আরিচা-কাজিরহাট নৌপথে ৩ ফেরির ১টি বিকল, যাত্রী ভোগান্তি

ছবি: জাহাঙ্গীর শাহ/স্টার

আরিচা-কাজিরহাট নৌপথে ৩টি ফেরির মধ্যে একটি বিকল থাকায় এই নৌপথের যাত্রী ও যানবাহন পারাপার বিঘ্নিত হচ্ছে। এর জন্য কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাকেই দায়ী করছেন ভুক্তভোগীরা।

ফেরিতে মানিকগঞ্জের আরিচা ও পাবনার কাজিরহাট হয়ে চলাচল করেন রাজধানী ঢাকা, মানিকগঞ্জ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, মাগুরা, ঝিনাইদহ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী ও বগুড়াসহ পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর মানুষ।

যানজট এড়াতে ও সময়-অর্থ সাশ্রয় করতে তারা এই নৌপথ ব্যবহার করছেন। এ ছাড়াও, বঙ্গবন্ধু সেতু ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে বিদ্যমান যানজটের কারণে ওই পথের গাড়িগুলো আরিচা-কাজিরহাট নৌপথ ব্যবহার করছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, যমুনায় আরিচা-কাজিরহাট নৌপথে ২টি ছোট ও একটি ডাম্ব ফেরিসহ ৩টি ফেরি চালু আছে। সেগুলো খুবই পুরাতন হওয়ায় ১৪ কিলোমিটারের নৌপথটি পাড়ি দিতে সময় লাগছে ২ ঘণ্টারও বেশি।

ইঞ্জিন সমস্যার কারণে গতকাল মঙ্গলবার ডাম্ব ফেরি 'রাণীক্ষেত' বন্ধ থাকার পর আবার চালু করা হয়। অন্যদিকে, গত ২ দিন ধরে আরিচা ঘাটে ছোট ফেরি 'কপোতী'র মেরামত চলছে।

গতকাল সারাদিন একটি ফেরি 'কদম' দিয়ে আরিচা-কাজিরহাট নৌপথে পণ্যবাহী ট্রাক, ছোট গাড়ি ও যাত্রী পারাপার করা হয়।

আজ বুধবার ২টি ফেরি চলছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে—ছোট গাড়ি ও যাত্রীদের আরিচা ঘাটে ফেরি পারের অপেক্ষায় আটকে থাকতে হচ্ছে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা। পণ্যবাহী ট্রাকগুলো পার হতে পারছে একদিন পরপর।

ঈদকে সামনে রেখে গাড়ির পাশাপাশি যাত্রীদের চাপ বাড়ছে। সমস্যাও বাড়ছে ক্রমশ। বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষকে এ নৌপথে ফেরি বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে দেখা যাচ্ছে না। যাত্রীদের অভিযোগ, 'সব নৌপথেই ফেরি সংকট' বলে পাশ কাটিয়ে চলছেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা।

বিআইডব্লিউটিসি আরিচা আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নাব্যতা সংকটের কারণে ২০০১ সালে আরিচা ফেরিঘাটটি স্থানান্তর করা হয় পাটুরিয়া ঘাটে। আরিচা-দৌলতদিয়া নৌপথ হয়ে যায় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথ। বন্ধ হয়ে যায় মানিকগঞ্জের আরিচা ও পাবনার নগরবাড়ির যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম আরিচা-নগরবাড়ি নৌপথটি।

নাব্যতা সংকট কেটে যাওয়ায় ২০ বছর বন্ধ থাকার পর গত বছর ২৭ ফেব্রুয়ারি ২টি ফেরি দিয়ে চালু হয় আরিচা-কাজিরহাট নৌপথ। এর ৫ মাস পর, গত ১২ আগস্ট 'বেগম সুফিয়া কামাল' ও 'বেগম রোকেয়া' ফেরি ২টি অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে সেখানে দেওয়া হয় 'ভাষা সৈনিক গোলাম মওলা' ফেরি।

পরবর্তীতে বড় ফেরি 'গোলাম মওলা'র সঙ্গে মাঝারি ফেরি 'কলমি লতা' ও ছোট ফেরি 'কপোতী' দিয়ে চলতে থাকে যানবাহন ও যাত্রী পারাপার। ফেরিগুলো পুরাতন ও ইঞ্জিনের সক্ষমতা কম হওয়ায় যমুনার তীব্র স্রোতের বিপরীতে চলতে সমস্যা হয়।

এরপর, ধাপে ধাপে ফেরি বদল হতে হতে বর্তমানে ছোট ও পুরাতন ৩টি ফেরি দিয়ে চলছে আরিচা-কাজিরহাট নৌপথের যাত্রী ও যানবাহন পারাপার।

সরেজমিনে আরও দেখা গেছে, আরিচা-কাজিরহাট নৌপথে ৩টি ফেরির ২টি প্রায় সময়ই বিকল থাকে। মূলত একটি ফেরি দিয়ে পারাপারের কাজ চলে। ফেরি সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর হওয়ায় যানজট ও যাত্রীদের ভোগান্তিও বাড়ছে।

প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল ও পণ্যবাহী ট্রাকসহ প্রতিদিন গড়ে ৩৫০টি যানবাহন এই নৌপথে পারাপার হচ্ছে। লঞ্চ, ইঞ্জিনচালিত নৌকা ও স্পিডবোটের তুলনায় ভাড়া কম হওয়ায় কম আয়ের মানুষ ও সচেতন যাত্রীরাও ফেরিতে পার হচ্ছেন।

ফেরিতে প্রতি যাত্রীর ভাড়া ২৫ টাকা। বিপরীতে, লঞ্চ ও ইঞ্জিনচালিত নৌকার ভাড়া যাত্রী প্রতি ৮০ টাকা ও স্পিডবোটের ভাড়া ২০০ টাকা।

অন্য নৌযানে চলাচলে ঝুঁকি থাকায় যাত্রীরা ফেরিতে চলাচলকে নিরাপদ মনে করেন।

ট্রাকচালক শরিফুল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আরিচা-কাজিরহাট নৌপথ চালুর পর থেকে এই পথেই চলাচল করছি। বঙ্গবন্ধু সেতুতে ঝক্কি-ঝামেলা ও মহাসড়কে যানজটের বিড়ম্বনা এড়াতেই এই পথ ব্যবহার করছি। কিন্তু, ফেরি সংকটের কারণে এখানেও ভোগান্তি হচ্ছে।'

'গতকাল সকাল ৯টায় আরিচা ঘাটে এসেছি। হয়তো রাতের কোন এক সময়ে পার হতে পারবো,' যোগ করেন তিনি।

ট্রাকচালক মো. পলাশ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নারায়ণগঞ্জ থেকে পোশাক তৈরির যন্ত্রপাতি নিয়ে পাবনা যাচ্ছি। মঙ্গলবার ভোররাত ৩টায় আরিচা ঘাটে এসেছি। আজ পার হইতে পারবো কিনা জানি না।'

তার মতে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখানে ১-২টা ফেরি দিলে সমস্যা থাকবে না।

পাবনার আতাইকোলার ট্রাকচালক মাহতাব প্রামাণিক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মঙ্গলবার ভোররাত পৌনে ২টায় আরিচা ঘাটে এসেছি। কখন পার হতে পারবো জানি না। ছোট গাড়ি পার করা হচ্ছে। ঘাটে ১০০-র বেশি ট্রাক আটকা পড়েছে।'

নারায়ণগঞ্জ থেকে মামার ট্রাকে পাবনার মাতপুরে যাচ্ছে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী শিমুলি আক্তার, দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী নাবিদ প্রামাণিক ও চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী আপন প্রামাণিক। ঈদযাত্রায় আরিচা ঘাটে ১০ ঘণ্টা আটকে থাকায় তাদের আনন্দ পরিণত হয়েছে বিষাদে।

বিআইডব্লিউটিসি'র সহকারী মহাব্যবস্থাপক (মেরিন) আব্দুস সাত্তার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এখানে ৩টির মধ্যে ২টি ফেরি চলছে। বিকল হওয়া ফেরিটি ঠিক হয়ে যাবে। গাড়ির চাপ বেড়ে গেলে অবস্থা বুঝে পাটুরিয়া থেকে ফেরি নিয়ে আসার কথা আছে।'

এই নৌপথে ফেরি সংকট কাটাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, 'দেশের সব নৌপথেই ফেরির স্বল্পতা আছে। আমরা তো সীমাবদ্ধতার ঊর্ধ্বে নই। সমস্যা হলে অন্য জায়গা থেকে ফেরি এনে সমাধানের চেষ্টা করি। আশা করছি, এই নৌপথের সমস্যার সমাধান করতে পারবো।'

Comments

The Daily Star  | English

$14b a year lost to capital flight during AL years

Bangladesh has lost around $14 billion a year on average to capital flight during the Awami League’s 15-year tenure, according to the draft report of the committee preparing a white paper on the economy.

14h ago