আছেন। দাদা সুস্থ হয়ে উঠুন। নিশ্চয়ই হামলাকারীদের শাস্তি হবে। হতেই হবে।'
কে, কেন তার ওপর হামলা করেছে জানতে চাইলে কবি সরোজ দেব দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত শুক্রবার সকালে আমার বাড়িতে আমার ছেলে ছিল না। এই সময় পাশের এলাকার এক সন্ত্রাসী, মাদকসেবী যুবক তার কাছে এসে বলে সে আমার ছেলের কাছে টাকা পায়। আমি যখন বলি ছেলে তো বাড়িতে নেই তখন সাজ্জাদ নামের সেই যুবক আমাকে মাটিতে ফেলে দেয়। আমি মারতে নিষেধ করলেও সে শোনেনি। পরে লোহার রড দিয়ে আমার মাথায় আঘাত করতে চাইলে আমি হাত দিয়ে সেটি আটকাই। পরে আমার হাত ফেটে রক্ত ঝরতে থাকে। হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে দুপুরে থানায় গেলে পুলিশ প্রথমে মামলা নিতে চায়নি।'
পরে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের চাপে পুলিশ মামলা নেয়, বলে জানান সরোজ দেব।
জানতে চাইলে, গাইবান্ধা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মাছুদার রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ওনার অভিযোগ তদন্ত করে মামলা দেওয়া হয়েছে এবং আসামি সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করে আজ আদালতের মাধ্যমে জেলে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ প্রথমে মামলা নিতে চায়নি কেন জানতে চাইলে ওসি বলেন এই অভিযোগ সত্য নয়।
কবি সরোজ দেব ১৯৭৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। পরে গাইবান্ধা এসে তিনি প্রান্তিক মানুষের যাপিত জীবন নিয়ে কাব্যচর্চা করতে থাকেন। এই পর্যন্ত তার কাব্য গ্রন্থের সংখ্যা আটটি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো - ধবল মেঘের দিনগুলো, অনন্ত রোদ্দুরে এসো, সুখের সৎকার, স্বপ্ন শুয়েছিল কুয়াশায় এবং সময় আমাকে হত্যার কথা বলে গেছে।
এছাড়া প্রায় ৪২ বছর ধরে তিনি 'শব্দ'সহ শতাধিক লিটল ম্যাগ সম্পাদনা করেছেন। এর বাইরে নিজের জীবনী গ্রন্থসহ আরও ১০টি প্রবন্ধ গ্রন্থের সম্পাদনা করেছেন বলে জানা যায়। রংপুর বিভাগের ৮টি জেলার তরুণ লেখকদের অনুপ্রাণিত করতে তিনি এইসব লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশ করতেন বলে জানিয়েছেন। জাতীয় পত্রিকায় কবি সরোজ দেবের জীবন এবং সাহিত্যকর্ম নিয়ে ক্রোড়পত্র প্রকাশ হয়েছে।
Comments