বাসার দেয়ালে নাহিদের নাম দেখিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্ত্রী

বাসার দেয়ালে নাহিদের নাম লেখা দেখাচ্ছেন স্ত্রী। ছবি: শাহীন মোল্লা/স্টার

রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় গত মঙ্গলবারের সংঘর্ষে নিহত ডেলিভারিম্যান নাহিদ মাত্র ৬ মাস আগে বিয়ে করেছিলেন। এখন মৃত স্বামীর ছবির দিকে তাকিয়ে দিন পার করছেন স্ত্রী ডলি।

গতকাল সোমবার রাতে কামরাঙ্গীরচরে মধ্য রসুলপুরে নাহিদদের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, নাহিদের ছবি হাতে বসে আছেন ডলি।

বাসার দেয়ালে ইংরেজি ও বাংলায় নাহিদের নাম ও তার মোবাইল নম্বর এবং এর নিচে ২০২০ লেখা।

মোবাইল ফোনের আলোতে দেয়ালের এই লেখা দেখিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্ত্রী।

নাহিদের ছবি হাতে স্ত্রী ডলি। পেছনে নাহিদের বাবা নাদিম। ছবি: শাহীন মোল্লা/স্টার

ডলি দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, নাহিদের শখ ছিল দেয়ালে নিজের নাম লেখা। নতুন বছরের শুরুতে বা বিভিন্ন দিবসে বাসার দেয়ালে বা পাড়ার কোনো দেয়ালে নিজের নাম লিখে রাখতেন নাহিদ।

তিনি বলেন, 'গত মঙ্গলবার বিকেলে কাজ থেকে ফেরার পর আমাকে নিয়ে মার্কেটে যাওয়ার কথা ছিল নাহিদের। আমাকে একটা জামা আর এক জোড়া স্যান্ডেল কিনে দেবে বলেছিল।'

মধ্য রসুলবাগের দেওয়ানবাগ এলাকায় আধা কাঠা জমির উপর ৩ তলা বাড়ি নাহিদদের।

বাসার নিচতলা ভাড়া দেওয়া। সেখান থেকে মাসে ২ হাজার ৫০০ টাকা আয় হয়।

নাহিদের বাবা নাদিম দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, জমিটি তার স্ত্রী পারিবারিক সূত্রে পেয়েছিলেন। দেড় বছর আগে বাড়ি বানানোর সময় ৮ লাখ টাকা ঋণ করতে হয়েছিল। 

তিনি জানান, ঋণ পরিশোধে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে দিতে হয়। 

নাহিদ সাড়ে ৭ হাজার টাকা দিতেন এবং ভাড়ার আড়াই হাজার টাকা দিয়ে তিনি প্রতি মাসে টাকা শোধ করতেন।

নাদিম জানান, তারা মাসিক আয় ১১ হাজার টাকা। তার স্ত্রী নারগিস কারচুপির কাজ করে মাসে এক থেকে দেড় হাজার টাকা আয় করেন।

ছেলে নাহিদ মারা যাওয়ায় এখন ঋণের সেই টাকা কীভাবে শোধ করবেন এ নিয়ে দুশ্চিন্তা তার।

তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি আমার ছেলের হত্যার বিচার চাই, ক্ষতিপূরণ চাই।'

'গত সপ্তাহে নাহিদ মারা যাওয়ার পর ব্যবসায়ীরাসহ অনেকেই বলেছিল, ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। এখন আর কেউ এ নিয়ে কথা বলছে না, কেউ যোগাযোগও করছে না,' বলেন তিনি।

ক্ষতিপূরণের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা কেন ক্ষতিপূরণ দেবো। নাহিদকে কারা মেরেছে সবাই এখন জানে। এতে আমাদের কোনো দায় নেই।'

'মানবিক কারণে নিহত নাহিদের পরিবারকে আমরা কিছু আর্থিক সহযোগিতা করতে পারি। তবে তা মানবিক কারণেই, কোনো দায় থেকে নয়,' যোগ করেন তিনি।

নাহিদ এলিফ্যান্ট রোডের বাটা সিগনাল এলাকায় একটি কুরিয়ার সার্ভিস কোম্পানিতে ডেলিভারিম্যান হিসেবে চাকরি করতেন।

গত মঙ্গলবার ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের সময় নূরজাহান সুপার মার্কেটের সামনের ফুটপাতে নেভি ব্লু টি-শার্ট পরা নাহিদকে আহতাবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। 

তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে, ওই রাতেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

এ ঘটনায় নাহিদের পরিবারের পক্ষ থেকে পরদিন নিউমার্কেট থানায় একটি হত্যা মামলা করা হয়।

Comments

The Daily Star  | English

Dhaka slams desecration of nat’l flag in Kolkata

The government yesterday strongly condemned the desecration of Bangladesh’s national flag and the burning of Chief Adviser Prof Muhammad Yunus’s effigy in Kolkata as “deplorable acts”.

2h ago