দালালের খপ্পরে পড়ে বেসরকারি ক্লিনিকে, ভুল চিকিৎসায় শিশু মৃত্যুর অভিযোগে গ্রেপ্তার ৪
ভুল চিকিৎসায় এক শিশুর মৃত্যুর অভিযোগে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মক্কা মদিনা জেনারেল হাসপাতালের তিন চিকিৎসক ও এক নার্সকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
আজ বুধবার হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নূর নবীসহ আট জনের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন ছয় বছরের শিশু আতিকা আক্তার আয়েশার বাবা মো. আজিম।
মোহাম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক খরুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, মামলা হওয়ার পর হাসপাতাল থেকে চার জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মর্গে শিশুটির মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন—ডা. দেওয়ান মোহাম্মদ আনিসুর রহমান, ডা. মুস্তাকিন বিল্লাহ মারুফ, ডা. এ কে এম নাজমুল ইসলাম ও নার্স মুক্তা ভৌমিক।
মারা যাওয়া শিশুটির বাবা আজিম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, গত ৩ এপ্রিল দোলনায় খেলতে গিয়ে আতিকার ডান উরু ভেঙে যায়। প্রথমে তাকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু টাকার অভাবে চিকিৎসা করানো যায়নি। পরে তাকে গ্রাম্য চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। তার উরুতে সংক্রমণ শুরু হয় যা পরে গ্যাংগ্রিনে পরিণত হয়।
মঙ্গলবার আতিকাকে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থেকে ঢাকায় ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ট্রমাটোলজি অ্যান্ড অর্থোপেডিক রিহ্যাবিলিটেশনে (নিটোর) আনা হয়। চিকিৎসক তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরামর্শ দেন। কিন্তু শাহজাহান নামের এক দালাল তাদের বলেন, দ্রুত অপারেশন না করলে আতিকা পা হারাতে পারে।
সাশ্রয়ী খরচে অপারেশন করার আশ্বাস দিয়ে শাহজাহান তাদেরকে মোহাম্মদপুরের বাবর রোডে মক্কা মদিনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান।
আজিম বলেন, 'বিকেলে মক্কা মদিনা হাসপাতালে গিয়ে তারা জানান, রোগীর জরুরি অপারেশন করা দরকার। তারা অপারেশনের জন্য ৩২ হাজার টাকা এবং ওষুধের জন্য ১২ হাজার টাকা নেন। আজ ভোর ৫টার দিকে দেখি, আমার মেয়ে ফ্যাকাশে হয়ে জমে গেছে। পরে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।'
গ্যাংগ্রিনের চিকিৎসা সম্পর্কে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক আমজাদ হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, গ্যাংগ্রিনের চিকিৎসায় অনেক পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে অপারেশনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে তড়িঘড়ি করে অপারেশন করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে, যা মোটেই উচিত হয়নি।
হাসপাতালের এমডি নূর নবীর বক্তব্য জানতে তার নম্বরে যোগাযোগ করা হলে সজীব নামের একজন নিজেকে হাসপাতালের কর্মচারী পরিচয় দিয়ে বলেন, এমডি মোবাইল রেখে বাইরে গেছেন।
মক্কা মদিনা জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, একটি পাঁচতলা ভবনে হাসপাতালটিতে দুই কক্ষে মোট সাতটি শয্যা আছে। এর বাইরে একটি অপারেশন থিয়েটার এবং মালিক, চিকিৎসক ও কর্মচারীদের জন্য মোট তিনটি কক্ষ আছে।
হাসপাতালের কার্ডে উল্লেখ করা হয়েছে যে হাসপাতালে আইসিইউ, এনআইসিইউ, পিআইসিইউ এবং এইচডিইউ রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে সেখানে এর কিছুই পাওয়া যায়নি।
সেখানে ভর্তি একজন রোগী জানান, এক দালাল তাকে পঙ্গু হাসপাতাল থেকে এখানে নিয়ে এসেছেন।
ভুল চিকিৎসা, অপেশাদার আচরণ ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের অভিযোগে ২০২০ সালের অক্টোবরে হাসপাতালটি সিলগালা করে দেওয়া হয়েছিল। ওই অভিযানে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হাসপাতালটির মালিক এবং দুই কর্মীকে কারাগারে পাঠিয়েছিলেন।
Comments