ঘানাকে হারিয়েও বিদায় নিল উরুগুয়ে
উরুগুয়ের মুখোমুখি হলেই ঘানা ভক্তদের মনে হানা দেয় ২০১০ বিশ্বকাপের দুঃসহ বেদনার স্মৃতি। লুইস সুয়ারেজের ইচ্ছাকৃত হ্যান্ডবলে সমতায় থাকা কোয়ার্টার ফাইনালে নিশ্চিত গোল থেকে বঞ্চিত হয়ে পরে বিদায় নিয়েছিল আফ্রিকার দলটি। এক যুগ পর কাতার বিশ্বকাপে ফের মুখোমুখি হলো দুই দল। সেখানে প্রতিশোধ নিতে পারল না ঘানা। তবে জয় পেলেও আক্ষেপ সঙ্গী হলো উরুগুয়ের। পয়েন্ট ও গোল ব্যবধান সমান হলেও গোলসংখ্যায় দক্ষিণ কোরিয়ার চেয়ে পিছিয়ে থাকায় বিদায় নিলেন এদিনসন কাভানি-লুইস সুয়ারেজরা।
শুক্রবার আল জানোব স্টেডিয়ামে 'এইচ' গ্রুপের ম্যাচে ঘানাকে ২-০ গোলে হারিয়েছে উরুগুয়ে। ম্যাচের শুরু থেকেই বলের দখল রেখে একাধিক সুযোগ তৈরি করে লাতিন আমেরিকার দলটি। তবে পেনাল্টির রূপে সুযোগ ধরা দিয়েছিল ঘানাকেও। তবে আন্দ্রে আয়েউ ব্যর্থ হন স্পট-কিক থেকে দলকে এগিয়ে নিতে। ঘানা অধিনায়ক না পারলেও জর্জিয়ান দে আরাসকেতা ঠিকই কাজে লাগান সুযোগ। প্রথমার্ধে জোড়া গোল করে এগিয়ে নেন লা সেলেস্তেদের। দ্বিতীয়ার্ধে অনেক চেষ্টা করেও জাল খুঁজে নিতে পারেনি ঘানা। একাধিক সুযোগ হাতছাড়া করে উরুগুয়েও পারেনি ব্যবধান বাড়াতে।
একই সময়ে মাঠে গড়ানো গ্রুপের অপর ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়া ২-১ ব্যবধানে পর্তুগালকে হারিয়ে চমক দেখায়। ফলে উরুগুয়ে ও কোরিয়ার পয়েন্ট দাঁড়ায় সমান ৪। দুই দলের গোল ব্যবধানও সমান (শূন্য)। ফলে গোলসংখ্যার ভিত্তিতে নির্বাচিত হয় 'এইচ' গ্রুপের দ্বিতীয় সেরা দল। তিন ম্যাচে ৪ গোল নিয়ে শেষ ষোলোর টিকিট পায় কোরিয়া। অন্যদিকে, মাত্র ২ গোল করায় ছিটকে যায় দিয়েগো আলোনসোর শিষ্যরা। তলানিতে থাকা ঘানার পয়েন্ট ৩। কোয়ারিয়ার কাছে হারলেও ৬ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে পর্তুগাল।
খেলার ১৫তম মিনিটে বাঁ প্রান্ত থেকে উরুগুয়ের বক্সে ঢুকে দুজন ডিফেন্ডারকে বোকা বানিয়ে শট চালান আয়েউ। রুখে দিলেও বিপদমুক্ত করতে পারেননি সার্জিও রোচেত। বল চলে যায় মোহাম্মদ কুদুসের পায়ে। এগিয়ে এসে দলকে বিপদমুক্ত করতে গিয়ে গোলরক্ষক রোচেতের করা চার্জে পড়ে যান আয়াক্স মিডফিল্ডার। ভিএআর দেখে রেফারি নেন পেনাল্টির সিদ্ধান্ত।
উত্তেজিত হয়ে পড়েন উরুগুয়ের ফুটবলাররা। সুয়ারেজ তো বার কয়েক দৌড়েই যান রেফারির দিকে। স্পটকিক নিতে আসেন অধিনায়ক আয়েউ। তবে তার দুর্বল চেষ্টা রুখে হুঙ্কার দেন রোচেত। ২৩তম মিনিটে গোল প্রায় পেয়ে গিয়েছিল উরুগুয়ে। দারউইন নুনেজের চিপে পরাস্ত হয়ে যান ঘানা গোলরক্ষক আতি জিগি। কিন্তু শেষ মুহূর্তে অবিশ্বাস্য এক ক্লিয়ারে বল ফিরিয়ে দলকে রক্ষা করেন মোহাম্মদ সালিসু।
তিন মিনিটে বাদে এগিয়ে যায় উরুগুয়ে। সুয়ারেজ বক্সের ভেতর থেকে শট নিলে প্রথম দফায় ফিরিয়ে দেন আতি জিগি। তবে পুরোপুরি বিপদমুক্ত করতে পারেননি বলটি। সুযোগ বুঝে গোললাইনের সামান্য বাইরে থেকে দে আরাসকেতা হেড করে বল জড়ান জালে। ৩১তম মিনিটে আবারও উল্লাসে মাতে উরুগুয়ে। ম্যাচে নিজের ও দলের দ্বিতীয় গোল পেয়ে যান দে আরাসকেতা। সুয়ারেজের দারুণ লব পাস থেকে ভলিতে জাল খুঁজে নেন এবার।
৩৪তম মিনিটে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন রদ্রিগো বেন্তানকুর, মাঠে নামেন মাতিয়াস ভেচিনো। গোল শোধ দিতে মরিয়া হয়ে একের পর এক আক্রমণ শানাতে থাকে ঘানা। সুযোগ পাওয়া মাত্র গোলের চেষ্টা চালায় উরুগুয়েও। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ফেদেরিকো ভালভার্দের ফ্রি কিকে হেড করেন হোসে মারিয়া হিমেনেজ। কিন্তু বল বেরিয়ে যায় ক্রসবারের উপর দিয়ে। পরের মিনিটে আবারও গোল হজমের ঝুঁকিতে পড়েছিল আফ্রিকানরা।
ফাকুন্দো পেলিস্ত্রিকে বলের কাছে পৌঁছনো থেকে আটকাতে গিয়ে ফেলে দেন ড্যানিয়েল আমার্টে। উরুগুয়ে ফাউলের আবেদন করলেও তাতে সাড়া দেননি রেফারি। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে আয়েউ ভাতৃদ্বয়কে (আন্দ্রে ও জর্ডান) উঠিয়ে নেন ঘানা কোচ অটো আডো। খানিক বাদে কুদুসের জোরালো শট একটুর জন্য থাকেনি লক্ষ্যে। ৫৭তম মিনিটে ঘানার বক্সে আমার্টের চার্জে পড়ে যান নুনেজ। প্রথমে উরুগুইয়ানদের পেনাল্টির আবেদনে সাড়া দেননি রেফারি। পরবর্তীতে ভিএআর দেখেও অটল থাকেন নিজের সিদ্ধান্তে।
৬৩তম মিনিটে ওসমান বুখারি একটুর জন্য পা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হন কামালদিন সুলেমানার ক্রসে। তিন মিনিট বাদে মাথিয়াস অলিভেরা ভেচিনোর সঙ্গে দারুণ ওয়ান টুতে গড়েন আক্রমণ। বক্সের ভেতর থাকা পেলিস্ত্রিকে বল বাড়ান ভেচিনো। কিন্তু ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ফরোয়ার্ড ফিনিশিংটা করতে পারেননি ঠিকমতো। দুই মিনিট বাদে সুয়ারেজকে উঠিয়ে নেন কোচ। ৭১তম মিনিটে দূরপাল্লার শট নেন কুদুস। কিন্তু সেটা ছিল না লক্ষ্যে।
৭৯তম মিনিটে অ্যান্টোইন সেমেনিওর শট একটুর জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে আক্ষেপে পোড়ে ঘানা। দুই মিনিটের মাথায় আবারও সুযোগ তৈরি করে তারা। কিন্তু কুদুসের দারুণ শট ডাইভ দিয়ে ফিরিয়ে দেন রোচেত। ৮৬তম মিনিটে বল নিয়ে দ্রুতগতিতে উরুগুয়ে বক্সে ঢুকে পড়ার মুখে ফাউলের শিকার হন সেমেনিও। ফ্রি কিক পেয়েও কাজে লাগাতে পারেনি আফ্রিকানরা।
যোগ করা সময়েও আক্রমণের ধারা অব্যাহত রাখে দুই দল। শুরুতে ঘানার দারুণ চেষ্টা ব্যর্থ করে দেয় আলানসোর শিষ্যরা। পঞ্চম মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া এক চেষ্টা রুখে দেন আতি জিগি। দুই মিনিট বাদে কাভানির ক্রস কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয় উরুগুয়ে। শেষে আবার সেমেনিওর শট রুখে দলকে বাঁচান ডিফেন্ডার সেবাস্তিয়ান কোয়াতেস। ফলে শেষ বাঁশি বাজলে দুই দলেরই সঙ্গী হয় বিষাদ।
Comments