মানিকগঞ্জে আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে করোনা রোগী
মানিকগঞ্জে আশঙ্কাজনকভাবে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিদিন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে নতুন নতুন রোগী।
জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত মে মাসে ১৪১৬ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১০৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। জুনে ২৩৭৯ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২৪৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়। চলতি মাসের ১ তারিখে ১১৬ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তবে, গত দু’দিনের নমুনা পরীক্ষার ফল এখনো পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. রফিকুন নাহার বন্যা।
গত মে মাস থেকে চলতি মাসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মে মাসে নমুনা পরীক্ষায় আক্রান্তের হার ছিল ৭.৭ শতাংশ। জুনে তা বেড়ে হয়েছে ১০.৩ শতাংশ। চলতি মাসের একদিনের হিসাবে আক্রান্তের হার ২৩.৩ শতাংশ।
করোনার সংক্রমণ রোধে মানিকগঞ্জসহ সারাদেশেই সাতদিনের কঠোর লকডাউন চলছে। তবে, মানিকগঞ্জসহ আরও সাতটি জেলায় লকডাউন শুরু হয় গত ২২ জুন থেকে। লকডাউনের বিধিনিষেধ কার্যকরে ঢাকা-আরিচা ও ঢাকা-পাটুরিয়া মহাসড়ক, হেমায়েতপুর-সিংগাইর-মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক, পাটুরিয়া ও আরিচা ফেরিঘাটসহ জেলার অনেক স্থানে পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়েছে। পাশাপাশি মাঠে কাজ করছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ ও পুলিশ সুপার রিফাত রহমান শামীম।
২৫০ শয্যাবিশিষ্ট মানিকগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালের ১০০ শয্যাবিশিষ্ট কোভিড ইউনিটে প্রতিদিনই রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। আজ শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত করোনা ওয়ার্ডে ৪৫ জন পজিটিভ রোগী এবং আইসোলেশনের উপসর্গ নিয়ে ৩৩ জনসহ মোট ৭৮ জন চিকিৎসাধীন। করোনা আক্রান্তদের মধ্যে ২৯ জন পুরুষ ও ২৬ জন নারী। এ ছাড়া, আইসোলেশন ওয়ার্ডে আছেন ১৮ জন পুরুষ এবং ১৫ জন নারী। এ পর্যন্ত হাসপাতালে কোভিড ওয়ার্ডে করোনায় ১৩ জন এবং উপসর্গ নিয়ে অর্ধশতাধিক রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের কয়েকজন চিকিৎসক ও নার্স জানান, যেভাবে হাসপাতালের কোভিড ইউনিটে রোগী বাড়ছে তাতে আগামী পাঁচ-ছয় দিনে রোগীর জায়গা দেওয়া সম্ভব হবে না হয়তো। ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ায় সংক্রমণের হার বাড়ছে। যার চাপ এসে পড়ছে হাসপাতালে।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত করোনার সর্বশেষ পরিস্থিতি- গত বুধবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ১১৬ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২৭ জন পজিটিভ শনাক্ত হন। এ পর্যন্ত জেলায় মোট ২ হাজার ৬১৭ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ৩৫১ জন। এ ছাড়া, বাকিরা হাসপাতালে ও নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন।
আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে করোনার উপসর্গ নিয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) কাজী একেএম রাসেল দ্য ডেইলি স্টারকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মারা যাওয়া ফারুক মোল্লা মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার বাসিন্দা।
হাসপাতাল এবং ফারুকের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক দিন আগে তার কাশি ও শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। শুক্রবার শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে সন্ধ্যা সাতটার দিকে তাকে হাসপাতালে আনা হয়। পরে চিকিৎসকদের পরামর্শে কোভিড ইউনিটের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ সকাল সাড়ে ১১টার দিকে তিনি মারা যান। তার নমুনা কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। তিনি করোনা পজিটিভ ছিলেন কিনা রিপোর্ট পেলে জানা যাবে।
পুলিশ সুপার রিফাত রহমান শামীম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘অনুমোদনহীন কোনো গাড়ি বা মানুষ যাতে জেলার অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য মানিকগঞ্জের প্রবেশপথের বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশের চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। এছাড়া, কঠোরভাবে লকডাউন বাস্তবায়নে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের সঙ্গে ভ্রাম্যমাণ আদালতকেও সহায়তা করা হচ্ছে।’
জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ বলেন, ‘করোনার সংক্রমণ রোধে সরকার কঠোরভাবে লকডাউন বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন। এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে আমরা মাঠে আছি। বিনা প্রয়োজনে কেউ বাইরে বের হলে এবং মাস্ক না পরলে জরিমানা করা হচ্ছে।’
Comments