মার্কিন শুল্ক আলোচনায় বেসরকারি খাতকে যুক্ত করার পরিকল্পনা সরকারের

মার্কিন শুল্ক
প্রতীকী ছবি: স্টার ফাইল ফটো

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক আলোচনায় বাংলাদেশ সরকার বেসরকারি খাতকে সম্পৃক্ত করতে চায়। আগামী সপ্তাহের মধ্যে মার্কিন শুল্ক প্রস্তাবের জবাব দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে ঢাকা।

ওয়াশিংটনের হয়ে বাণিজ্য আলোচনায় নেতৃত্ব দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি (ইউএসটিআর) এরই মধ্যে বাংলাদেশের কাছে তিনটি বিস্তারিত শুল্ক প্রস্তাব পাঠিয়েছে।

গতকাল বুধবার বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান টেলিফোনে দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, বাংলাদেশ বর্তমানে প্রস্তাবগুলো পর্যালোচনা করছে। আগামী দু-একদিনের মধ্যে জবাব পাঠানো হবে।

তিনি বলেন, 'শুল্ক ইস্যুতে একাধিক মন্ত্রণালয় থাকায় ইউএসটিআরের দাখিল করা ট্যারিফ লাইন অনুমোদনের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আগামী শনিবার আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা ডেকেছে।'

মাহবুবুর রহমান আরও বলেন, 'বাংলাদেশ বেশিরভাগ শুল্ক ইস্যুতে একমত হয়েছে।'

তবে আলোচনা শুরুর আগে উভয় পক্ষের সই করা নন-ডিসক্লোজার এগ্রিমেন্ট (এনডিএ) উল্লেখ করে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে অস্বীকার করেছে।

শুল্ক বহির্ভূত যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে সেগুলো নিয়েও মন্তব্য করতে চাননি তিনি। তার ভাষ্য, সেগুলোও এনডিএ'র আওতায় পড়েছে।

'মন্ত্রণালয় আলোচনায় বেসরকারি খাতের অংশীদারদের জড়িত করার পরিকল্পনা করছে' জানিয়ে তিনি বলেন, 'আমরা শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠন ও ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করব।'

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে কতগুলো পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশ চেয়েছে বাণিজ্য সচিব তা প্রকাশ না করলেও বাংলাদেশের মোট সাত হাজার ৪৪৬টি ট্যারিফ লাইন পণ্যের তুলনায় ওই সংখ্যা অনেক কম।

তৃতীয় দফা আলোচনার তারিখ এখনো ঠিক হয়নি। এই আলোচনা আগামী ১ আগস্টের আগে ওয়াশিংটনে হওয়ার কথা আছে। সেই তারিখ থেকে ট্রাম্পের নতুন শুল্কহার কার্যকর হওয়ার কথা।

বাণিজ্য সচিব জানান, আগামী শনিবারের আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে মার্কিন সরকারের শুল্কমুক্ত প্রস্তাবের বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান চূড়ান্ত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার নতুন তারিখ নির্ধারণের জন্য ইউএসটিআরকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ করা হবে।

চলতি সপ্তাহের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিতীয় দফা আলোচনা শেষে ফিরে বাণিজ্য উপদেষ্টা এস কে বশির উদ্দিন ও মাহবুবুর রহমান সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশ তৃতীয় দফা বৈঠকের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আগামী সপ্তাহে প্রতিনিধি দল ওয়াশিংটনে যাবে।

তবে প্রতিনিধি দলের সদস্যদের নাম এখনো প্রকাশ করা হয়নি।

বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের অতিরিক্ত ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এর বিরূপ প্রভাব মারাত্মকভাবে পড়ার আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদ ও রপ্তানিকারকরা।

তারা পূর্বাভাস দিয়েছেন যে সামগ্রিক মার্কিন পোশাক আমদানি গত বছরের প্রায় ৮০ বিলিয়ন ডলার থেকে কমে এই বছর ৬৫ বিলিয়ন ডলার থেকে ৭০ বিলিয়ন ডলার হতে পারে। কারণ, শুল্ক বেড়ে গেলে তা বাজারের ওপর প্রভাব ফেলে।

এটি বাংলাদেশের জন্য সমস্যা তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ধাক্কা খেতে পারে।

এ ছাড়াও, ভিয়েতনাম, ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার মতো বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশগুলোর ওপর শুল্ক কম থাকায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পোশাকের ওপর এর প্রভাব পড়তে পারে।

বাংলাদেশ বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক বাজারের নয় দশমিক দুই শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। চীন ও ভিয়েতনামের পরে বাংলাদেশ সেখানে তৃতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ আট দশমিক দুই বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে।

বছরে ৩৫০ মিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করা স্প্যারো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শোভন ইসলাম ডেইলি স্টারকে জানান, তার মার্কিন ক্রেতারা এরই মধ্যে দাম কমানোর জন্য তাকে চাপ দিচ্ছেন। যদিও চূড়ান্ত শুল্কের হার এখনো নিশ্চিত হয়নি।

'এক মিলিয়ন শার্টের কার্যাদেশ পেতে অনেক কম দাম প্রস্তাব করতে হয়েছিল। কারণ, ক্রেতা সেই কার্যাদেশ ভারতে সরিয়ে নেওয়ার কথা বিবেচনা করছেন। কেননা, সেখানে শুল্ক কম,' যোগ করেন তিনি।

শোভন ইসলাম জানান, বহুজাতিক পোশাক প্রতিষ্ঠানগুলো ভারত ও জাপানের মতো অন্যান্য বাজারের জন্য নির্ধারিত পণ্যের দাম নিয়ে আলোচনা করছে। যদিও বাংলাদেশ সেখানে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পায়।

'বিদেশিরা মনে করছেন—ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের ওপর কম হারে শুল্ক দেওয়ায় বাংলাদেশের তুলনায় ভারতে উৎপাদন খরচ কম। বাংলাদেশ সরকারের আলোচনায় অগ্রগতি না হওয়ায় হতাশ।'

'ব্যবসায়ী ও মার্কিন বাজারে অন্যতম বৃহৎ রপ্তানিকারক হিসেবে আমি চরম অসহায় বোধ করছি।'

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আলোচনায় বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এখনো তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।'

'হয়তো পরে যোগাযোগ করবে,' বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Industrial output soars, but where are the jobs?

Over the past decade, more and more industries have sprung up across the country, steadily increasing production. But while output rose, factories did not open their doors to more workers.

11h ago