‘বাসে ওঠার ১৫ মিনিট পর বুঝতে পারি ভেতরে ডাকাত’

প্রতীকী ছবি। স্টার ফাইল ফটো

টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শফিকুল ইসলাম গত শুক্রবার ঢাকা থেকে কর্মস্থলে ফেরত যাচ্ছিলেন। দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকার আব্দুল্লাহপুর থেকে একটি বাসে উঠেন। বাসে উঠে ভাড়া দিয়ে প্রায় ১৫ মিনিট পর বুঝতে পারেন যে বাসে ডাকাত আছে। ডাকাতরা তার কাছ থেকে নগদ ৭-৮ হাজার টাকা, ৩টি মোবাইল ফোন, ২টি ডেবিট কার্ড ও অন্যান্য জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয়। সেই সঙ্গে তার ওপর চালায় অমানুষিক নির্যাতন। পরে আহতাবস্থায় বাড়িতে ফেরার পর গতকাল রোববার ফেসবুকে তিনি লিখেছেন সেই রাতের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার বর্ণনা।

এ অভিজ্ঞতার বর্ণনা দ্য ডেইলি স্টারকেও দিয়েছেন ডাকাতের কবল থেকে বেঁচে ফেরা চিকিৎসক শফিকুল ইসলাম।

তিনি বলেন, '২ দিনের জন্য ঢাকায় আসি কিছু কাজের উদ্দেশ্যে। কাজ শেষে ফেরার পথে রাত বেশি হয়ে যায়। বন্ধু রাকিবও আমার সঙ্গে টাঙ্গাইল যাবে। ২১ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকার আব্দুল্লাহপুর থেকে বন্ধু রাকিবসহ আমি এবং আরও ২-৩ জন যাত্রী ঢাকা-রাজশাহী-চাঁপাইয়ের একটি বাসে উঠি।'

বাসে ওঠার ৪-৫ মিনিটের মধ্যে তিনি ভাড়া দিয়ে দেন বলে জানান।

তিনি বলেন, '১০ মিনিট পরে গাড়িটা খুব সম্ভবত কামারপাড়া পার হলে নির্জন স্থানে আমাদের চারপাশে থাকা ৭-৮ জন হঠাৎ আমাদের ঘিরে ধরে। তারা বলে যে বাসে যারা আছে সবাই ডাকাত। তাদের সবার হাতেই দেশিয় অস্ত্র এবং ২-১ জনের হাতে পিস্তল ছিল।'

'এ সময় তাদের মধ্যে ২ জন আমাকে গলায় ও পেটে ছুরি ধরে আর ২ জন আমার বন্ধুকে ধরে নিয়ে পেছনের সিটে বসায়। এরপর ভয় দেখিয়ে আমাদের কাছে থাকা টাকা-পয়সা ও ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। আমাদের চোখ বেঁধে ফেলে, পিছমোড়া করে হাত বাঁধে। এরপর বুঝতে পারি পুরো বাসের আরও অনেক যাত্রীকে তারা এভাবে জিম্মি করে রেখেছে,' বলেন তিনি।

এরপরও তারা আরও যাত্রীকে বাসে উঠায় এবং একইভাবে ডাকাতি করে বলে জানান ডা. শফিকুল।

তিনি বলেন, 'এর মধ্যে তারা আমার কাছ থেকে নগদ ৭-৮ হাজার টাকা, ৩টি মোবাইল ফোন, ২টি ডেবিট কার্ড, আমার ব্যাগ ও অন্যান্য জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয়। আমার কাছে বিকাশ ও কার্ডের পিন নম্বর জানতে চায় এবং আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।'

'আমি ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে সব ঠিকঠাক বলে দেই আর বলতে থাকি আপনারা আমার সবকিছু নিয়ে নেন কিন্তু আমার কোন ক্ষতি কইরেন না। এরপর সারারাত ধরে আমার সঙ্গে চলতে থাকে অমানুষিক নির্যাতন যা বলে বুঝাতে পারব না,' বলেন ডাকাতির কবলে পড়া শফিকুল।

তিনি বলেন, 'এদিকে তারা আমার বন্ধুসহ আরও ৪-৫ জন যাত্রীকে চোখ, হাত বাঁধা অবস্থায় কবিরপুর এলাকায় রাস্তায় ফেলে চলে যায়। তখন রাত প্রায় ৪টা, যা পরে আমার বন্ধুর মুখে শুনতে পারি। এরপর আমাকে নিয়ে ঢাকা সিটির ভেতরে ঢুকে বিভিন্ন বুথ থেকে টাকা তুলে নেয় আর কথায় কথায় আমাকে মারধর করে।'

'এর মধ্যে আমার একটু অ্যাজমার সমস্যা থাকায় আমি আমার পকেটে থাকা ইনহেলার টানতে চাইলে তারা আমাকে সেটি দেয়নি। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাওয়ায় পানি চাইলে, তাও দেয়নি। আনুমানিক সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত আমার সাথে চলতে থাকে এই বিভৎসতা,' জানান তিনি।

তিনি বলেন, 'আনুমানিক সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আমাকে মৃতপ্রায় অবস্থায় উদ্ধার করে বাসের আসল কন্ডাকটর। সে এসে আমার চোখের পট্টি আর হাত-পায়ের বাঁধন খুলে দেয়।  তার বর্ণনায় জানতে পারি গাড়ি চালু রেখে সাইনবোর্ড এলাকায় ডাকাতদল প্রায় ঘন্টাখানেক আগে বাস থেকে নেমে যায়। সে আর বাসের ড্রাইভার-হেল্পার অবরুদ্ধ ছিল ডাকাতির শুরু থেকেই।'

তিনি জানান, বাসটি চাপাই থেকে ঢাকা যাচ্ছিল। এ সময় যাত্রীবেশে ডাকাতদল আগের রাত সাড়ে ৮টার দিকে বাসে উঠে এবং ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে সবাইকে জিম্মি করে পুরো বাসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। আর বাসের প্রকৃত চালক-হেল্পারের হাত, চোখ, মুখ বেঁধে পেছনের সিটে আটকে রাখে। আর প্রায় ১২ ঘন্টা ধরে যাত্রী উঠিয়ে তাদের লুট করতে থাকে।

ডা. শফিকুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে জানান, উদ্ধার হওয়ার পর তিনি প্রথমে যান মাতুয়াইল মা ও শিশু হাসপাতালে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন।

এর পর তিনি যাত্রাবাড়ী থানায় যান এ বিষয়ে অভিযোগ জানাতে। কিন্তু, আবদুল্লাহপুরে ঘটনার সূত্রপাত উল্লেখ করে যাত্রাবাড়ী থানা থেকে তাকে উত্তরা পশ্চিম থানায় অভিযোগ করার পরামর্শ দেন। ডা. শফিকুল মুঠোফোনে উত্তরা পশ্চিম থানায় যোগাযোগ করলে, সেখান থেকে অভিযোগের বিষয়ে কোনো সাড়া পাননি।

যোগাযোগ করা হলে যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তিনি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। অভিযোগ করতে চেয়েছিলেন। তিনি বাসে উঠেছেন আব্দুল্লাহপুর থেকে। আর তাকে বাস থেকে নামিয়ে দিয়েছে চিটাগাং রোডে। যাত্রাবাড়ী থানার আওতাধীন এলাকায় কোনোটা হয়নি বলে তাকে সংশ্লিষ্ট থানায় যোগাযোগের পরামর্শ দিয়েছি।'

জানতে চাইলে উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ মো. আখতারুজ্জামান ইলিয়াস দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সাংবাদিকদের মাধ্যমে এ বিষয়টি শুনেছি। তবে কেউ আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ নিয়ে আসেনি।'

এ ঘটনায় আইনি সহায়তা পেতে চান ডা. শফিকুল ইসলাম। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, বাসটির টাঙ্গাইল হয়ে রাজশাহী যাওয়ার কথা থাকলেও, শেষ পর্যন্ত চিটাগাং রোডে তাকে নামিয়ে দিয়েছে। সারা রাত ঢাকার বিভিন্ন এলাকা দিয়ে বাসটি চললেও, বাইরে থেকে কেউ ডাকাতির বিষয়টি জানতে পর্যন্ত পারেনি।

তিনি বলেন, 'বাসটি চালাচ্ছিল ডকাতরা। হেলপার ও কন্ডাকটরের দায়িত্বেও ডাকাতরা ছিল। তারা ছিল মোট ৭-৮ জন। তারা আমার ডেবিট কার্ডের পিন নম্বর দিয়ে টাকা তুলে নিশ্চিত হয়ে পরে আমাকে ছেড়েছে। আমার বিকাশের পিন নম্বরও নিয়েছে। দুই কার্ড থেকে মোট প্রায় ১ লাখ ২৮ হাজার টাকা তুলে নিয়েছে ডাকাতরা। আমি এ ঘটনার বিচার চাই। আমি আমার জিনিসপত্র ফেরত চাই।'

তবে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিনি মামলা করেননি বলে জানান।

Comments

The Daily Star  | English

Dhaka slams desecration of nat’l flag in Kolkata

The government yesterday strongly condemned the desecration of Bangladesh’s national flag and the burning of Chief Adviser Prof Muhammad Yunus’s effigy in Kolkata as “deplorable acts”.

4h ago