মা যাকে খেয়াল রাখতে বললেন, তিনিই মেয়েকে খুন করেন
প্রতিবেশী ইয়ামিন ফরাজীকে দুই ছেলে-মেয়ের খেয়াল রাখতে বলে বাজারে যান রেহানা আক্তার। ২৫ মিনিট পর বাজার থেকে ফিরে দরজা খুলে দেখেন ঘরের আড়ার সঙ্গে ঝুলে আছে তার ৯ বছর বয়সী মেয়ে স্বর্ণা আক্তার সাথী। গত বুধবার রাজধানীর কড়াইল এলাকায় এই ঘটনা।
স্বর্ণার লাশ উদ্ধারের পর তার পরিবার ও প্রতিবেশীরা এটাকে আত্মহত্যা হিসেবে মনে করেন। তাই বনানী থানায় খুনের মামলা করলেও কাউকে সন্দেহ করেননি। অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা করেন।
তবে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খুনিকে শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করে বনানী থানার পুলিশ। খুনের ঘটনায় আটক করা হয় ইয়ামিন ফরাজীকে (৫৫)।
এ বিষয়ে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নুরে আজম মিয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের কাছে প্রথমেই সন্দেহ হয় এত ছোট মেয়ে আত্মহত্যা করতে পারে না। তা ছাড়া, এত চোট বাচ্চার পক্ষে এত উচুতে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করাও সম্ভব না। এর মধ্যে কিছু একটা রহস্য আছে। এরপর আমরা তদন্ত শুরু করি ওই সময় বাড়ির ভেতরে কারা ছিল, কেউ বাড়ির বাইরে বের হয়েছিল কি না। এর ওপর ভিত্তি করে আমরা একটি তালিকা তৈরি করে তদন্ত শুরু করি।'
তিনি আরও বলেন, 'তদন্তের সূত্র ধরে ঘটনার পরের দিন ভিকটিমের পাশের ঘরের বাসিন্দা ইয়ামিন ফরাজিকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে স্বীকার করে, বাচ্চাকে ধর্ষণের উদ্দেশে ঘরে ঢুকে নাক-মুখ চেপে ধরে। এর ফলে শ্বাসরোধ হয়ে বাচ্চাটি মারা যায়। পরে ঘরের আড়ার সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে ঝুলিয়ে রাখে। এরপর বের হয়ে স্বাভাবিকভাবে ঘরের কাজকর্ম করতে থাকে।'
গত শুক্রবার ইয়ামিন হত্যার দায় স্বীকার করে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
সাথীর মা রেহানা আক্তার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বুধবার মাগরিবের নামাজ পড়ে আমি বাজারের উদ্দেশে ঘর থেকে বের হয়। তখন ঘরের সামনে ইয়ামিনকে দেখে বলি, ঘরে বাচ্চা দুটোকে রেখে গেলাম আপনি একটু দেখে রেখেন।
এর
২৫ মিনিট পর বাজার থেকে ফিরে এসে দেখি আমার মেয়ে ঘরের ভেতর আড়ার সঙ্গে ঝুলছে। আর ২ বছর বয়সী ছেলের আব্দুল্লাহ খাটের মধ্যে বসে তার বোনের দিকে তাকিয়ে আছে।'
সাথীর বাবা অঞ্জু মিয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শুরু থেকেই আমাদের মনে হয়েছিল এটা একটা হত্যা কিন্তু আমার পাশের ঘরের বয়স্ক মানুষটি যে ঘাতক এটা ভাবতে পারিনি। আমরা ইয়ামিনের ফাঁসি চাই।'
এই ঘটনায় সাথীর বাবা অঞ্জু মিয়া বাদী হয়ে বনানী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
কড়াইল টিএনটি কলোনির বাড়িওয়ালা মোহাম্মদ হারুন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত এক বছর আগে প্রাইভেটকার চালক অঞ্জু মিয়া তার স্ত্রী ও দুই সন্তানসহ আমার বাড়িতে একটি রুম ভাড়া নেন। আমাদের বাড়িতে মোট ৯টি রুমের মধ্যে ৫টিতে ভাড়াটিয়া থাকে। ইয়ামিন গত ৬ মাস আগে এক রুম ভাড়া নিয়ে তার বড় ছেলেসহ এ বাসায় থাকতো। ইয়ামিন ছোট বাচ্চাদের আদর করতো।'
ইয়ামিনের স্ত্রী বিবি মরিয়ম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার স্বামী ও বড় ছেলে টাওয়ার কোম্পানিতে কাজ করে। প্রায় ৩০ বছর ধরে এই এলাকায় থাকে। ঘটনা শুনে আমি এখানে এসেছি।'
তবে,
স্বামীর স্বীকারোক্তিকে তিনি ষড়যন্ত্র বলে মনে করেন।
Comments