গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই শেষ ষোলোতে নেদারল্যান্ডস
বল দখলের লড়াই থেকে শুরু করে আক্রমণ গড়া, সবক্ষেত্রেই ডাচদের কাছে আত্মসমর্পণ করল কাতার। গোটা ম্যাচে মাত্র একবারই আন্ড্রিস নোপার্টকে বিচলিত করতে পারল স্বাগতিকরা। ম্যাচের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আধিপত্য বিস্তার করে খেলে অনেকটা সহজেই তারা হারাল কাতারকে। ফলে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই নকআউট পর্বের টিকিট কাটল দলটি।
মঙ্গলবার আল বাইত স্টেডিয়ামে কাতার বিশ্বকাপের 'এ' গ্রুপের ম্যাচে স্বাগতিকদের ২-০ গোলে হারিয়েছে নেদারল্যান্ডস। ম্যাচের শুরু থেকেই টানা আক্রমণে প্রতিপক্ষ রক্ষণে ত্রাস ছড়ান মেমফিস ডিপাই, কডি গাকপো, ডেভি ক্লাসেনরা। ২৬ মিনিটে ডাচদের পক্ষে প্রথম গোল করেন গাকপো। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন ফ্র্যাঙ্কি ডি ইয়ং।
এই জয়ে 'এ' গ্রুপের শীর্ষ দল হয়ে শেষ ষোলতে পা রাখল নেদারল্যান্ডস। একই সময়ে মাঠে গড়ানো অপর ম্যাচে ইকুয়েডরকে ২-১ ব্যবধানে হারিয়ে এই গ্রুপের দ্বিতীয় দল হিসেবে নকআউট নিশ্চিত করেছে সেনেগাল।
ম্যাচের শুরু থেকেই একের পর এক আক্রমণে কাতার রক্ষণকে ব্যতিব্যস্ত রাখে নেদারল্যান্ডস। প্রথম মিনিটেই দারুণ এক আক্রমণ গড়ে নেদারল্যান্ডস। দ্রুতগতিতে দৌড়ে গিয়ে ডিপাই থ্রু বল ধরলেও দুরূহ কোণ থেকে শটটা আর নিতে পারেননি।
তৃতীয় মিনিটে মার্টিন ডি রুনের ভুলে বল পেয়ে যান কাতার অধিনায়ক হাসান আল হাইদোস। কিন্তু তার দূরপাল্লার শট আয়ত্বে নিতে বেগ পেতে হয়নি নোপার্টকে। কয়েক সেকেন্ড বাদে আবারও আক্রমণে যায় ডাচরা। ক্লাসেন দারুণ এক পাস বাড়ান ডিপাইকে, বার্সেলোনা তারকা শটও নেন কিন্তু তা রুখে দেয় স্বাগতিক রক্ষণ।
১২তম মিনিটে আবারও স্বাগতিকদের রক্ষণে ত্রাস ছড়ায় লুইস ভন গলের শিষ্যরা। দুই মিনিটে বাদে আবারও ডিপাইকে বলের যোগান দেন ক্লাসেন, কিন্তু এই ফরোয়ার্ড শট নেন বারের ওপর দিয়ে। ১৯তম মিনিটে ডিপাইয়ের কর্নার থেকে হেড করেন ক্লাসেন, কিন্তু তা থাকেনি লক্ষ্যে।
ছয় মিনিট পর কর্নার থেকে পাওয়া সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি কাতার। আবদেলকরিম হাসান শট নেন আকাশে। কয়েক সেকেন্ড বাদেই আবারও শট চালান ডিপাই, পেদ্রো মিগুয়েলে সে যাত্রা রক্ষা পায় কাতার।
পরের মিনিটে চলতি বিশ্বকাপে টানা তৃতীয় ম্যাচে গোল করার কৃতিত্ব দেখান গাকপো। ডেভি ক্লাসেনের সঙ্গে দারুণ ওয়ান টুর পর মোক্ষম এক গড়ানো শটে করেন লক্ষ্যভেদ। ১-০ গোলে এগিয়ে যায় নেদারল্যান্ডস। ২৯ মিনিটে বক্সের বাইরে গতির ঝলক দেখিয়ে শট নেন ইসমাইল মোহাম্মদ, কিন্তু সেটা বেশ সহজেই ধরে ফেলেন নোপার্ট।
৩৫তম মিনিটে লেফট উইং দিয়ে দ্রুতগতিতে ঢুকে পড়ে ক্রসের যোগান দেন হাসান, কিন্তু সেটা কাজে লাগানোর জন্য উপযুক্ত স্থানে পৌঁছতে পারেনি তার কোন সতীর্থ। বারবারই আক্রমণে যেতে থাকে স্বাগতিকরা। তবে ফিনিশিং ব্যর্থতা ও রক্ষণচেরা পাসের অভাবে আলোর মুখ দেখছিল না সেই চেষ্টাগুলো।
প্রথমার্ধ শেষের বাঁশি বাজার ঠিক আগ মুহূর্তে আবারও গোলদাতা হবার সুযোগ হারান ডিপাই। হতাশার এক অর্ধ কাটে কাতারের। পিছিয়ে থেকে সাজঘরে যায় তারা। বিরতি থেকে ফিরে ৪৯তম মিনিটে ম্যাচের দ্বিতীয় গোলের দেখা পায় নেদারল্যান্ডস। ডিপাইয়ের শট স্বাগতিক গোলরক্ষক মেশাল বারশাম ফিরিয়ে দিলে ফিরতি শটে গোল করেন ফ্র্যাঙ্কি ডি ইয়ং।
৬৮তম মিনিটে আবারও উল্লাসে মাতে ডাচ শিবির, তবে সেটা ছিল ক্ষণস্থায়ী। প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারদের দর্শক বানিয়ে দারুণ পাসিং ফুটবলে বল জালে জড়ান স্টিভেন বার্গুইস। তবে ভিএআর রিপ্লেতে দেখা যায় বলটি নিয়ন্ত্রণে নেবার সময় হাত ব্যবহার করেছিলেন গাকপো। ফলে রেফারি বাতিল ঘোষণা করেন গোলটি।
দ্বিতীয়ার্ধেও ডাচদের সঙ্গে কিছুতেই পেরে উঠছিল না কাতার। ৮০তম মিনিটে আকরাম আফিফের ক্রস ফিরিয়ে সম্ভাব্য বিপদ থেকে দলকে রক্ষা করেন নোপার্ট। যোগ করা সময়েও একই থাকে খেলার চিত্র। ডানপ্রান্ত থেকে বক্সের ভিতর ক্রস করেন ডেনজেল ডামফ্রিস, কিন্তু তা ধরে ফেলেন বারশাম।
খানিক বাদে বার্গুইসের শট বারে লাগলে তৃতীয় গোল পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয় নেদারল্যান্ডস। শেষ বাঁশি বাজলে প্রশান্তির আনন্দে মাতে ডাচরা, অন্যদিকে আয়োজক হয়েও একটি ম্যাচেও জয় তুলে নিতে না পারার আক্ষেপে পোড়ে কাতার।
Comments