রামেক হাসপাতাল এখন পাখিরাজ্য!

ছবি: মোস্তফা সবুজ

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল এলাকা। যে দিকে চোখ যায় শুধু পাখি আর পাখি। সকাল-সন্ধ্যা পাখিদের কিচিরমিচির শুনলে মনে হবে যেন এ এক গহীন অরণ্য! মাথার ওপর উড়ে যাচ্ছে হাজারো শামুক খোল, পানকৌড়ি ও নিশি বক— যা সৃষ্টি করেছে এক মনোরম দৃশ্যের।

কেউ ছুটছে খাবার সংগ্রহ করতে, কেউ বা গাছের ছোট-ছোট ডাল ছিঁড়ে আনছে বাসা বাননোর জন্য। আবার কেউ বা তৈরি করা বাসায় ও গাছের ডালে বসে খুনসুটি করছে।

ছবি: মোস্তফা সবুজ

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাস, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার, টেকনিকালি ট্রেনিং সেন্টার রাজশাহী ও ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যালাইড সায়েন্সেস এলাকায় এমন কোনো গাছ নেই যেখানে পাখিরা এসে বাসা বাঁধেনি। এমনকি, রাস্তার ডিভাইডারের ছোট গাছগুলোতেও বাসা বেঁধে শত শত শামুক খোল পাখি।

পাখি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন এই সব পাখির প্রজননের সময়। তাই তারা দলবন্ধভাবে এসব এলাকায় বাসা তৈরি করছে।

ছবি: মোস্তফা সবুজ

রাজশাহীর ‘সেভ দ্য নেচার অ্যান্ড লাইফ’ এর প্রতিষ্ঠাতা মিজানুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘গত ৭ থেকে ৮ বছর ধরেই এই পাখিগুলো প্রথমে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকায় প্রজনন করে আসছে। কিন্তু, বছর খানেক আগে কারা-প্রাচীর নির্মাণের জন্য কয়েকটি বড় বড় গাছ কেটে ফেলে কর্তৃপক্ষ। যে কারণে এ বছর অনেক পাখি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এলাকায় ছোট-বড় গাছে আশ্রয় নিয়েছে।’

‘গত তিন বছর ধরেই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকায় পাখিরা প্রজনন করছে। তবে এ বছর এখানে পাখির সংখ্যা বেশি,’ যোগ করেন তিনি।

ছবি: মোস্তফা সবুজ

পাখি বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ বায়োডাইভার্সিটি কনজারভেশন ফেডারেশনের সভাপতি এসএম ইকবাল ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘১৫-২০ বছর আগেও রাজশাহী অঞ্চলে খুব বেশি সংখ্যক শামুক খোল চোখে পরত না। কিন্তু, এখন অনেক পাখি এই এলাকায় দলবদ্ধভাবে বাস করছে।’

তার মতে, ‘মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি ও পর্যাপ্ত খাবারের উত্স থাকায় গত ৭ থেকে ৮ বছর ধরে শামুখ খোল পাখিরা এ দেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করেছে। এখন এরা বাংলাদেশের আবাসিক পাখি।’

‘আগে শুধু গরমকালে (জুন থেকে সেপ্টেম্বর) এরা পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে বাংলাদেশে প্রজনন করতে আসতো’ বলেও জনান এই বিশেষজ্ঞ।

ছবি: মোস্তফা সবুজ

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজশাহী মেডিকেল কলেজের এক কর্মচারী ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘পাখিরা এখানে খুব বেশি সুরক্ষিত নয়। কারণ, হাসপাতাল ও কলেজের অনেক স্টাফ অগোচরে পাখি শিকার করে খায়।’

এই বিষয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ মো. নওশাদ আলী ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এখানে পাখি শিকার করার মতো কোনো মানুষ থাকার কথা নয়। এখানে কারো হাতে তো বন্দুক নেই! তারপরও এই বিষয়টা আমি লক্ষ্য রাখবো। স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করবো।’

Comments

The Daily Star  | English

Fire service & civil defence: High-risk job, low pay

Despite risking their lives constantly in the line of duty, firefighters are deprived of the pay enjoyed by employees of other departments, an analysis of their organograms shows.

5h ago