বাংলাদেশের এমপি-আমলা, বাড়ি কেনেন কেন কানাডায়
সম্প্রতি ক্ষমতাসীন দলের নাটোর-২ আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের স্ত্রীর নামে কানাডায় বাড়ি কেনার অভিযোগের খবর গণমাধ্যমে এসেছে। বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার করে কানাডার ‘বেগম পাড়া’সহ বিভিন্ন দেশে মিলিয়ন ডলারে বাড়ি কেনার খবর প্রায়ই শোনা যায়। এসব ক্ষেত্রে অভিযোগের তির ছিল মূলত রাজনীতিবিদদের দিকে। কিন্তু, গত বছর এই তালিকায় সরকারি আমলাদের এগিয়ে থাকার কথা জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
এমপি শিমুলের স্ত্রীর নামে কানাডায় বাড়ি কেনার বিষয়টি নিয়ে সরকারিভাবে তদন্তে তেমন কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না কেন? এসব টাকা পাচারের সংবাদ দেশি-বিদেশি গণমাধ্যম ও বিভিন্ন গবেষণা সংস্থা প্রকাশ করে। কিন্তু, সরকারি পর্যায়ে এটা নিয়ে তদন্ত হয় না কেন? বাংলাদেশের এমপি-আমলারা কানাডায় কেন বাড়ি কেনেন? রাজনীতিবিদ বা আমলাদের অনেকের স্ত্রী-সন্তান কানাডা বা অন্য দেশে থাকেন। তারাও মাঝেমধ্যে সেখানে বেড়াতে যান। এর তাৎপর্য কী?
দ্য ডেইলি স্টার কথা বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক মইনুল ইসলাম ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানের সঙ্গে।
সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এমপি শিমুলের স্ত্রীর নামে কানাডায় বাড়ির কেনার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এখন এক্ষেত্রে তিনি যে বাড়ি কিনলেন, সেই অর্থের উৎস কী? কীভাবে তিনি এত টাকা আয় করলেন? বাড়িটা কেনার সময় কীভাবে অর্থ পরিশোধ করেছেন?— এগুলো দেখতে হবে। এক্ষেত্রে বিলম্বিত করা কোনোভাবেই উচিত নয়। একজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসা মানেই তো তিনি অপরাধী নন। কিন্তু, দ্রুত তদন্ত করা প্রয়োজন। এরপর অভিযুক্ত হলে আইন তো আছেই। এক্ষেত্রে আমি বলব, বিষয়টি নিয়ে দ্রুত অনুসন্ধান করা উচিত। কোনোভাবেই কালক্ষেপণ করা ঠিক হবে না।’
সরকারিভাবে তদন্তে তেমন কোনো তৎপরতা দেখা না যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নানা রকমের অনিয়ম-দুর্নীতি বাংলাদেশে এক ধরনের ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। বহুদিন থেকেই এগুলো হচ্ছে। অনেক সময় শনাক্ত হয় যে, কে বা কারা এগুলো করেছে। কিন্তু, তাদের কোনো শাস্তি হয় না। তদন্ত সংস্থাগুলোও দ্রুত ও সুষ্ঠু তদন্ত করে না। এসব তদন্ত দৃশ্যমানও না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তদন্ত প্রতিবেদনগুলো গোপন রাখা হয়। অথচ এসব তদন্তের ক্ষেত্রে অন্তত সারাংশ হলেও জানানো দরকার যে, এটা নিয়ে তদন্ত করা হয়েছে। অভিযুক্ত করা না গেলেও কী পাওয়া গেছে, সেগুলো জানানো উচিত। কিন্তু, তা করা হয় না। বরং তদন্তের নামে কালক্ষেপণ করা হয়। যেমন: বেসিক ব্যাংকের বিষয়টি নিয়ে কালক্ষেপণ করা হচ্ছে। সময় চলে যাচ্ছে, দুদকও কিছু করছে না। সময় চলে গেলে ইস্যুগুলোও দৃষ্টির আড়ালে চলে যায়।’
‘টাকা পাচারের মতো দুর্নীতির ক্ষেত্রে অতিদ্রুত দৃশ্যমান উদ্যোগ না নিলে এগুলো কোনোদিন বন্ধ হবে না। কারা এসব করছে, সেই তথ্য নেওয়া খুব কঠিন কিছু নয়। শুধু প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা। যারা দায়িত্বে আছে, তারাই যদি এগুলোর সঙ্গে জড়িত থাকে, তাহলে তো বিষয়টি অনেক কঠিন হয়ে যায়। আর আমাদের দুদক সত্যিকার অর্থে স্বাধীন কি না, তা প্রশ্নসাপেক্ষ। তাই এখানে “দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন”হয় না। পৃথিবীর সবদেশেই দুর্নীতি আছে। কিন্তু, পার্থক্য হচ্ছে অন্যান্য দেশে ধরা পড়লে কোনো রেহাই নেই। এখানেই আমি বলব যে, সার্বিকভাবে সুশাসনের অভাব। ফলে প্রাতিষ্ঠানিকভাবেও একই অবস্থা। সেখান থেকে বের হয়ে আসতে না পারলে ভবিষ্যৎ পরিণতি আরও খারাপ হবে।’
বাংলাদেশের এমপি, মন্ত্রী বা আমলা হয়ে বিদেশে বাড়ি কেনার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এই গভর্নর বলেন, ‘অনেকের মধ্যেই দেশের প্রতি মমত্ববোধ, ভালোবাসা থাকে না। শুধু ধনী নয়, স্বল্প আয়ের অনেকের মধ্যেও এটা থাকে না। আবার অনেক ধনী আছেন, যারা চিন্তা করেন যে, দেশ ছেড়ে যাবেন না। ফলে যারা বিদেশে বাড়ি কিনে স্ত্রী-সন্তানদের সেখানে পাঠিয়ে দেন, সেটা তাদের মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। আসলে তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। বেআইনিভাবে অর্জিত অর্থ, সেটা কীভাবে ব্যয় করবে, সেটা দেখে লোকজন প্রশ্ন করবে— হঠাৎ করে কীভাবে এত অর্থ হয়ে গেল, এত অর্থ তারা ভোগও করতে পারবে না। এসব চিন্তা করে তারা বিদেশে সেগুলো পাঠিয়ে দেয়। মোদ্দা কথা এটা একটা ভিশাস সার্কেলে পরিণত হয়েছে। এসব টাকার মাধ্যমে তারা নিজেদের ভোগ-বিলাস নিশ্চিত করছে। এখন তারা কতটুকু সুখী হবে, সেটা প্রশ্নসাপেক্ষ। কারণ, রাষ্ট্র ও জনগণের ক্ষতি করেই তারা এগুলো করছে।’
যারা অর্থ পাচার করে বিদেশে বাড়ি কিনছে, তাদের শনাক্ত করে দ্রুত শাস্তির আওতায় আনতে হবে বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ। ‘এসব ক্ষেত্রে কালক্ষেপণ না করে দ্রুত ও দৃশ্যমান তদন্ত করতে পারলে একটা বার্তা আসবে। এখন যেহেতু ধরা পড়লেও শাস্তি হয় না, এতে লোকজন আরও উৎসাহিত হচ্ছে। একইসঙ্গে যেসব জায়গায় অসৎ লোক আছে, তাদেরকে তাৎক্ষণিক সরিয়ে ভালো লোকগুলোকে সামনে আনতে হবে। স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, বলার স্বাধীনতা এগুলো থাকলে লোকজন কথা বলবে। এখানেই সুশাসনের বিষয়। মোদ্দা কথা, ব্যবস্থাটা যথাযথভাবে নিতে হবে। যেমন: একজন ব্যাংকের ম্যানেজার ১০ কোটি টাকা নিয়ে দুর্নীতি করলে তাকে চাকরিচ্যুত করা হলো। এতে তো তার কোনো অসুবিধা নেই। ১০ কোটি টাকা নিয়ে তার মহানন্দে কেটে যাবে। এক্ষেত্রে যিনি এসব কাজ করবেন, তার সম্পত্তিও বাজেয়াপ্ত করতে হবে। যেটা আমাদের দেশে হয় না। আর যারা রেগুলেটরি বডি আছে, শুধু কথা না বলে তাদেরকে আরও কর্মতৎপর হতে হবে’, বলেন তিনি।
অধ্যাপক মইনুল ইসলাম বলেন, ‘এমপি শিমুলের বিষয়টি সম্প্রতি সামনে এসেছে। কিন্তু, প্রকৃতপক্ষে একজনকে চিহ্নিত করে লাভ নেই। কারণ, অনেক এমপি, মন্ত্রী, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা একই কাজ করছে। সব দলের বড় নেতা, এমপি সবাই এখান থেকে টাকা পাচার করে কানাডায় বাড়ি কিনছেন। এই তালিকায় এগিয়ে আছে ব্যবসায়ী, দুর্নীতিগ্রস্ত প্রকৌশলী ও আমলারা। ক্ষমতাসীন দলের অনেকেরই কিন্তু পরিবার বাইরে থাকে। যারা এখন সেখানে বাড়ি কিনে স্ত্রী-সন্তানদের পাঠাচ্ছে, তাদের মূল উদ্দেশ্য হলো একসময় তারাও সেখানে চলে যাবে।’
‘বেগম পাড়া নাম হয়েছে কেন? তার মানে সেখানে সাহেবরা থাকে না। সেখানে থাকে বেগমরা। সাহেবরা বেশিরভাগ বাংলাদেশে থাকে। তারা লুটপাট-দুর্নীতি করে এখান থেকে পুঁজি পাচার করে। আর বেগম ও ছেলে-মেয়েরা টরন্টো, যুক্তরাজ্য কিংবা অন্য কোনো দেশে থাকে। আলটিমেটলি তারা সেখানেই থেকে যাবে। আর সাহেবের লুটপাট যখন শেষ হয়ে যাবে, যখন আর দুর্নীতির সুযোগ থাকবে না কিংবা অবসরে যাবেন, তখন তিনিও চলে যাবেন সেখানে। আমরা দেখছি, যারা দুর্নীতি ও অর্থ পাচার করে বিদেশে বাড়ি কিনেছে, তারা একটা সময় নিজেরাও সেখানেই চলে যায়’, বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘একেকটা বিষয় আলোচনায় আসে, আবার ধীরে ধীরে সেগুলো ধামাচাপা পড়ে যায়। আমাদের দেশে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি এমন পর্যায়ে গেছে যে, বড় দুর্নীতিবাজরা সহজেই তাদের টাকা বিদেশে পাচার করে দিতে পারছে। কারণ, আমাদের এক কোটি ২০ লাখ বা তারও বেশি প্রবাসী বিভিন্ন দেশে কাজ করছেন। তাদের একটা বৃহৎ অংশই রেমিট্যান্সের সিংহভাগ হুন্ডির মাধ্যমে দেশে পাঠান। হুন্ডির মাধ্যমে পাঠালে বিদেশি মুদ্রাটা আর দেশে আসে না, এর সমপরিমাণ বাংলাদেশি টাকা তাদের পরিবারের কাছে পাঠানো হয়। আর বিদেশে যে টাকাটা রয়ে যাচ্ছে, সেটা আমাদের দেশের দুর্নীতিবাজ ও ঋণখেলাপিরা কিনে নিয়ে সমপরিমাণ টাকা হুন্ডিওয়ালার কাছে দিয়ে দিচ্ছে। আর বিদেশি টাকাটা দিয়ে তারা সহজেই বাড়ি কিনছে বা ব্যবসা করছে। কানাডায় এটা খুব সহজ। এ ছাড়া, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও মালয়েশিয়ায় একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করলে সেখানে ইমিগ্রেশন দেওয়া হয়। এ সুবিধা নিয়েই তারা পরিবারের সদস্যদের বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে এবং দেশের অর্থ বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে।’
‘তবে, কোভিড মহামারি আসার পরে এই প্রক্রিয়াটা কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। যে কারণে আমাদের রেমিট্যান্স প্রবাহ গত এক থেকে দেড় বছরে অনেক বেড়েছে। বিদেশে পুঁজি পাচারের প্রক্রিয়ার সঙ্গে ঋণখেলাপির যে ওতপ্রোত সম্পর্ক, সেটা বুঝতে হবে। এরসঙ্গে হুন্ডির সংশ্লিষ্টতা বুঝতে হবে যে, এর মাধ্যমে টাকা পাচার হচ্ছে’, বলেন তিনি।
তথ্যপ্রযুক্তির বিপ্লবের যুগে সরকার চাইলেই পাচারকারীদের তথ্য সংগ্রহ করতে পারে বলে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘যারা এ কাজগুলো করছে, সরকার চাইলে তাদের তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। এটা কঠিন কিছু নয়। দুদক চাইলে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, মালয়েশিয়াসহ এসব দেশে টিম পাঠিয়ে তালিকা প্রণয়ন করতে পারে যে, কারা টাকা পাচার করে বাড়ি কিনছে। কিন্তু, তাদের সেই রাজনৈতিক সদিচ্ছা নেই। আমাদের নেতাদের আত্মীয়-স্বজন বেশিরভাগই বিদেশে চলে গেছেন। হাইকোর্ট থেকে তালিকা চাওয়া হলো, সেখানে মাত্র কয়েক হাজারের তালিকা দেওয়া হলো। অথচ আমরা জানি যে, হাজারো মানুষ বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার করে বিদেশে গিয়ে বাড়ি কিনছেন বা ব্যবসা করছেন। পরিবারের সদস্যদের সেখানে রাখছেন। এটা যে সরকারের অজানা, তা নয়। কিন্তু, যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের সদিচ্ছা না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এসব দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে না।’
‘রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী কিংবা দুর্নীতিগ্রস্ত আমলারা কালো টাকার মালিক হচ্ছেন। কিন্তু, বিদেশে গেলে সেটা আর কালো টাকা থাকছে না। আবার হুন্ডি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেই টাকাটা রেমিট্যান্স হিসেবে দেশে আসলেও আর কালো টাকা থাকছে না। দেশের প্রচুর পরিমাণ কালো টাকা হুন্ডির মাধ্যমে সাদা হচ্ছে। কারণ, বিদেশি কোনো আয়ের সূত্র নিয়ে প্রশ্ন করার এখতিয়ার আমাদের সরকারি কোনো সংস্থাকে দেওয়া হয়নি। ফলে সেই টাকা নিয়ে প্রশ্ন তোলার আর কোনো সুযোগ থাকছে না। এই সুবিধাটাই টাকা পাচারকারীরা নিচ্ছে। কালো টাকা সাদা করার এই প্রক্রিয়াটা অত্যন্ত সহজ। ধরুন, আমার কোনো আত্মীয় বিদেশে খুবই ছোট কোনো কাজ করেও যদি দেশে লাখো টাকা পাঠায়, তিনি কোথা থেকে সেটা পেলেন, সেই প্রশ্ন যেহেতু তোলার সুযোগ নেই, ফলে এই অর্থ বৈধ হয়ে যাচ্ছে এবং এই অর্থ করমুক্তও। কাজেই যতক্ষণ এই সুবিধাটা থাকবে, ততক্ষণ এরকম অবস্থা চলতেই থাকবে’, বলেন তিনি।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘পাচারকারীরা যেহেতু রাজনৈতিক বা কোনো না কোনোভাবে এক্সপোসড পারসন, তাই নিজেদেরকে সরাসরি সম্পৃক্ত না করে স্ত্রী বা সন্তানদের মাধ্যমে এ কাজ করেন। এমপি শিমুলের স্ত্রীর নামে কানাডায় বাড়ি কেনার অভিযোগের বিষয়টি সম্প্রতি সামনে এসেছে। এখন বাড়ি তার স্ত্রীর নামে হলেও ওই নারীর আয়ের কোনো সূত্র নেই। ফলে সেটা যে স্বামীর কাছ থেকে বা অবৈধভাবে এসেছে, তা সহজেই বোঝা যায়। কাজেই নিজেকে আড়াল করে স্ত্রী-সন্তানের নামে এগুলো করলেও বাস্তবে কোনো পার্থক্য তৈরি হচ্ছে না। কারণ, শাক দিয়ে তো আর মাছ ঢাকা যায় না। যদি আমাদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও সরকারের সদিচ্ছা থাকত, তাহলে নামে হোক বা বেনামে—উভয়ক্ষেত্রেই অপরাধীদেরকে চিহ্নিত করা যেত।’
টাকা পাচার করে বিদেশে বাড়ি করার অভিযোগের তদন্ত না হওয়ার পেছনে সরকারের সদিচ্ছার ঘাটতি রয়েছে বলে মনে করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক। তিনি বলেন, ‘যারা পাচারের সঙ্গে জড়িত, তাদের মধ্যে রুই-কাতলা আছে, আবার চুনোপুঁটিও আছে। চুনোপুঁটিদের কথা বাদ দিলাম। পাচারের সঙ্গে জড়িত রুই-কাতলারা ক্ষমতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। যে কারণে থলের বিড়াল বের হয়ে যাবে বলে সরকার কোনো ধরনের উদ্যোগ নেয় না। যদি সরকার সত্যিকার অর্থে উদ্যোগ নিত, তাহলে যে প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনা সম্ভব হবে, সেই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেত।’
‘বাংলাদেশ জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী কনভেনশনের সদস্য রাষ্ট্র। কানাডা, মালয়েশিয়াও এর সদস্য। ফলে এর আওতায় দ্বিপাক্ষিক আইনি সহায়তার মাধ্যমে অর্থ পাচারকারীদের চিহ্নিত করা, সেসব অর্থ ফেরত আনা ও জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় একটা দৃষ্টান্ত ছিল যে, ক্ষমতাবান ব্যক্তির অর্থ সিঙ্গাপুর থেকে ফেরত আনা হয়েছিল। সেটা যে প্রক্রিয়ায় সম্ভব হয়েছিল, সেই প্রক্রিয়া এখন আর অনুসরণ করা হচ্ছে না। তখন এই প্রক্রিয়াটা গ্রহণের পক্ষে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছিল, এখন তা নেই। কারণ, আগে এটা করা গেলে, এখন কেন করা যাবে না— এ প্রশ্নের উত্তর সরকার কখনো দেয় না’, বলেন তিনি।
আরও পড়ুন:
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিশেষ সাক্ষাৎকার: কানাডায় সরকারি চাকুরেদের বাড়ি কেনা প্রসঙ্গে
Comments