লকডাউনে ওজন মাপছে না কেউ, মিতালির জীবন অনিশ্চিত

Mitali.jpg
প্রতিদিনের মতোই ফুটপাতে বসে ছেলে দ্বীপকে পড়াচ্ছেন মা মিতালি রানী দাস। ছবি: স্টার

পাঁচ বছর বয়সী একমাত্র ছেলে দ্বীপকে ঘিরে মিতালি রানী দাসের (৫০) পৃথিবী। রাজধানীর কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউতে একটি পাঁচতলা ভবনের ছাদে কোনোরকমে মাথা গুঁজে বসবাস। আয়ের একমাত্র অবলম্বন ওজন মাপার যন্ত্র আর ছেলেকে নিয়ে পাশের ফুটপাতে কাটে তার দিন।

পথচারীদের ওজন মেপে যা আয় হয়, তা দিয়েই মিতালির আর তার সন্তানের খাবার জোটে। কিন্তু, চলমান লকডাউনে রাস্তায় মানুষের চলাচল কমে গেছে, ওজন মাপছে না পথচারীদের কেউ। আয়-রোজগার নেই বলে অনিশ্চয়তা আর অজানা আশঙ্কায় লকডাউনের দিনগুলো কাটাচ্ছেন তিনি।

আজ বুধবার তেজতুরি বাজারের পাশের ফুটপাতে গিয়ে দেখা যায়, ছেলে দ্বীপ আর ওজন মাপার যন্ত্র নিয়ে বসে আছেন মিতালি। রাস্তায় লোকজনের তেমন আনাগোনা নেই। ছেলেকে লিখতে শেখাচ্ছেন।

মিতালি রানী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘লকডাউন হলেও প্রতিদিন সকালে উঠে ওজন মাপার যন্ত্রসহ ফুটপাতে এসে বসি। কিন্তু, রাস্তায় লোকের চলাচল কমে গেছে। পথচারীদের কারও ওজন মাপার আগ্রহ বা সময় নেই। তাই আয়ও হচ্ছে না।’

তিনি জানান, অন্যান্য সময় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বসে ওজন মেপে প্রতিদিন তিনি ২০০-২৫০ টাকা আয় করতেন। বর্তমানে লকডাউন চলাকালে ওজন মেপে ৫০ টাকার বেশি আয় হয়নি একদিনও।

‘কেউ সহায়তা দিতেও আসেনি। আগের বছর লকডাউনে কিছু হলেও সহায়তা পেয়েছি। এ বছর কীভাবে দিন কাটবে, সেই দুশ্চিন্তা তাড়া করে বেড়ায়। নিজের খেতে হবে, ছেলেকে খাওয়াতে হবে, কিন্তু কীভাবে’, প্রশ্ন রাখেন তিনি।

মিতালি জানান, তার গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলায়। মা ও তিন বোনের সংসারে তিনিই সবার বড়। ১৯৯১ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর, দারিদ্র্যের কারণে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেননি।

মিতালি জানান, পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেলে ঢাকায় এসে তেজতুরি বাজারে একটি পোশাক কারখানায় কাজ করে তাকে মা-বোনের খরচ চালাতে হতো। কাঁঠালবাগান এলাকায় একটি পরিবারের সঙ্গে সাবলেট থাকতেন।

কারখানা থেকে বাসায় যাওয়ার পথে পরিচয় হয় নারায়ণগঞ্জের এক যুবকের সঙ্গে। ফুটপাতে পথচারীদের ওজন মেপে রোজগার করতেন ওই যুবক। একপর্যায়ে তার সঙ্গে মিতালির বিয়ে হয়।

মিতালি রানী জানান, ২০১৬ সালে মিতালি অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর, তার স্বামী তাকে ছেড়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যান। এসময়, তার মা এক বোনকে নিয়ে ভারত চলে যান। ছেলে দ্বীপের জন্মের আগে কারখানার কাজ ছেড়ে দিয়ে পথচারীদের ওজন মাপার কাজ শুরু করেন মিতালি।

নিজে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেননি। তাই ছেলেকে পড়াশোনা করিয়ে সেই অপূর্ণতা পূরণ করতে চান মিতালি।

Comments

The Daily Star  | English

Daily Star’s photo exhibition ‘36 Days of July -- Saluting The Bravehearts’ begins

The event began with a one-minute silence to honour the students and people, who fought against fascism

1h ago