পিকআপ-প্রাইভেট-মোটরসাইকেল-ভ্যানে ঢাকায় ফিরছেন মানুষ
মানিকগঞ্জের সড়ক-মহাসড়কে আজও ছিল ঢাকামুখী যাত্রী, ব্যক্তিগত ও ছোটগাড়ির চাপ। ঈদের ছুটিতে যারা গ্রামে গিয়েছিলেন তারা এখন কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছেন।
কিন্তু, দেশে চলমান কঠোর লকডাউনে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে খোলা পিকআপ ভ্যান, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, মোটর সাইকেল, রিকশা ও ভ্যানে ফিরতে হচ্ছে তাদের। এতে পথে পথে পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে।
আজ শুক্রবার বিকেল সাড়ে তিনটা থেকে সাড়ে চারটা পর্যন্ত মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকার পানি উন্নয়ন বোর্ডের সামনের মহাসড়কে অন্তত কয়েকশ নারী-পুরুষ-শিশুকে গাড়ির অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেছে। একটি গাড়ি এলেই তাতে উঠতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন মানুষ।
মানিকগঞ্জ থেকে নবীনগর-সাভারগামী পিকআপভ্যানে ২০ থেকে ২২ জন করে যাত্রী নেওয়া হচ্ছে। তাদের কাছ থেকে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে জনপ্রতি ৪০০টাকা।
মোটরসাইকেলে নেওয়া হচ্ছে দু'জন যাত্রী এবং জনপ্রতি ভাড়া ৩০০ থেকে ৪০০। ভ্যানে যাত্রী নেওয়া হচ্ছে ১২ জন, ভাড়া জনপ্রতি ২৫০টাকা। এভাবে সবধরনের গাড়িতে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে ফিরতে হচ্ছে যাত্রীদের।
মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার বাঘুটিয়া গ্রামের মো. স্বপন হোসেন বলেন, 'আমি একজন পোশাক শ্রমিক। আমি সাভারের বাইপাল এলাকার একটি কারখানায় কাজ করি। ঈদের ছুটিতে গণপরিবহন চালু ছিল, স্ত্রীকে নিয়ে খুব সহজেই বাড়িতে আইছিলাম। ঈদের পরে তো সরকার কঠোর লকডাউন দিছে। বাস চলতেছে না। এখন যামু কেমনে। কারখানায় না গেলে চাকরি থাকবে না। আমি, আমার স্ত্রী আর শালিকে নিয়া বাইপালে যাইতেছি। বাড়ি থেকে বিভিন্ন গাড়িতে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত আসতে ভাড়া লাগছে ৪৯০ টাকা। এখান থেকে প্রাইভেটকার নবীনগর পর্যন্ত যাইতে ভাড়া চাইতাছে ৪০০ কইরা। আর খোলা পিকআপ ভ্যানে চাইতাছে ৩০০ কইরা।
তিনি আরও বলেন, 'ওইখান থেকে বাইপাল যাইতে আরও যে কত লাগবো, আল্লাহই জানে। অথচ বাস চালু থাকলে আমার বাড়ি থেকে বাইপাইল পর্যন্ত যাইতে তিনজনের মোট ভাড়া লাগতো ৩৬০ টাকা। অথচ, এখন ভাড়া লাগতাছে একহাজার টাকা ওপরে। সরকার ঈদের আগে যেমন লকডাউন শিথিল করছিল, ঈদের পরে যদি সাতদিন লকডাউন শিথিল করতো- তাইলে আমাগো এই ভোগান্তি হয়তো না।'
মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার তাড়াইল গ্রামের আলিফ হোসেন বলেন, 'আমি সাভার এলাকার একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করি। বসে যাইতে বলেছে। না গেলে, চাকরি থাকবে না। একারণে বাধ্য হয়েই কর্মস্থলে যাচ্ছি। আমার এক বন্ধু বাড়ি থেকে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত মোটরসাইকেলে দিয়ে গেলো। এখন গাড়রি জন্য দাঁড়াইয়া রইছি। পিকআপ ভ্যান, মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার ও মাইাক্রেবাসে অতিরিক্ত ভাড়া চাইতাছে। মানিকগঞ্জ থেকে নবীনগর-সাভারের বাস ভাড়া ৫০ থেকে ৬০ টাকা। অথচ এখন ভাড়া দিতে হইতেছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। বাস চালু থাকলে এই ভোগান্তিতে পড়তে হইতো না।'
এই পথে ঢাকায় ফেরা যাত্রীরা বলছেন, ঈদের আগে যেমন লকডাউন শিথিল করা হয়েছিল, ঈদের পরেও অন্তত সাত দিন লকডাউন শিথিল করা দরকার ছিল।
গোলড়া হাহওয়ে থানার অফিসার্স ইনচার্জ মো. মনিরুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'হাইওয়েতে পুলিশের চোকপোস্ট বসানো হয়েছে। চেকপোস্ট থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। গাড়ির কাগজপত্র না থাকলে জব্দ করা হচ্ছে বা মামলা করা হচ্ছে। তারপর যাত্রীরা হেটে চেকপোস্ট পার হয়ে আবার অন্য গাড়িতে উঠছে। তাদের আটকানো যাচ্ছে না। তারা বিভিন্ন কৌশলে ঢাকায় ফিরছেন। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। কিন্তু, তারা শুনছেন না এবং কৌশলে চেকপোস্ট পার হচ্ছেন।'
Comments