আরেকটি ইতিহাস লিখে গ্রুপসেরা হয়ে নকআউটে জাপান

শেষ ষোলো নিশ্চিতের জটিল সমীকরণের মুখে পড়েছিল অন্যতম শিরোপাপ্রত্যাশী স্পেন ও জার্মানি। জাপান ও কোস্টারিকা কোন অঘটন ঘটালে ছিটকে পড়ার সম্ভাবনা ছিল দুই দলেরই। প্রথমার্ধে এগিয়ে থেকেও হাজিমে মরিয়াসুর শিষ্যদের বিপক্ষে এক পর্যায়ে পিছিয়ে পড়ল স্পেন। জার্মানি ম্যাচের স্মৃতি ফিরিয়ে এনে সমতা ফেরালেন রিৎসু দোয়ান, খানিক বাদেই এগিয়ে নিলেন আও তানাকা। আপ্রাণ চেষ্টা করেও গোল শোধ দিতে পারল না সাবেক চ্যাম্পিয়নরা, আরেকটি ইতিহাস লিখল এশিয়ানরা। 

বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে কাতার বিশ্বকাপের 'ই' গ্রুপের খেলায় শিরোপাপ্রত্যাশী স্পেনকে ২-১ গোলে হারিয়েছে জাপান। আল রাইয়ানের খলিফা আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে মাঠে গড়ানো ম্যাচটিতে ম্যাচের শুরুতেই আলভারো মোরাতার গোলে এগিয়ে যায় ইউরোপিয়ানরা। তবে দ্বিতীয়ার্ধে দারুণভাবে ঘরে দাঁড়ায় জাপানিরা। তিন মিনিটের ব্যবধানে গোল করেন দেওয়ান-তানাকা। এরপর বারবার আক্রমণ গড়েও সমতা ফেরাতে পারেনি স্প্যানিশরা।

জাপান যখন এগিয়ে তখন আল বাইত স্টেডিয়ামে চলমান অপর ম্যাচে জার্মানির বিপক্ষে এগিয়ে যায় কোস্টারিকা। এতে তৈরি হয় ২০১০ আসরের চ্যাম্পিয়নদের বাদ পড়ার পরিস্থিতিও। তবে শেষ পর্যন্ত ম্যাচ জিতে নেয় জার্মানি, ফলে চার পয়েন্ট নিয়ে 'ই' গ্রুপের দ্বিতীয় দল হিসেবে শেষ ষোলোতে নাম লেখায় স্পেন। সমান পয়েন্ট নিয়েও গোল ব্যবধানে পিছিয়ে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যায় হেভিওয়েট জার্মানি, অন্যদিকে ছয় পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ সেরা হয়ে নকআউটে নাম লেখায় জাপান।

ম্যাচের শুরু থেকেই বলের দখল নিয়ে খেলতে থাকে এনরিকের শিষ্যরা। স্বভাবসুলভ পাসিং ফুটবলে জাপানকে বল থেকে দূরে রাখে তারা। দ্বিতীয় মিনিটে আক্রমণ শানায় স্পেন, তবে আলভারো মোরাতার ক্রসটি ছিল লক্ষ্যহীন। পঞ্চম মিনিটে দারুণ এক প্রতি আক্রমণে যায় জাপানও। বক্সের মধ্যে এক দারুণ ক্রস এলেও তাতে পা ছোঁয়ানোর জন্য ছিলেন না ডাইজেন মায়েদা, তাকেফুসা কুবোরা।  

পরের মিনিটে নিকো উইলিয়ামসের ক্রস ত্রাস ছড়ায় মরিয়াসুর শিষ্যদের রক্ষণে। যে অল্প কয়টি সুযোগ পেয়েছে সেগুলো কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছে জাপান। অষ্টম মিনিটে গোলের দেখা পেতেও পারত এশিয়ান পরাশক্তিরা, বুসকেটসের ভুলে বল পেয়ে শট নেন জুনিয়া ইতো। কিন্তু বিধি বাম, জোরালো সেই শট লাগে সাইড নেটে।

পরের মিনিটে অলমোর ক্রস থেকে মোরাতা হেড করলেও সেটা সহজেই লুফে নেন জাপান গোলরক্ষক শুইচি গোন্ডা। প্রতিপক্ষ বক্সে বারবারই সম্ভাবনা তৈরি করতে থাকে স্প্যানিশরা। ১১ মিনিটে শেষ হয় অপেক্ষা, সিজার আজপিলিকুয়েতার দারুণ লব থেকে মোক্ষম হেডে মোরাতা খুঁজে নেন জাল। এগিয়ে যায় স্পেন।

গোল পেয়ে আরও সাবলীল হয়ে ওঠে লা ফুরিয়া রোজারা। জাপান হন্যে হয়ে বলের দখল নিতে চাইলেও পেরে উঠছিল না গাভি পেদ্রিদের সঙ্গে। ২৩ মিনিটে আবারও জাপান রক্ষণে কাঁপন ধরায় স্পেন, তবে মোরাতার শট থেকে সে যাত্রা কোন বিপদ ঘটতে দেন নি গোন্ডা। ৩৪ মিনিটে উনাই সাইমনের ভুলে প্রায় গোল হজম করে বসেছিল স্প্যানিশরা। কোনমতে বল ক্লিয়ার করেন আতলেতিক বিলবাও গোলরক্ষক।

পরের মিনিটে স্প্যানিশ বক্সে বক্সে ক্রাস ছড়ান কুবো। কিছুটা সময় পজিশন ধরে রেখে ম্যাচে ফিরতে চাইলেও পারেনি জাপান। ৩৮ মিনিটে পেদ্রিকে ফাউল করে ম্যাচের প্রথম হলুদ কার্ড কো ইতাকুরা। বিরতির বাঁশি বাজার ঠিক আগে উইলিয়ামসের শট বেরিয়ে যায় বারের সামান্য ওপর দিয়ে। পিছিয়ে থেকে ড্রেসিংরুমে ফিরে যায় জাপান।

দ্বিতীয়ার্ধে দুর্দান্ত প্রেসিং ফুটবলের নমুনা দেখায় দ্য সামুরাই ব্লুরা। স্পেনের টিকিটাকার বিপরীতে তারা মত্ত থাকে বল কাড়ার নেশায়। সফলতা ধরা দেয় দ্রুতই, ৪৮ মিনিটে বদলী রিৎসু দেওয়ান ফের দেখান জার্মানি ম্যাচের ঝলক। বল পেয়ে দারুণ ড্রিবলিংয়ে বাঁ পায়ের জোরালো শটে গোল করে ম্যাচে ফেরান জাপানকে। সাইমন ডাইভ দিয়েও ফেরাতে ব্যর্থ হন ফ্রেইবুর্গ মিডফিল্ডারের শট।

গোল পাওয়ার পরই বদলে যায় এশিয়ানদের শরীরা ভাষা ও খেলার ধরণ। চেপে ধরে তারা স্পেনকে। তিন মিনিট বাদে আবারও চমকে দেয় জাপান, স্পেনের জালে ফের বল জড়ায় তারা। ক্রস থেকে গোল করেন তানাকা। এগিয়ে যাওয়ার আনন্দ যখন বাঁধ ভাঙছিল তখনই রেফারি ভিএআরের সাহায্য নেন। রিপ্লেতে মনে হয় বল সীমারেখা অতিক্রম করার পর ক্রস করেছেন কাউরু মিতোমা, কিন্তু অন্য একটী ক্যামেরা অ্যাঙ্গেলে মনে হচ্ছিল বলের সামান্য অংশ রয়েছে দাগের ওপর।

জাপানের পক্ষে সিদ্ধান্ত দেন রেফারি, ফের উল্লাসে মারে নীল জার্সিধারীরা। সাইডলাইনে ক্ষোভে ফেটে পড়েন এনরিকে। ৫৬ মিনিটে গোলদাতা মোরাতাকে উঠিয়ে নেন তিনি, মাঠে নামেন মার্কো অ্যাসেনসিও। ৬৩ মিনিটে আবারও স্প্যানিশ রক্ষণের পরীক্ষা নেয় মরিয়াসুর শিষ্যরা ডানপ্রান্ত থেকে ক্রস এলেও সে যাত্রা ধরা দেয়নি সাফল্য। ৭০ মিনিটে আরেক বদলী তাকুমা আসানো সুযোগ হারান স্প্যানিশ বক্সে।

গোল শোধে মরিয়া স্পেন বলের দখল নিয়ে করতে থাকে একের পর এক আক্রমণ। সেগুলো রুখে দিয়ে সুযোগের অপেক্ষায় থাকে জাপানিরা। ৮৪ মিনিতে আবারও কাউন্টার অ্যাটাকে যায় তারা, দানি কারভাহালের কাছে বল না হারালে গৌরবের ভাগিদার হতে পারতেন জুনিয়া ইতোও। চার মিনিট বাদে কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে দুইবার গোল হজমের হাত থেকে রক্ষা পায় জাপান। অ্যাসেনসিও ও অলমোর শট থেকে দলকে বিপদমুক্ত করেন গোন্ডা।

অপর ম্যাচে জার্মানি এগিয়ে থাকায় তখন হেরে গেলে বাদ পড়ার শঙ্কা ছিল জাপানের। তাই যোগ করা অতিরিক্ত সময়ে রক্ষণে মনোযোগী হয় তারা। স্প্যানিশদের আপ্রাণ চেষ্টার পরও কঠিন সেই পথটুকু নিরাপদেই পাড়ি দেয় এশিয়ার প্রতিনিধিরা, কাতার বিশ্বকাপ সাক্ষী হয় আরও একটি অঘটনের। জার্মানি-স্পেনের মতো হেভিওয়েটদের গ্রুপে থেকেও মাথা উঁচু করেই শেষ ষোলোর টিকিট অর্জন করে জাপান।

Comments

The Daily Star  | English
capital flight in Bangladesh during Awami League's tenure

$14b a year lost to capital flight during AL years

Bangladesh has lost around $14 billion a year on average to capital flight during the Awami League’s 15-year tenure, according to the draft report of the committee preparing a white paper on the economy.

18h ago