‘বাউল গান গায়, মোমবাতি জ্বালায়, ন্যাড়া করে উচিত শিক্ষা দিয়েছি’
বাউল গান গাওয়া ও ঘরে মোমবাতি জ্বালানোর অপরাধে বগুড়ায় এক কিশোর বাউলের মাথা ন্যাড়া করার পাশাপাশি মারধরের ঘটনা ঘটেছে।
কিশোর বাউল মো. মেহেদী হাসান বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার জুরিমাঝপাড়া গ্রামের মো. বেল্লাল হোসেনের ছেলে।
এ ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার রাতে ১৬ বছরের বাউল থানায় ৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ২ জনের বিরুদ্ধে মামলা দিলে পুলিশ ৩ জনকে গতরাতেই গ্রেপ্তার করেছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, স্থানীয় হাইস্কুলের ইংরেজি শিক্ষক ও গ্রাম্য মাতব্বর মো. মেজবাউল ইসলাম (৫২) এবং তার ২ সহযোগী শফিউল ইসলাম খোকন (৫৫) ও তারেক রহমান (২০)।
এর আগে, গতকাল রাতে শিবগঞ্জ থানায় গিয়ে শফিউল ইসলাম খোকন, মেজবাউল ইসলাম, মো. তারেক রহমান, মো. ফজলু মিয়া (৪০) ও মো. আবু তাহেরের (৫৫) বিরুদ্ধে মামলা করে সেই কিশোর।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ভুক্তভোগী ওই কিশোর আর্থিক অনটনের কারণে ষষ্ঠ শ্রেণির পর আর পড়াশুনা করতে পারেনি। এরপর বাউল গানের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তার ওস্তাদের কাছে গান শিখে এবং তার সঙ্গে গান গেয়ে অর্থ উপার্জন করে। সেই সঙ্গে বাউল-গুরুদের অনুসরণ করে মাথায় লম্বা চুল রাখে। কিন্তু তার সেই লম্বা চুল ও বাউল গান গাওয়া নিয়ে আপত্তি জানায় আসামিরা।
ভুক্তভোগী কিশোর বাউল মো. মেহেদী হাসান দ্য ডেইলি স্টারকে বলে, 'এক পর্যায়ে আমি এই ঘটনার প্রতিবাদ করলে তারা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে এবং গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাত ১০টায় তারা আমার বাড়িতে এসে ঘুম থেকে ডেকে তোলে।'
'এসময় খোকন হুকুম দেয়, মাথা ন্যাড়া করে দিয়ে বাউল গানের স্বাদ মিটাইয়া দে। এরপর আমাকে মেঝেতে চেপে ধরে মেশিন দিয়ে চুল কেটে দেয়। আমি চিৎকার করলে তারা আমাকে কিল-ঘুষি মারে', বলে সে।
'পরে প্রতিবেশীরা আসতে শুরু করলে আসামিরা চলে যায় এবং বলে যায় যে আবার যদি আমি বাউল গান গাই তাহলে মারধর করে গ্রাম ছাড়া করা হবে,' যোগ করে কিশোর বাউল।
শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই কিশোর বাউল থানায় মামলা দেওয়ার পরেই অভিযান চালিয়ে আমরা ৩ আসামিকে গ্রেপ্তার করেছি। আজ তাদের আদালতে পাঠানো হবে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।'
তিনি আরও বলেন, 'বাউল গান গাওয়া বা সাদা পোশাক পরা কোনো অপরাধ নয়। এ জন্য কেউ কাউকে অপমান, মারধর বা চুল কেটে দিতে পারে না। এটা অপরাধ।'
Comments