কড়াইল বস্তির মাঝিদের বেঁচে থাকার সংগ্রাম

বছরের পর বছর ধরে কড়াইল বস্তি ও গুলশান-১ এর মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী খালে নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন বস্তিবাসীদের অনেকেই। তবে তাদের জীবন সুখকর হয়নি চাঁদাবাজদের কারণে। চাঁদাবাজদের কোপে ক্ষতিগ্রস্থ একটি নৌকা সংস্কার করছেন একজন মাঝি। ছবি: স্টার

বছরের পর বছর ধরে কড়াইল বস্তি ও গুলশান-১ এর মধ্যকার লেকে নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন বস্তিবাসীদের মধ্যেই কয়েকজন। তবে, এই মাঝিরা এখন কঠিন সময় পার করছেন। স্থানীয় চাঁদাবাজদের চাপে তাদের জীবিকা টিকিয়ে রাখাই কঠিন হয়ে পরেছে। মাঝিদের অভিযোগ, দাবিকৃত চাঁদার টাকা দিতে না পারলে চাঁদাবাজরা তাদের ওপর হামলা চালায়।

গত ১০ জানুয়ারি ঘটে যাওয়া এমনই একটি ঘটনাকে উদাহরণ হিসেবে ধরা যায়। ৭ জনেরও বেশি সশস্ত্র ব্যক্তি কড়াইল বস্তি ঘাটে অন্তত ৫ জন মাঝিকে মারধর করে এবং তাদের ৬টি নৌকা কুপিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ করে।

দ্য ডেইলি স্টার সম্প্রতি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দেখতে পায়, ক্ষতিগ্রস্ত মাঝিরা নৌকাগুলো সংস্কার করছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা ডেইলি স্টারের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

তারা জানান, প্রতিটি নৌকা চালানোর জন্য চাঁদাবাজরা অগ্রিম এক লাখ টাকা দাবি করে। এক মাঝি বলেন, 'টাকা দিতে না পারায় তারা আমাদের ওপর হামলা চালায় এবং আমাদের নৌকা কুপিয়ে এমন অবস্থা করেছে যাতে আর সেগুলো না ভাসাতে পারি।'

কারা এ হামলা চালিয়েছে জানতে চাইলে ভুক্তভোগীরা বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নাসির উদ্দিনের অনুসারীরা এ কাজ করেছে।

তারা প্রতিটি নৌকা থেকে দৈনিক এক হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন বলে জানান মাঝিরা।

এই নৌকার যাত্রীদের বেশিরভাগই কড়াইল বস্তিবাসী। বস্তি থেকে গুলশান-১ পুলিশ চেকপোস্ট পর্যন্ত যেতে জনপ্রতি ১০ টাকা করে ভাড়া নেওয়া হয়।

কড়াইল বস্তি বউবাজার ইউনিট উন্নয়ন কমিটির সভাপতি মাওলানা আব্দুস সোবহান বলেন, বস্তিতে প্রায় ৩০ হাজার পরিবার বসবাস করে।

বস্তিবাসীরা ঐতিহ্যগতভাবে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে নৌকায় চলাচল করেন। নিরাপত্তার কারণে ২০১৬ সালে গুলশানে হামলার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নৌকা চলাচল বন্ধ করে দেয়।

তবে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে মাঝিরা আবার নৌকা ভাসান। কারণ বস্তিবাসীদের রিকশায় করে গুলশান-১ যাওয়ার জন্য খরচ করতে হয় আরও অনেক বেশি টাকা।

গুলশান-১ এ গৃহপরিচারিকার কাজ করেন আমিনা বেগম (৩৫)। তিনি বলেন, রিকশায় যাতায়াত করতে ৪০ থেকে ৫০ টাকা ভাড়া লাগে। প্রতিদিন তাকে কয়েকবার যাতায়াত করতে হয়।

যাত্রীর অপেক্ষায় গুলশান ১ নম্বর পুলিশ চেকপোস্টের কাছে অপেক্ষা করছেন মাঝিরা। ছবি: স্টার

নৌকা চলা বন্ধ করে দেওয়ার আগে এই ১০০ মিটার জলপথে প্রায় ৯০টি নৌকা চলত। সেই সংখ্যা নেমে এসেছে ১১টিতে। এ বছর পুনরায় চালু হওয়ার পর প্রতিটি নৌকা থেকে অগ্রিম ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা চাঁদা নিয়েছে সশস্ত্র দলটি।

এ বিষয়ে কাউন্সিলর নাসির উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তিনি কোনো ধরনের চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত নন। 'এটি একটি অবৈধ ঘাট। পুলিশকে এই ঘাট বন্ধ করে দিতে বলায় মাঝিরা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছে।'

ঘাটের বৈধতা সম্পর্কে মাঝিরা বলেন, কর্তৃপক্ষ নৌকা চলাচলের অনুমতি দেয়নি, কিন্তু তারা নিষিদ্ধও করেনি।

কড়াইল বস্তি ঘাটটি ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের অধীনে। এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মফিজ উদ্দিন। তিনি বলেন, 'পাশের ওয়ার্ড কাউন্সিলরের নামে চাঁদাবাজির অভিযোগ শুনেছি। পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখবে।'

জানতে চাইলে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল হাসান জানান, নৌকা চলাচলের বিষয়ে তারা অবগত নন।

তিনি বলেন, 'এ ধরনের চাঁদাবাজির বিষয়টিও আমরা জানি না। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব।'

সম্প্রতি দ্য ডেইলি স্টারকে এক মাঝি জানান, গত এক মাস ধরে তারা সরাসরি যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া নিতে পারছেন না। নৌকার মালিকপক্ষ ঘাটের ২ পাড়ে তাদের কর্মী রেখেছেন। তারাই ভাড়া আদায় করছেন।

তিনি আরও জানান, সেক্ষেত্রে একজন মাঝি দিনে প্রায় ৮০ থেকে ৯০টি ট্রিপ দিয়ে ৪০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৬০০ টাকা পান। অথচ, তাদের এই ট্রিপ থেকে অন্তত ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা আয় হয়।

তিনি বলেন, 'এর আগে আমরা ভাড়ার টাকা সংগ্রহ করে মালিকদের কাছে তুলে দিতাম। তখন ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা ভাড়া তুলে দিলেও মালিকরা প্রায় ৮০০ টাকা করে দিতেন।'

এ বিষয়ে নৌকার মালিকরা জানান, নৌকা চলাচল সচল রাখতে বিভিন্ন কাজে অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। তাই মাঝিদের কম টাকা দিচ্ছেন তারা।

Comments

The Daily Star  | English

Dhaka condemns desecration of national flag in Kolkata

Condemns violent protests outside its Deputy High Commission in Kolkata

1h ago