টানা বৃষ্টিতে সিলেটে আগাম বন্যা, বিপর্যস্ত জনজীবন

ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে গত ১২ মে থেকে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং ভারতের আসাম ও মেঘালয় প্রদেশে টানা বৃষ্টিপাতে সিলেট ও সুনামগঞ্জের আগাম বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
সিলেটের প্রধান তিন নদী—সুরমা, কুশিয়ারা ও সারিগোয়াইনের পানি কোথাও পাড় উপচে, কোথাও বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে প্রবেশ করে জেলার ৭টি উপজেলা ও সিলেট মহানগরী এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।
বন্যাদুর্গত এসব উপজেলা হলো জকিগঞ্জ, কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ, বিয়ানীবাজার ও ফেঞ্চুগঞ্জ।
এর মধ্যে কানাইঘাট উপজেলার সদরের কানাইঘাট পৌরসভা এলাকা সম্পূর্ণ প্লাবিত রয়েছে। গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাটের সঙ্গে জেলার ও অন্যান্য অঞ্চলে বন্যাদুর্গত এলাকায় যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

এ ছাড়াও সুনামগঞ্জের তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভরপুরেও নিম্নাঞ্চল ডুবে গিয়ে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেওয়ায় বিশেষ সতর্কতা দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় ও বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষের সাহায্যে সিলেটের জেলা প্রশাসন ইতোমধ্যে ১০০ টনের বেশি চাল বরাদ্দ দিয়েছে। তবে অনেক এলাকায় এখন পর্যন্ত কোনো সাহায্য পৌঁছায়নি।
সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার শাহগলী এলাকার কাওসার আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সাধারণত নদী উপচে পানি প্রবেশ করে জুন বা জুলাইয়ে। এবার আগাম বন্যা দেখা দিয়েছে। কোথাও ধানের বীজতলা ডুবেছে, কোথাও পুকুর। মানুষ পানিবন্দি হয়ে বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছে। ইতোমধ্যে খাবার পানি ও পশুখাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে খাদ্য সংকটও দেখা দেবে। কিন্তু, এখন পর্যন্ত কোনো সাহায্য আসেনি।'
সেভ দ্য হেরিটেজ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের প্রধান নির্বাহী আবদুল হাই আল-হাদী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বন্যা পরিস্থিতি প্রতিদিনও খারাপের দিকে যাচ্ছে। এখন সরকারের উচিত বন্যাদুর্গত এলাকাগুলো দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন ২০১২ এর ২২ ধারা অনুযায়ী "দুর্গত" এলাকা ঘোষণা করে দ্রুত সর্বাত্ম সাহায্য পৌঁছে দেওয়া।'

বন্যা পূর্বাভাস ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের তথ্যমতে, গতকাল বিকেল ৩টায় সুরমা নদী সিলেটের কানাইঘাট উপজেলা সদর পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৫২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিলো। একই সময়ে কুশিয়ারা নদী সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার অমলসীদে বিপৎসীমার ১২৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে এবং বিয়ানীবাজারের শেওলা পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিলো।
সারিগোয়াইন নদী সিলেটের জৈন্তাপুরের সারিঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩০ মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিলো।
এ ছাড়াও সুরমা সিলেট নগরী পয়েন্টে বিপৎসীমার ১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে এবং সুনামগঞ্জ শহর পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিলো।
তবে, বন্যা পূর্বাভাস ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের আজ মঙ্গলবার সকালের তথ্যমতে, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও সংলগ্ন ভারতের মেঘালয় ও আসাম ও ত্রিপুরায় ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস না থাকায় এ সময়ে এই অঞ্চলের নদনদীর পানি হ্রাস পাবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সাধারণত জুন-জুলাইয়ে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। কিন্তু, এবার অতিবৃষ্টিতে আগাম বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। নদীর পানি বিপৎসীমার এত উপরে ছিল যে বাঁধ দিয়ে বা কোনোভাবেই পানি আটকানো সম্ভব ছিল না। তবে, বৃষ্টিপাত থামলে পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে যাবে।'
Comments