কর্মকর্তাদের যোগসাজশেই কারাগারে নারীসঙ্গ: তদন্ত প্রতিবেদন
এক অনুসন্ধানে জানা গেছে, হলমার্কের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) তুষার আহমেদ কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১ এর কারা কর্মকর্তার কক্ষে এক নারীর সঙ্গে প্রায় দুই ঘণ্টা সময় কাটিয়েছেন।
আগে ধারণা করা হয়েছিল যে, তিনি ওই নারীর সঙ্গে ৪৫ মিনিট সময় কাটান।
তবে প্রহরীর উপস্থিতিতে একজন কয়েদিকে তার স্ত্রীর সঙ্গে ৩০ মিনিটের বেশি সময় কাটানোর অনুমতি দেয় না জেল কোড।
কিন্তু গত ৬ জানুয়ারি তুষার যখন তার স্ত্রীর সঙ্গে সময় কাটান তখন ওই কক্ষে আর কেউ ছিলেন না।
অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক (আইজি) কর্নেল মো. আবরার হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, এই সাক্ষাতের বিষয়ে কারা কর্মকর্তাদের কারা অধিদপ্তরকে জানানো প্রয়োজন ছিল, কিন্তু তারা তা করেননি। অধিকন্তু কারা অধিদপ্তর থেকে এ বিষয়ে তাদের কাছে জানতে চাইলে তারা তথ্য প্রকাশে অস্বীকৃতি জানান।
‘তদন্ত প্রতিবেদনটি গত সপ্তাহে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় গত বৃহস্পতিবার কারাগারের সুপার, জেলার, এবং তিন জন উপ-জেলারসহ ১১ জন কারা কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে এবং আরও সাত জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে’, বলেন তিনি।
বরখাস্ত হওয়া ১১ কর্মকর্তার মধ্যে আছেন জ্যেষ্ঠ কারা সুপার রত্না রায় এবং জেলার নুর মোহাম্মদ মৃধা।
গত ৬ জানুয়ারি হলমার্ক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদের শ্যালক তুষারকে করোনার বিধিনিষেধ লঙ্ঘন করে একজন দর্শনার্থীর সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি দেওয়া হয়।
সিসিটিভি ক্যামেরার ফাঁস হওয়া ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, কারাগারের ভেতরে কর্মকর্তাদের অফিস এলাকায় কালো রঙের জামা পরে ঘোরাফেরা করছেন তুষার আহমেদ। কিছু সময় পর বাইরে থেকে বেগুনি রঙের জামা পরা এক নারী সেখানে আসেন। এসময় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার রত্না রায় ও ডেপুটি জেলার গোলাম সাকলায়েন সেখানে ছিলেন। দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটে দুই যুবকের সঙ্গে ওই নারী কারাগারের কর্মকর্তাদের কক্ষের দিকে যান। সেখানে ওই নারীকে সাকলায়েন স্বাগত জানান।
ফুটেজে আরও দেখা যায়, ওই নারী কক্ষে ঢোকার পর সাকলায়েন বেরিয়ে যান। আনুমানিক ১০ মিনিট পর তুষারকে সেখানে নিয়ে যান সাকলায়েন। এর প্রায় ১০ মিনিট পর রত্না তার কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান। দুই মিনিট পর রত্নার কক্ষের দিকে যান তুষার। এরও দুই মিনিট পর সেখান থেকে বেরিয়ে ওই নারীকে নিয়ে আবার রত্নার কক্ষে যান তুষার। এর দুই মিনিট পর তুষার ও ওই নারী সাকলায়েনের কক্ষে ফেরেন এবং সময় কাটান।
এ ঘটনায় দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
কর্নেল আবরার জানান, তার বিভাগ এ সম্পর্কিত নথি সংগ্রহ করেছে।
‘আমরা দেখতে পেয়েছি যে, তারা (তুষার ও নারী) বিবাহিত’, বলেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক এক উচ্চপদস্থ কারা কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, কারাগারের ভেতর স্ত্রীর সঙ্গে কোনো কয়েদির সাক্ষাত এটাই প্রথম নয়।
সূত্র জানায়, টাকার বিনিময়ে এ জাতীয় দর্শনের ব্যবস্থা করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কর্নেল আবরার বলেন, ‘কর্মকর্তাদের এ জাতীয় ঘটনা সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে এবং দেশের সব কারাগারকে আরও কঠোর নজরদারির আওতায় আনতে বলা হয়েছে।’
কারা অধিদপ্তর সূত্র জানায়, বিবাহিত দম্পতিরা যাতে একসঙ্গে সময় কাটাতে পারেন, সেজন্য ২০০৭ সালে কারাগারের ভেতর ‘প্রেমকেন্দ্র’ তৈরির একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।
যেসব কয়েদির রেকর্ড ভালো, তারা যাতে প্রতি তিন থেকে চার মাস অন্তর একদিন স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে পারেন, এমন সুযোগের ব্যবস্থা রাখার আলোচনা হয়েছিল বলেও জানান তারা।
সেসময় দায়িত্বে থাকা কারাগারের সাবেক উপ-আইজি শামসুল হায়দার সিদ্দিক বলেন, ‘আমরা একবার ইরানে কারাগার ব্যবস্থা দেখতে গিয়েছিলাম এবং দেখেছি তাদের এ জাতীয় ব্যবস্থা রয়েছে। অন্য কয়েকটি দেশেও এই সুযোগ পাওয়া যায়।’
‘এই সফরের পর আমরা একটি প্রস্তাব দিয়েছিলাম, কিন্তু তা বাস্তবে কার্যকর হয়নি’, বলেন তিনি।
শামসুল হায়দার বলেন, ‘এখন মানবিক দিক বিবেচনায় এ জাতীয় উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। এটি কারাগারের পরিবেশের উন্নতি ও ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনতে সাহায্য করবে।’
Comments