ব্যয় বাড়িয়েও জার্মান সেনাবাহিনীর বেহাল অবস্থা কাটছে না

সামরিক বাহিনীর পেছনে বাজেট বরাদ্দ বাড়াতে চাপের মুখে আছে জার্মানির সরকার। ছবি: রয়টার্স

ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে জার্মান সরকার প্রতিরক্ষা খাতের জন্য বাড়তি বরাদ্দ করলেও বাস্তবে সেনাবাহিনীর অবস্থার উন্নতি দেখা যাচ্ছে না৷ ন্যাটোর লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে বাজেটও বাড়ানো যাচ্ছে না৷

ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার হামলা শুরু হবার ঠিক পরেই জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস পার্লামেন্টে এক ভাষণে সেই ঘটনাকে 'যুগান্তকারী' হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন৷ সেইসঙ্গে জার্মানির প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরালো করতে সেনাবাহিনীর জন্য এককালীন ১০,০০০ কোটি ইউরো ব্যয়েরও ঘোষণা করেছিলেন৷ সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য হিসেবে প্রতি বছর  জিডিপির কমপক্ষে দুই শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় করারও অঙ্গীকার করেছিলেন শলৎস৷ যুক্তরাষ্ট্রের 'ফরেন অ্যাফেয়ার্স' পত্রিকায় শলৎস নিজে সম্প্রতি জার্মানি তথা ন্যাটো ও ইউরোপের প্রতিরক্ষার রূপরেখা তুলে ধরেছেন৷

ইউক্রেন যুদ্ধ ফেব্রুয়ারি মাস থেকে চলছে৷ কিন্তু বছরের শেষেও জার্মান সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী করে তোলার জন্য এককালীন ব্যয়ের ক্ষেত্রে তেমন কোনো অগ্রগতি চোখে পড়ছে না৷ এবার জানা গেলো, যে প্রতিরক্ষা খাতে বাৎসরিক বাজেট বাড়ানোর ঘোষণাও এখনো বাস্তবসম্মত নয়৷ সোমবার জার্মান চ্যান্সেলরের মুখপাত্র স্টেফেন হেবেস্ট্রাইট স্বীকার করেছেন, যে ২০২৫ সালের আগে ন্যাটোর সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হবে না৷ তবে বর্তমান সরকারের কার্যকালেই প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বাড়ানোর ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা হবে বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন৷

বছরের পর বছর ধরে ব্যয়সংকোচের পর জার্মান সেনাবাহিনী 'বুন্ডেসভেয়ার'-কে চাঙ্গা করে তোলার পথে একাধিক বাধার কারণেই বরাদ্দ অর্থ ব্যয় করা সম্ভব হচ্ছে না৷ বাড়তি চাহিদা সত্ত্বেও প্রতিরক্ষা শিল্পক্ষেত্র উৎপাদন বাড়িয়ে অস্ত্র ও সরঞ্জাম সরবরাহ করতে হিমসিম খাচ্ছে৷ ইউক্রেনের জন্য অস্ত্র, গোলাবারুদ ও সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহের চাপ পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তুলছে৷ তাছাড়া ইউরোপীয় বিধিনিয়ম মেনে টেন্ডার ডাকা থেকে শুরু করে লাল ফিতের ফাঁসও গোটা প্রক্রিয়ার গতি কমিয়ে দিচ্ছে৷ ফলে 'রাতারাতি' কোনো বড় পরিবর্তন আনতে ব্যর্থ হচ্ছে জার্মান সরকার৷

জার্মান সেনাবাহিনীকে আরও শক্তিশালী করে তোলার পথ নিয়ে জার্মান সরকারের মধ্যেও মতবিরোধ দূর হচ্ছে না৷ যেমন প্রায় ১,০০০ কোটি ইউরো মূল্যে অ্যামেরিকা থেকে ৩৫টি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান কেনার পরিকল্পনা নিয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে সংশয় দেখা দিচ্ছে৷ পুরোনো টরনাডো যুদ্ধবিমানের বদলে সেগুলি বিমানবাহিনীর হাতে তুলে দেবার কথা৷ চ্যান্সেলর শলৎস নিজে এমন বিমান কেনার পক্ষে জোরালো সওয়াল করলেও বিষয়টি নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়ছে৷

প্রতিরক্ষামন্ত্রী ক্রিস্টিনে লামব্রেশট স্বয়ং একাধিক কারণে বার বার সমালোচনার মুখে পড়ছেন৷ শুধু বিরোধী পক্ষ নয়, সরকার ও দলের মধ্যেও বিতর্কের পাত্র হয়ে উঠছেন তিনি৷ এমন প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর সংস্কারের উদ্যোগও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে৷ মন্ত্রী হিসেবে তিনি আরও কতদিন টিকে থাকবেন, সে বিষয়েও সংশয় বাড়ছে৷ লামব্রেশট নিজে অবশ্য সমালোচনা মেনে নিতে প্রস্তুত নন৷ 'ডেয়ার স্পিগেল' পত্রিকার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে জার্মান সেনাবাহিনীর বর্তমান দূরাবস্থার জন্য অতীতের ভুলভ্রান্তিকে দায়ী করেছেন৷ কয়েক দশকের অবহেলার জন্য তিনি বিরোধী সিডিইউ দলের ভূমিকার সমালোচনা করেন৷ বর্তমান নিয়মিত বাজেটও জার্মান সেনাবাহিনীর জন্য যথেষ্ট নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন৷

Comments

The Daily Star  | English

Iran to begin Uranium enrichment with advanced centrifuges: UN watchdog

Iran plans to begin uranium enrichment using thousands of advanced centrifuges at its key nuclear facilities, Fordo and Natanz, the United Nations' International Atomic Energy Agency (IAEA) reported on Friday

1h ago